স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে যে নানা ধরণের বিতর্ক চলছে, সেই পটভূমিতে আজ প্রতিবেশি দেশ ভারত স্পষ্ট করে এই বিচারের সমর্থনে এগিয়ে এসেছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মাটিতে যে ভয়াবহ অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল – তার বিচার এবং ‘ক্লোসার’ বা নিষ্পত্তি চাইবার অধিকার বাংলাদেশের মানুষের আছে।
তবে এই বিচার প্রক্রিয়ার নানা সীমাবদ্ধতা নিয়ে যে সব অভিযোগ উঠেছে – সেই সব পদ্ধতিগত বিষয় নিয়ে ভারত কোনো মন্তব্য করতে চায়নি, যদিও ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার ওপর তাদের পূর্ণ আস্থা আছে।
১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রতিবেশি দেশ ভারতের একটা বিরাট ভূমিকা ছিল। কিন্তু সেই যুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের এখন যে বিচার চলছে, সে বিষয়ে ভারত এতদিন মোটের ওপর নীরবই ছিল বলা যায়।
কিন্তু বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় দেওয়ার পর দিনই ভারত সেই নীরবতা ভেঙে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে, এই বিচার প্রক্রিয়া বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও ভারত মনে করে ওই নৃশংস অপরাধের বিচার পাওয়ার অধিকার অবশ্যই বাংলাদেশের মানুষের আছে।
এ বিষয়ে বিবিসি বাংলার এক প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দিন বলেছেন, “যদিও এটা বাংলাদেশ তথা সে দেশের মানুষের অভ্যন্তরীণ বিষয় ও তারাই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। তারপরেও আমরা মনে করি এখন যাদের বিচার চলছে তারা ১৯৭১-এ যে নৃশংস অপরাধ করেছিলেন তার বিচার চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বাংলাদেশের থাকবেই। ওই অপরাধের বিচার নিশ্চিত করে তারা যে এর ক্লোসার বা নিষ্পত্তি চাইবেন – সেটা আমরা উপলব্ধি করি।”
এর আগে এই বিচার প্রক্রিয়ার নানা সীমাবদ্ধতা নিয়ে এর আগে বিভিন্ন দেশ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনই নানা অভিযোগ তুলেছে।
ব্রিটেনের বেশ কয়েকজন এমপি যেমন প্রকাশ্যেই অভিযোগ করেছেন এই বিচার আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন নয় তেমনি আমেরিকার যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক বিশেষ দূতও এই প্রক্রিয়ার নানা সমালোচনা করেছেন।
পাকিস্তান বা তুরস্কর মতো অনেক দেশই এই বিচারের বিরুদ্ধে কথা বলেছে, এমন কী সমালোচনা শোনা গেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো সংগঠনের কাছ থেকেও। যদিও তা ছিল ভিন্ন কারণে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ভারত অবশ্য পরিষ্কার করে দিয়েছে, এই বিচার প্রক্রিয়ার পদ্ধতিগত বিষয় নিয়ে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি নয়।
এর আগে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ঢাকার শাহবাগে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তার প্রতি প্রকাশ্যেই সংহতি জানিয়েছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ ও ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন।
কিন্তু বিচার প্রক্রিয়ার আপিলে মঙ্গলবার কাদের মোল্লার ফাঁসির সাজা হওয়ার পর ভারত অবশ্য বলেছে, আলাদা করে কোনো মামলার ব্যাপারে তারা মন্তব্য করতে চান না। অর্থাৎ কোন মামলায় ফাঁসি হল বা কোনটায় যাবজ্জীবন, তা নিয়ে ভারতের বলার কিছু নেই। কিন্তু বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর তারা ভরসা রাখতে রাজি।
”বিচার প্রক্রিয়ার খুঁটিনাটি বা আলাদা করে প্রতিটি মামলার ভেতরে আমরা ঢুকতে চাই না। কিন্তু পাশাপাশি আমরা এটাও বলতে চাই, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা আছে এবং আমাদের বিশ্বাস, এই বিচারের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ ন্যায় পাবেন,” বলছেন সৈয়দ আকবরউদ্দিন।
তিস্তা নদীর পানিবন্টন কিংবা স্থল সীমান্ত চুক্তি –এই সব গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও ভারত যে তার রূপায়নে এতটুকুও এগোতে পারেনি, সেই বিষয়টা দুদেশের সম্পর্কে এখন প্রবল অস্বস্তির কারণ হয়ে রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধাপরাধের বিচার-প্রক্রিয়ায় ভারতের সরব সমর্থন বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে ও ভরসা জোগাবে দিল্লির এখন সেটাই আশা।