ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক : মিয়ানমারের ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) থেকে নির্বাচিত কয়েকজন সংসদ সদস্যসহ কয়েক হাজার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী চীন ও রাশিয়ার নিন্দা করে একটি অনলাইন প্রচারণা চালাচ্ছেন।

চীন ও রাশিয়া দেশটির সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘ সুরক্ষা কাউন্সিলের বিবৃতিকে ভেটো দিয়ে আটকে দেওয়ায় এ প্রচারণা শুরু করেছেন তারা।

মঙ্গলবার মিয়ানমার বিষয়ে একটি জরুরি সভা করেছে ইউএন সিকিউরিটি কাউন্সিল, যেখানে দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু চীন ও রাশিয়া এ বিষয়ে আরও সময় দেওয়ার পক্ষে মত দিয়ে নিন্দা প্রস্তাবটি আটকে দেয়। তবে কূটনীতিকরা বলছেন, আলোচনা চলবে। খবর ইরাবতির।

এ ঘটনায় চীন ও রাশিয়ার নিন্দা জানিয়ে মিয়ানমারে ফেসবুক ও টুইটারে একটি প্রচারণা শুরু করা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে শেয়ার করা এক প্রচারণায় লেখা হয়েছে, ‘বেআইনি সামরিক সরকারকে সমর্থন ও আশ্রয় দেওয়ার জন্য রাশিয়া ও চীনের নিন্দা করি আমরা। লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার!’

অনেক টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, চীন ও রাশিয়া সবসময় তাদের নিজেদের স্বার্থে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে সমর্থন করে আসছে। তারা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের এ প্রচারণায় যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।

অপর এক ফেসবুক ক্যাম্পেইনে লেখা হয়েছে, ‘রাশিয়া ও চীনের নিন্দা করা ভুলে যাওয়া উচিত নয় আমাদের। তাদের শত্রু হিসেবে বিরোধিতা করা দরকার যে, তারা দেশের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে সামরিক বাহিনীকে সহায়তা করছে।’

সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারে যোগ দেওয়া এনএলডির নির্বাচিত আইনপ্রণেতা ড. ওয়াই ফ্যাও অং ইরাবতিকে বলেন, ‘আমরা সামরিক বাহিনীর এ বেআইনি কাজকে মেনে নেব না। এনএলডি থেকে আইনপ্রণেতা হিসেবে আমি চাই, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এটি জানুক।’

গত সোমবার সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা দেশটির সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে ‘সিভিল ডিজঅবিডেন্স’, ‘স্টে অ্যাট হোম মুভমেন্ট’ এবং ‘সেভ মিয়ানমার’-এর মতো হ্যাশট্যাগ দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার শুরু করেন। বহু বেসামরিক নাগরিক মিয়ানমারকে সামরিক শাসনের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন।


টুইটারে এই ক্যাম্পেইনে যোগ দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কো অং মায়াট বলেন, ‘সেনা অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করার জন্য আমাদের আন্তর্জাতিক শক্তি প্রয়োজন। চীন ও রাশিয়া সেনাবাহিনীর পাশে দাঁড়ালে আমরা তাদের নিন্দা জানাব আমরা তাদের পরিষ্কারভাবে জানাব যে, সেনাবাহিনীর পদক্ষেপ সম্পূর্ণভাবে জনগণের বিরুদ্ধে।’

এদিকে বুধবার জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মিয়ানমারে অভ্যুত্থান যাতে ব্যর্থ হয় তা নিশ্চিতের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

এছাড়া জি-সেভেনভুক্ত দেশগুলোর (কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য এবং আমেরিকা) পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইইউর প্রতিনিধিদের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তারা সেনাবাহিনীকে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতায় ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

তবে চীন ও রাশিয়া এখন পর্যন্ত মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়ে কোনো বক্তব্য-বিবৃতি দেয়নি। এমনকি ‘অভ্যুত্থান’ শব্দটি ব্যবহার না করে চীনা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন গণমাধ্যম এটিকে ‘মন্ত্রিসভার রদবদল’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।