ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ পৌর শহরে পাঠদান অনুমতি ছাড়াই অবৈধভাবে চলছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম।
শিক্ষার নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছেন তারা। এমন অভিযোগ উপজেলার বৈধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের। অনুমতি বিহীন এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন উপজেলা শিক্ষক সমিতির নেতারা।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির পীরগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি মফিজুল হক ও সাধারণ সম্পাদক কায়সার হোসেন স্বাক্ষরিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা যায়, পৌর শহরে পাঠদান অনুমতি ছাড়াই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে নর্থ পয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজ, ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ, সেন্ট্রল স্কুল এন্ড কলেজ ও প্রিজম স্কুল এন্ড কলেজ ৬ষ্ট থেকে দশম শ্রেনি এবং আল হাসানা স্কুল নামে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৯ম ও দশম শ্রেনির শিক্ষার্থী ভর্তি করে অবৈধভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন অনুমতি নেই।
শুরুতে ওই সব প্রতিষ্ঠান কোচিং সেন্টার হিসেবে চালানো হলেও এখন স্কুল/ কলেজ হিসেবে আত্মপ্রকাশ পেয়েছে। স্কুল/ কলেজ হিসেবে আতপ্রকাশ পাওয়া এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ শিক্ষক বিভিন্ন এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মরত এবং ইনডেক্সধারী। তারা নিজস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব ফাঁকি দিয়ে বাড়তি টাকা আয় করতে অনুমতি বিহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করছেন আর নীতিমালা উপেক্ষা করে ইনডেক্সধারী অর্থলোভী কিছু শিক্ষক নিজস্ব চেতনায় ওই সব অবৈধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছেন।
অনেক সুনামধন্য বৈধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বদনাম ছড়িয়েও তারা চলতি শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
সেই সাথে সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছেন। অনুমতি বিহীন ঐ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রানীশংকৈল ডিগ্রী কলেজের সহকারি অধ্যাপক ইসমাইল হোসেন নর্থ পয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজ, রানীশংকৈল ডিগ্রী কলেজের সহকারি অধ্যাপক সবুর আলম সেন্ট্রাল স্কুল এন্ড কলেজ, চন্দরিয়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক জর্জিসুর রহমান তাজু ও যাদুরানী কলেজের শিক্ষক আব্দুস সোবহান ল্যাবরেটরী স্কুল এন্ড কলেজ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন।
তাদের সাথে আরো বহু ইনডেক্সধারী শিক্ষকও জড়িত রয়েছেন।বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির পীরগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি ও পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মফিজুল হক বলেন, তাদের সমিতির আওতাধীন এমপিওভুক্ত অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক তাদের কাছে অভিযোগ করেছেন। সরকারী নীতিমালা লংঘন করে কিছু ইনডেক্সধারী শিক্ষক শহরে বিল্ডিং ভাড়া নিয়ে অবৈধ ভাবে স্কুল/ কলেজের নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছেন। শিক্ষার মান যেমন তেমন, অর্থ উপার্জনই তাদের মুল লক্ষ্য। এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠান বন্ধে আবেদন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সেন্ট্রাল স্কুল এন্ড কলেজের সভাপতি ও রানীশংকৈল ডিগ্রী কলেজের সহকারি অধ্যাপক সবুর আলম বলেন, শিক্ষক সমিতির অভিযোগ ঠিক নয়, স্থানীয়ভাবে আমাদের পাঠদান অনুমতি নেওয়া আছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানে ইনডেক্সধারী কোন শিক্ষক নেই। আমি সেখানে শুধু সভাপতির দায়িত্ব পালন করি মাত্র।
এ বিষয়ে মতামত জানতে মঙ্গলবার দুপুরে নর্থ পয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজের চেয়ারম্যান ও রানীশংকৈল ডিগ্রী কলেজের সহকারি অধ্যাপক ইসমাইল হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিক বার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আরিফুল্লাহ জানান, এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করতে লিখিত অভিযোগ করেছেন উপজেলা শিক্ষক সমিতির নেতারা। অভিযোগ বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আনোয়ার হোসেন আকাশ,
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি: