এম.এ রহিম, পীরগঞ্জ (রংপুর) : ‘পদ্ম পাতায় জল’ কিংবা ‘গোবরে পদ্মফুল’—বাংলা ভাষায় বাগ্ধারা হিসেবে বহুল প্রচলিত। আবার পদ্মাসন যেমন জনপ্রিয় একটা যোগাসন, তেমনি পবিত্রতা বা সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবেও পদ্মের নাম ঘুরেফিরে আসে।
বই কিংবা ক্যালেন্ডারের পাতায় ছাপা ছবির বাইরে এই ইট–কাঠের নগরে বেড়ে ওঠা বাসিন্দাদের স্বচক্ষে বিলেঝিলে ফোটা শাপলা-পদ্মের রুপদর্শন করা যায় রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার চতরা ইউনিয়নের ধর্মদাশপুর গ্রামের চাপুনদহ বিলের পানিতে।
মনোহর পদ্মের সঙ্গে আসন পেতে আছে লাল আর নীল শাপলা। বিভিন্ন মাধ্যমের কল্যাণে এরই মধ্যে এই বিল অনেকের কাছেই পরিচিত হয়ে উঠেছে। এ বিলটির আয়তন ৬৩.২২ একর। ভরমৌসুমে গ্রামীণ পরিবেশে বিলের পানিতে ফুটে থাকা এসব জলজ ফুলের শোভা পথচারীর মন কেড়ে নেয়।
উপজেলার চতরা -পীরগঞ্জ সড়কের কোলঘেষে এ বিলটি অবস্থিত।সবুজ বৃক্ষের সমাবেশে মাঝেমধ্যেই এদিক–ওদিক থেকে ভেসে আসা নানা প্রজাতির পাখির ডাক নৈশব্দের জগৎটাকে ভেঙে দেয়।রাস্তার পাশের বিস্তৃত জলরাশির বুকে দল মেলে ফুটে আছে নয়নজুড়ানো গোলাপি পদ্ম আর নীল শাপলা। বেলা বেড়ে গেলে লাল শাপলাগুলো নিজেদের পাপড়ি গুটিয়ে নেয়।
গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণত ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে এই বিলে পদ্ম ও শাপলা ফুটতে শুরু করে। স্থানীয়দের বাইরে আগে এই জায়গাটির খোঁজ খুব বেশি মানুষ জানত না।এখন জায়গাটি খুব পরিচিত হয়ে উঠেছে।এলাকাবাসী জানায়, পদ্ম–শাপলার শোভা দেখার প্রকৃত সময় হচ্ছে সকালবেলা। সকালে পরিবেশ নির্মল থাকে। সেই ফুটন্ত লাল শাপলা দেখারও সুযোগ মেলে।
বিলের ধারে হাটতে কিংবা নৌকায় ভাসতে ভাসতে শত শত পদ্ম–শাপলার শোভা দেখার পাশাপাশি মন হারিয়ে যাবে অগভীর–স্বচ্ছ পানিতে সাঁতরে বেড়ানো হাঁস আর ছোট মাছের ঝাঁকে। মাঝেমধ্যেই মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়া বকের সারি, পদ্মের বড় বড় পাতার ওপর বসে থাকা সোনাব্যাঙের লাফ আর ফড়িংয়ের ওড়াউড়ি নিমেষেই সব ক্লান্তি দূর করে দেয়। বিলের বাতাসে মন হয়ে ওঠে উদাস।পদ্ম ভাসমান জলজ উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম nelumbo nucifera। সারা বছর পানি থাকে এমন জায়গায় পদ্ম ভালো জন্মে।
তবে খালবিল, হাওর, বাঁওড় ইত্যাদিতেও এই উদ্ভিদ জন্মে। সবজি হিসেবে বাজারে লাল ও সাদা শাপলার চাহিদা থাকলেও আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা এগুলো তোলেন না।‘ফুল ফুটলে সুন্দর দেখায় বলে কেউ ফুল তোলেনা। দূর থেকেও অনেক মানুষ এই সৌন্দর্য দেখতে আসে। তাই গ্রামের মানুষ সাধারণত বিল থেকে শাপলা তোলে না।’