স্টাফ রিপোর্টার : জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে আপিল বিভাগের দেওয়া রায়কে নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করেছেন আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।
একইসঙ্গে আপিল বিভাগের রায়টিকে ভূল বলে আখ্যা দিয়েছেন তিনি। তবে তিনি বলেছেন, ‘আমরা দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’
মঙ্গলবার সকালে আপিল বিভাগের রায়ের পর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান হলে আসামীপক্ষের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি একথা বলেন।
রাজ্জাক বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে আব্দুল কাদের মোল্লাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন। আমরা এই রায় মানতে বাধ্য। কিন্তু এ রায়ে আমরা ক্ষুব্ধ, বিস্মিত। আমরা মনে করি এ রায় ন্যায় বিচারের পরিপন্থী।
তিনি বলেন, বিচারিক আদালত যেখানে মৃত্যুদণ্ড দেননি সেখানে প্রথমবারের মতো সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মৃত্যুদণ্ড প্রদান বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। তাছাড়া স্কাইপি কেলেঙ্কারির পরে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান আইনের শাসনের পরিপন্থী।
আসামী পক্ষের এই আইনজীবী বলেন, যে সাক্ষ্য প্রমান আদালতের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে তার ভিত্তিতে আব্দুল কাদের মোল্লাকে দোষী সাব্যস্ত করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু এটা দূর্ভাগ্যজনক যে, আজ তাকে শুধু দোষীই সাব্যস্ত করা হয়নি। বরং মৃত্যুদণ্ডও দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসের এটি একটি দুঃখজনক অধ্যায় বলেও মন্তব্য করেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। কাদের মোল্লার সাংবিধানিক অধিকার সংরক্ষণের জন্য পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে আপিল বিভাগের এই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করা হবে বলেও জানান আসামীপক্ষের এই প্রধান আইনজীবী।
এ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করা যাবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে রাজ্জাক বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় আইন হলো সংবিধান। সুপ্রীম কোর্ট চলে সংবিধানের উপর ভিত্তি করে। সুতরাং সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে কাদের মোল্লা রিভিউ করতে পারবেন।
একই সঙ্গে রিভিউ আদেশ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এ রায় কার্যকর করার কোনো বিধান নেই বলেও জানান ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।
সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সারা পৃথিবীতে মৃত্যুদণ্ড একটি বিতর্কিত বিষয়। যেখানে বিচারিক আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন সেখানে আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ড দিলেন এটা সঠিক নয়।
একই সঙ্গে বিচারপতিরা যেখানে ভুল করেছেন সেগুলো ধরিয়ে দিয়ে কাদের মোল্লার পক্ষে রিভিউ আবেদন করা হবে বলেও জানান তিনি।
অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের পরিচালনায় সাংবাদিক সম্মেলনে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলামসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।