স্টাফ রিপোর্টার, ১০ মার্চ, বিডিটুডে ২৪ডটকম : নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিবির নেতা রানার ইন্ধন ও সহযোগিতায় ব্লগার রাজীব হত্যার দোষ স্বীকার করেছে গ্রেফতারকৃত ওই ইউনিভার্সিটিরই ৫ ছাত্র।
রোববার বেলা ১টার দিকে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হারুন অর রশিদ আসামিদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
জবানবন্দি দেয়া শিক্ষার্থীরা হলেন- ফয়সাল বিন নাইম (২২), মাকসুদুল হাসান অনিক (২৬), এহসানুর রেজা রোমান (২৩), নাঈম সিকদার (১৯) ও নাফিস ইমতিয়াজ (২২)।
আদালত সূত্র জানায়, স্বীকারোক্তিতে ওই ছাত্ররা বলেছে- তাদের ইউনিভার্সিটির শিবির নেতা রানাই তাদেরকে এ হত্যাকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করেছে। রানাসহ একত্রে বসেই তারা রাজীবকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এ খুনের জন্য তারা এখন অনুতপ্ত।
সূত্র আরও জানায়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামাজ কক্ষে নামাজ পড়তে গিয়ে তারা পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ হয়। ওই সময় ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাথে জড়িত রানা বলেন, থাবা বাবা নামে এক ব্লগার ইসলাম ও মহানবী (স.) এর নামে খারাপ কথা লিখছে। থাবা বাবাকে হত্যা করা তাদের ঈমানি দায়িত্ব। এ ভাবে থাবা বাবাকে হত্যা করতে রানা তাদের উদ্ধুব্ধ করে। এইজন্য তারা ৬ জন দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কাজ শুরু করে। একটি গ্রুপের নাম দেয়া হয় ইন্টেল গ্রুপ এবং অপরটির নাম দেয়া হয় এগজিকিউশন গ্রুপ।
ইন্টেল গ্রুপের সদস্যরা ফেইসবুক থেকে রানার ছবি-তথ্য ও বাসার ঠিকানা সংগ্রহসহ যাবতীয় পরিকল্পনা করে। ফেইসবুকের মাধ্যমেই তারা জানে, শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে আসবে রাজীব। গত ৯ ফেব্রুয়ারি ইন্টেল গ্রুপের সদস্যরা শাহবাগে গিয়ে রাজীবের সঙ্গে তার ফেসবুকের ছবির মিল খুঁজে পায়।
রাজীবকে চেনার পর ওইদিন ইনটেল গ্রুপের দুই সদস্য রাজীবের সাথে শাহবাগ থেকে বাসে উঠে এবং একজন সাইকেলে চড়ে বাসে ওঠা রাজীবকে অনুসরণ করে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত যায় এবং রাজীবের বাসা চিনে আসে।
১২ ফেব্রুয়ারি থেকে তারা রাজীবকে অনুসরণ করতে থাকে। একই সঙ্গে রাজীবকে হত্যার জন্য ঢাকার নর্দ্দা থেকে নতুন মোবাইল সেট, সিম, চাপাতি ও ছোরা কেনা হয়।
হত্যাকাণ্ডের আগের দিন ১৪ ফেব্রুয়ারি তারা পল্লবীতে রাজীবের বাসার সামনে রাস্তায় গিয়ে ক্রিকেট খেলে। এ সময় তারা ইচ্ছে করে বলটি রাজীবের বাসায় ফেলে। তখন তারা রাজীবের খালাতো ভাইয়ের মাধ্যমে বলটি কুড়িয়ে এনে বাসার ভেতরের অবস্থা চিনে নেয়।
হত্যাকাণ্ডের দিন এগজিকিউশন গ্রুপের সদস্যরা বিকাল ৪টার দিকে পল্লবীর পলাশ নগরে অবস্থিত রাজীবদের বাসার গলিতে অবস্থান নেয়। ওইদিন তারা স্কুল ব্যাগ, ক্রিকেট ব্যাট ও বল সঙ্গে রাখে। ক্রিকেট খেলার নামে তারা বল ইচ্ছাকৃতভাবে রাজীবদের বাসায় ফেলে দেয় এবং বল আনার অজুহাতে পুনরায় নিশ্চিত হয়ে নেয় সেটি রাজীবের বাসা কিনা।
রাত আটটার দিকে রাজীব রিকশা চড়ে পল্লবীর বাসার দিকে যাচ্ছিলেন তখন ইনটেল গ্রুপের সদস্যরা তাকে অনুসরণ করতে থাকে। বাসার গেইটের কাছাকাছি রাজীবের রিকশা আসা মাত্র এক্সিকিউশন গ্রুপের সদস্য শিবির নেতা রানা তাকে রিকশা থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। ওই সময় ফয়সাল বিন নাঈম ওরফে দীপ চাপাতি দিয়ে রাজীবের দেহ থেকে মস্তক আলাদা করার জন্য কোপ দেয়।
এ সময় আহত হয়ে রাজীব আর্তচিৎকার করে দেয়ালের ওপর পড়ে যান। তারপর ফয়সাল রাজীবকে চাপাতি দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে। আসামি অনিকও তার হাতে থাকা ছোরা দিয়ে রাজিবকে আঘাত করতে থাকে।
এ সময় কেউ একজন খুন খুন বলে চিৎকার করলে আসামিরা দ্রুত পালিয়ে যায়।
রাজীবকে হত্যা করার সময় আসামি দীপের একটি কোপ অনিকের পায়ের জুতোয় লাগে। এতে তার পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের কিছু অংশ কেটে যায়।
পরে রুম্মানের সঙ্গে কাঁকরাইল এলাকায় গিয়ে অনিক জাতীয় চলচ্চিত্র প্রকাশনা অধিদপ্তরের পুকুর পাড়ে জুতা ফেলে যায়।
পুলিশ আসামিদের গ্রেফতারের পর সেই জুতাজোড়া, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি চাপাতি ও চারটি ছোরা শেরে বাংলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের রাস্তার পাশে ড্রেন থেকে উদ্ধার করে।
হত্যা মিশনে অংশ নেয়া ছয় আসামির ৫ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও মূল পরিকল্পনাকারী রানাকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি।