মোঃ আফজাল হোসেন ফুলবাড়ী দিনাজপুর প্রতিনিধি : দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামবাসীদের সাথে খনি কর্তৃপক্ষের ৬ ঘন্টা সমোঝতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয় নিয়ে ।
গত ২৮শে নভেম্বর মঙ্গলবার সকাল ১১টায় দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানী লিমিটেড এর মনমেলা সভাকক্ষে খনি এলাকার ১৩টি ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামবাসীদের সাথে খনি কর্তৃপক্ষের দাবি দাওয়া নিয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানী লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আলহাজ্ব হাবিব উদ্দিন আহম্মদ। তিনি তার বক্তব্যে বলেন আপনাদের ঘরবাড়ি ফাটলের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যে দাবি করেছেন আমি বোর্ড মিটিংয়ে বিষয়গুলো উত্থাপন করব। তবে গত বোর্ড মিটিংয়ে আপনাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে যে অনুমোদন পাওয়া গেছে সেই টাকা আপনারা যদি না গ্রহণ করেন তাহলে কর্তৃপক্ষকে বুঝাতে আমার কষ্ট হবে। আমি আপনাদের ক্ষতিপূরণ সহ সব রকম সহযোগীতা করব। আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ জরিপ কাজে আপনারা কোন রখম বাধা দিবেন না। এতে আমাদের ক্ষতি হবে এবং আপনাদেরকে ক্ষতিপুরন দিতে সময় অতিবাহিত হবে। তবে আমার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া কোন কিছু করা সম্ভব নয়।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন ফুলবাড়ী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন আমি খনি কতৃপক্ষ ও আপনাদের মধ্যে সমোঝতা বিষয় নিয়ে আজকের এই বৈঠকে উভয়ের অভিযোগ শুনে বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টা করবো। যাতে সরকারের ক্ষতি না হয় এবং আপনাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত না হন।
অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন বড়পুকুরিয়া খনি এলাকার জীবন পরিবেশ ও সম্পদ রক্ষা কমিটির আহব্বায়ক মোঃ মশিউর রহমান বুলবুল, তিনি তার বক্তব্যে বলেন, খনি কর্তৃপক্ষ ঘরবাড়ি ফাটলের যে টাকা দিতে চায় তা অত্যান্ত নগন্য। এই টাকা দিয়ে কারও ক্ষতি পুশিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। আপনারা বহুবার কথা দিয়েও কথা রাখতে পারেননি। আপনাদের প্রতি বিশ^াস হারিয়ে ফেলেছি। গত দিনগুলিতে আপনারা সাড়ে ৬শত একর জমি ক্রয় করেছেন। তারপর এলাকার মানুষকে আপনারা ভাল ভাল বক্তব্য দিয়ে উন্নয়ন কাজ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এই এলাকার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাটি নির্মান করা হয়নি। খনি থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় হলেও এলাকার মানুষের কোন উপকার আসেনি। অনেকে আজ জমিজমা বাড়িঘর হারিয়ে দুরদুরান্তে গিয়ে বসবাস করছে। কিন্তু যেভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ছিল তা খনি কর্তৃপক্ষ দেয়নি। খনি কর্তৃপক্ষ ১০দফা দাবি মেনে না নিয়ে মনগড়া জরিপ করে ঘরবাড়ি ফাটলের ক্ষতিপূরণ দিতে চায়। আমরা চাই পূর্বের ন্যায় ঘরপ্রতি তিনগুণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তা না হলে আন্দোলনের বিকল্প নেই। আমাদের লোকজনদেরকে প্রশাসন দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে, তা বন্ধ করতে হবে। ভয়ভীতি দেখিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে এ আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। আমরা আমাদের ন্যায্য দাবি চেয়েছি। তা যদি দেওয়া হয় তাহলে জরিপ কাজে কেউ বাঁধা সৃষ্টি করবে না। তিনি আরও বলেন আমাদেরকে সময় দিতে হবে। পরিশেষে বিকেল ৪টায় আলোচনা ভেস্তে যায়। আন্দোলন কারী নেতা মশিউর রহমান বুলবুল খনি কতৃপক্ষকে জানান সময় দিতে হবে । তারপর গ্রামবাসীদের সাথে বসে আলোচনা স্বাপেক্ষে জরিপ কাজ করতে দেয়া হবে কিনা বিষয়টি জানানো হবে খনি কর্তৃপক্ষকে। গত ২৮ শে নভেম্বর রাত্রীতে ১৩ টি ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামের সংগঠনের নেতাদের বৈঠক বসলে তারা (ফিজিবিলিটি স্টার্ডি)র সকল কাজকর্ম বন্ধ করে দেয়। সংগঠনের নেতার মশিউর রহমান বুলবুল বলেন, খনি এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ জনগণের সঙ্গে খনি কর্তৃপক্ষ তামাশা শুরু করেছে। তারা উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ না দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থদের কে হয়রাণি করার ষড়যন্ত্র করছে জানান।
এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন, বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানীর নর্থ ও সাউথ জোনের জি.এম প্রজেক্ট ডাইরেক্টর এবিএম কামরুজ্জামান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সারফেস অপারেশনের জি.এম মোঃ সাইদুল ইসলাম, অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডিজিএম মোঃ আমিনুজ্জামান, ডি.জি.এম প্ল্যানিং এন্ড মনিটরিং এর মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, জি.এম প্রশাসন এর মোঃ শরিফুল আলম,জিএম মাইনিং এর এটি এম নুরুজ্জামান চৌধুরী।
এছাড়া ক্ষতিগ্রস্থ ১৩টি গ্রামের গ্রামবাসীর পক্ষে বক্তব্য রাখেন ক্ষতিগ্রস্থ পাতিগ্রামের মোঃ সোলায়মান সামি, চকমহেশপুর গ্রামের লুৎফর রহমান, বৌদ্যনাথপুর গ্রামের লিয়াকত আলী, বৈগ্রামের গোলজার হোসেন, বাঁশপুকুর গ্রামের মোঃ মুকুল, কালুপাড়া গ্রামের মোঃ আফজাল, চৌহাটি গ্রামের মোঃ মিজানুর রহমান, দক্ষিণ রসুলপুর গ্রামের মোঃ আনারুল, উত্তর রসুলপুর গ্রামের জাহিদুল ইসলাম রতন, জব্বারপাড়া গ্রামের আলম, বাঁশপুকুর গ্রামের বোরহান আলী প্রমুখ। গ্রামবাসিরা জানান আমাদের ন্যায্য পাওনা দেয়া হলে আমরা খনি কতৃপক্ষের সাথে সমোঝতা করতে পারি। অবশেষে গত রাতে ক্ষতিগ্রস্থরা বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি প্রকল্পের নথ সাউথ জোনের সম্প্রসারন কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।
