আমিনুল ইসলাম হিরন, ছাতক,সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের অরক্ষিত তাহিরপুর সীমান্তে গত ৩ মাসে ভারতীয় বিএসএফের হাতে ৪ বাংলাদেশী নিহত হয়েছে। আটক করা হয়েছে আরো ১০ জনকে। আটককৃতরা বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন জেল হাজতে রয়েছে। তবে এসব ঘটনার জন্য নিহত ও আটককৃতদের পরিবারের লোকজন বিজিবি প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলা ও সীমান্তে সোর্স নিয়োগকারী চোরাচালান সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন। তারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন চোরাই পথে সোর্স নিয়োগ করে এলাকার সাধারণ মানুষকে দিয়ে চোরাচালন করানোসহ অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের উৎসাহ দেয় ও সহযোগীতা করে। এজন্য মাসিক,সাপ্তাহিক ও দৈনিক ভিত্তিক চাঁদা নেয় দুই সহোদর গডফাদার। এদের বিরুদ্ধে থানায় ও আদালতে একাধিক চাঁদাবাজি মামলা হওয়াসহ প্রশাসনিক বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরও এদের ্িবরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছেনা। এব্যাপারে চানপুর,লাউড়েরগড়,টেকেরঘাট ও চারাগাঁও এলাকার বাসিন্দারা জানায়,দুই গডফাদার কর্তৃক নিয়োজিত সোর্স আমিনুল ইসলাম ও জজ মিয়া গত ১২ই মে প্রতি বারকি নৌকা থেকে ১০০টাকা হারে চাঁদা নিয়ে লাউড়েরগড় সীমান্তের ১২০০ পিলার সংলগ্ন যাদুকাটা নদী দিয়ে পাথর উত্তোলনের জন্য শ্রমিকদের ভারতে পাঠানো পর,বিএসএফের তাড়া খেয়ে বাদাঘাট ইউনিয়নের লাউড়েরগড় গ্রামের আমির উদ্দিনের ছেলে আবু সুফিয়ান (৩০) ও ২১শে মে একই ইউনিয়নের ঢালারপাড় গ্রামের নিজাম উদ্দিনের ছেলে নূর উদ্দিন (৩২) নদীতে ডুবে মারা যায়। গত ১৮ই মে সোর্স শহীদ মিয়া, আউয়াল মিয়া ও আবু বক্কর প্রতি কয়লার বস্তায় ৭০টাকা হারে চাঁদা নিয়ে চানপুর সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে কয়লার আনার জন্য লোকজনকে ভারত পাঠানোর পর বিএসএফের তাড়া খেয়ে চোরাই কয়লা গুহায় পড়ে উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের আমতৈল গ্রামের সুতিয়া মিয়ার ছেলে বকুল মিয়া (২৬) মারা যায়। এছাড়া গত ২২শে জুন সোর্স মাতাল জলিল মিয়া,আবুল কালাম,জিয়াউর রহমান,শহীদ মিয়া,সাপ্তাহিক ৫ হাজার টাকা চাঁদা নিয়ে চারাগাঁও সীমান্তের এলসি পয়েন্টে দিয়ে মদ-গাজা আনা জন্য লোকজনকে ভারতে পাঠানোর পর নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার জৈনবপুর ইউনিয়নের আজিমপুর গ্রামের আবুল হাসেম (৩৫) নামের এক বাংলাদেশীকে খাসিয়ারা আটক করে বেধরক পিটিয়ে বিএসএফ ক্যাম্পে সোপর্দ করার পর তার মৃত্যু হয়। এছাড়া গত ১১ই মে যাদুকাটা নদী দিয়ে ভারত থেকে পাথর আনতে গেলে বাদাঘাট ইউনিয়নের মুকশেদপুর গ্রামের শুকুর আলী (৩৫),শাজাহান মিয়া (৩০),নায়েব আলী (৪৫),পাহাড় আলী (৩৬) কে ভারতে শীলং জেলার গুমাঘাট এলাকা থেকে বিএসএফ আটক করে। গত ১৫ই মে কয়লা পাচারের সময় উত্তর বড়দল ইউনিয়নের চানপুর গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে খোকন মিয়া (৪২),মৃত জসিম উদ্দিনের ছেলে সাদ্দাম হোসেন (১৫) কে রাজাই সীমান্ত থেকে,১২ই মে মদ গাজা পাচারের সময় উত্তরশ্রীপর ইউনিয়নের রজনী লাইন গ্রামের মতি মিয়া (৩৭),রতন মিয়া (২৫) কে বুরুংগাছড়া সীমান্ত থেকে ও ৭ই জুন বাদাঘাট ইউনিয়নের কালিপুর গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে সাদেক মিয়া (৩০) কে ভারতের ঘুমাঘাট নামক স্থান থেকে ধরে নিয়ে যায় বিএসএফ। এব্যাপারে সুনামগঞ্জ ৮ ব্যাটালিয়ান বিজিবি কমান্ডিং অফিসার একেএম মাকসুদুল হক বলেন,সীমান্ত চাঁদাবাজদের সম্পর্কে খোজ নেয়া হচ্ছে,তবে আমাদের পক্ষ থেকে অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের জন্য কাউকে সুযোগ দেওয়া হয়না,সীমান্তের একশ্রেণীর দরিদ্র মানুষ পেটে তাগিদে গোপনে ভারতে যায়,যার কারণে এই অনাকাঙ্কিত ঘটনাগুলো ঘটে।