একে.এম নাজিম, হাটহাজারী চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : রাজধানীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক হিজাব অবৈধকরণের তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ এবং সরকারের প্রতি অবিলম্বে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয় সোমবার বিবৃতি দিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমীরও দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী।
তিনি বলেন, বিতর্কিত এনজিও প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক শুরু থেকেই ইসলামী শিা ও কৃষ্টিকালচার বিরোধেী বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালনা করে মুসলমানদের স্বার্থবিরোধী কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। সম্প্রতি তাদের পরিচালিত রাজধানীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে হিজাব পরিহিত একজন ছাত্রীকে বহিষ্কার করে এবং তাদের প্রতিষ্ঠানে হিজাব পরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থানকে আরো স্পষ্ট করেছে। এটা ইসলামের বিরুদ্ধ নগ্ন আগ্রাসন ছাড়া আর কিছু নয়। তিনি আরো বলেন, মুসলিম প্রধান দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যা য়ে জনসাধারণের মৌলিক ও ধর্মীয় অধিকার হরণ করে; ড্রেসকোডে এমন বিধান থাকার কোন সুযোগ নেই। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে ইসলামী পোষাক পরিধানের জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে বহিস্কার হতে হবে, এটা জাতির জন্য লজ্জার ও পরিতাপের বিষয়। যারা এ কাজটি করেছে তারা অত্যন্ত ঘৃণ্য ও নিন্দনীয় কাজ করেছে। খবরটি আমাকে দুঃখ দিয়েছে ও উদ্বিগ্ন করেছে। তিনি বলেন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপ হিজাব পরিহিত ছাত্রীকে বহিষ্কার করে রীতিমত নারী নির্যাতন করেছে, উলঙ্গপনাকে উৎসাহিত করে নারী জাতিকে হেয় প্রতিপন্ন করেছে।
বিবৃতিতে আল্লামা শাহ আহমদ শফী ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের অপরিহার্য বিধান হিজাব বিরোধী অবস্থানের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে তৌহিদী জনতাকে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদি হওয়ার আহবান জানান। বিবৃতিতে আল্লামা শাহ আহমদ শফী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, অবিলম্বে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের হিজাবের বিরুদ্ধে অবস্থানের ব্যাপারে যথাযথ তদন্তপূর্বক কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে তৌহিদী জনতার ােভ প্রশমিত করুন। আগ্রহী ছাত্রীদেরকে হিযাব, বোরকা ও নেকাব পরে কাসে আসতে দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রেসকোড যদি ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক হয়, তবে তাতে পরিবর্তন আনতে হবে। তৌহিদী জনতা কোনভাবেই ইসলামের বিরুদ্ধে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা নীরবে সইবে না। এ ধরণের বর্বর ও জঘন্য ঘটনার বিচার না হলে ইসলামের দুশমনরা এরূপ আরো ঘটনা ঘটিয়ে দেশের সম্প্রীতি ও শৃঙ্খলা বিনষ্টে ষড়যন্ত্র করতে উৎসাহিত হবে। অন্যথায় জনসাধারণ নাস্তক্যবাদ ও ইসলাম বিদ্বেষীদের পাশাপাশি আপনাদেরকেও তাদের সহায়ক হিসেবে বিবেচনা করবে।
বিবৃতিতে শফী আরো বলেন, পরপুরুষের সামনে প্রাপ্তবয়স্কা মেয়েদের শরীর ডেকে রাখা ইসলামের বিধান মতে অলংঘনীয় ফরয। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক হিজাব নিষিদ্ধের ঘটনা শুধু মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতেই আঘাত হানেনি, বরং এটা ইসলামের একটি অলঙ্ঘনীয় বিধান পর্দা পালনে বাধা দেওয়ার মত গুরুতর অপরাধ। শুধু স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় কেন, কোন ব্যক্তি বিশেষ বা প্রতিষ্ঠানের কোন যুক্তিতেই কারো ধর্মীয় বিধান ও নিয়ম মানার ব্যাপারে বাধাগ্রস্থ করার অধিকার থাকতে পারে না। আধুনিক বিশ্বও এটা সমর্থন করে না।
বিশ্বে নিরাপত্তা বাহিনীই সবচেয়ে কঠোরভাবে ড্রেসকোড মেনে চলে। এতদসত্ত্বেও ভারতীয় পুলিশ, বিএসএফ ও সেনাবাহিনীতে শিখদেরকে তাদের ধর্মীয় পাগড়ি পরিধানে বাধার সৃষ্টি করা হয়নি। তিনি বলেন, একটা মুসলিম অধ্যুষিত দেশে ইসলামের অপরিহার্য বিধান পর্দাকে লঙ্ঘন করে বা পর্দা পালনে বাধা সৃষ্টি করে কোন ড্রেসকোড প্রচলন করা যায় না। এটা স্পষ্ট ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষ ছাড়া আর কিছু নয়। হিজাব বিরোধী অবস্থানের সাথে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের যারাই জড়িত, তারা যদি নিজেদেরকে মুসলিম বলে বিশ্বাস করে থাকেন, তবে তাদের উচিত অবিলম্বে তাওবা করে কালিমা পড়ে নেওয়া। কারণ, ইসলামের নির্দেশনা মতে যে কোন ফরয বিধানকে অস্বীকার, বাধাগস্তবা বিরোধীতা করে কেউ মুসলমান রূপে বিবেচ্য থাকবে না।
এ পর্যায়ে হেফাজতে ইসলামের উত্থাপিত ১৩ দফা দাবী বাস্তবায়নের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, হেফাজতের দাবী বাস্তবায়ন হলে দেশে এমন বর্বর আচরণের দুঃসাহস কেউ দেখাতে পারত না। তিনি সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের শান্তিশৃঙ্খলা, সম্প্রীতি ও নিরাপত্তা বিধানে অবিলম্বে ১৩ দফা দাবী বাস্তবায়ন করে দেশকে সংঘাতের হাত থেকে রা করুন।
এদিকে হেফাজতে ইসলামের আমীর গত ২ দিনে দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ সাইটে বিগত ২১ সেপ্টেম্বর ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সে দিনের ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে ইসলাম ও মুসলিম স্বাার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দেশের চলমান পরিস্থিতি পর্যালোচনাপূর্বক পরবর্তী পদপে ও কর্মসূচী প্রণয়নেই আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি পূর্বের সাংগঠনিক কমিটি বহাল রেখে সংগঠনের কর্মতৎপরতাকে আরো গতিশীল করার জন্য কেন্দ্রীয় শূরা কমিটি ও একটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়। ২১ সেপ্টেম্বরের ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলাম থেকে কাউকে বহিষ্কার করা বা কোন ব্যক্তিবিশেষকে বাদ দিয়ে কমিটি গঠনের কোন বিষয়ই আলোচনায় ছিল না। সুতরাং এ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো ও সংবাদ পরিবেশনের কোন অবকাশ নেই ।