সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার ঝরে পড়া ৩য় শ্রেনীর ছাত্র নবী হোসেনকে বিদ্যালয়মুখী করলেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের বোড়খারা গ্রামের হেলাল মিয়া ছেলে নবী হোসেন। পরিবারের সচেতনতা ও অর্থের অভাবের কারনে লেখাপড়ায় মনযোগী হলেও নিয়মিত বিদ্যালয়ে যেতে পারছিল না। পরিবারে অর্থের জোগানের জন্য বাবার সহযোগী হয়ে সাথে যেতে হয় হাওরে মাছ ধরতে। নবী হোসেন ছাড়াও কিছু শিক্ষার্থীর বিষয়টি বিদ্যালয়ের শিক্ষকগন অবগত হলেও ঝরে পড়া এই শিক্ষার্থীদেরকে বিদ্যালয়মুখী করতে আগ্রহী হয় নি।
এই শিশু শিক্ষার্থীকে ঝড়ে পড়া থেকে রক্ষা করতে এগিয়ে এলেন উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম রাব্বি জাহান। তিনি উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করতে গিয়ে সম্প্রতি তিনি জানতে পারেন নবী হোসেনসহ বোরখারা সরকারী প্রাথমিক স্কুলের কিছু শিক্ষার্থী স্কুলে আসছে না। তিনি বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানতে পারেন,দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে তৃতীয় শ্রেণীতে উত্তির্ণ হয় নবী হোসেন। এরপর থেকে সে তার বাবার সাথে নিয়মিত মাছ ধরার কাজে সহযোগীতার কাজের কারণে সে এখন বিদ্যালয়ে আসে না। নবী হোসেনের বিদ্যালয়ের না আসার কারণ শিক্ষকরা জানলেও তাকে স্কুলগামী করতে কোন পদক্ষেপ নেন নি। তবে তাহিরপুর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা জানতে পেরেই নবী হোসেনের বিষয়ে(শিক্ষার্থী)খোঁজ নিয়ে তাৎক্ষণিক ভাবেই প্রধান শিক্ষক ও শ্রেনী শিক্ষককে সঙ্গে নিয়ে তার বাড়িতে যান।
সেখানে গিয়ে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম রাব্বি জাহান শিক্ষার্থীর মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান,হাওরে মাছ ধরার কাজে সহযোগিতা করতে নবী হোসেনকে তার বাবা প্রতিদিনই সঙ্গে নিয়ে যান। এ জন্য সে স্কুলে যেতে পারে না। সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা নবী হোসেনের মাকে বুজানোর জন্য বলেন,শিক্ষা ছাড়া কেউ কোন উন্নতি করতে পারবে না,জ্ঞানী হয় না নবী হোসেনের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করার জন্য তিনি বলেন,ছেলের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হলে ভাল চাকারী করতে পারবে একদিন সেও একজন শিক্ষক হতে পারবেসহ বিভিন্ন পরামর্শ ও তাকে পুনরায় স্কুলগামী করতে যে কোন ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন। শিক্ষা কর্মকর্তার পরামর্শ ও আশ্বাসে সন্তানকে বিদ্যালয়ে না পাঠানোর ভুল বুঝতে পারে তার মা ও বাবা।
শিক্ষার্থী নবী হোসেন জানায়,সে বাবার সঙ্গে প্রতিদিন মাছ ধরার কাজে যেতাম বাবা এখন বলছে মাছ ধরতে যেতে হবে না। আমাকে প্রতিদিন স্কুলে যেতে হবে। আমি এখন প্রতিদিনেই স্কুলে যাব।
এই বিষয়ে তাহিরপুর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম রাব্বি জাহান জানান,আমি সব সময় স্কুল পরির্দশনে যাই। বিভিন্ন স্কুলের সার্বিক বিষয় নিয়ে খোজঁ খরব নেই। সম্প্রতি জানতে পারি বোরখারা সরকারী প্রাথমিক স্কুলের কিছু শিক্ষার্থী স্কুলে আসছে না। তাদের মধ্যে প্রথমে নবী হোসেনের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা মাকে বুঝিয়ে বলার পর তারা আমায় কথা দিয়েছে এখন থেকে প্রতিদিনই তাদের সন্তানকে স্কুলে পাঠাবে। একটি শিশু শিক্ষা জীবনের শুরুতেই এভাবে পারিবারিক দারিদ্র্যতা ও অসচেতনতার কারনে ঝরে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। সবাইকে সবার অবস্থা থেকে এগিয়ে আসলে কোন শিক্ষার্থীই ঝড়ে পরবে না। নবী হোসেন ছাড়াও অন্যন্য ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছি তারাও স্কুলে আসবে বলে জানিয়েছে।