সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা ২ সদর আসনে মনোয়ন লাভে এগিয়ে আছেন মো: সাহেদ।
মো: সাহেদ দলীয় রাজনীতির পরিবারতন্ত্রের শেকল ভেঙে নবীন-প্রবীণ রাজনীতিকের সমন্বয় ঘটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন এই রাজনীতিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। তার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ এবং টেলিভিশনের টকশো গুলোতে বাকপটুতায় দলীয় ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হচ্ছে। তরুণ প্রজন্মের কাছে হয়ে উঠেছেন নতুন এক রোল মডেল। দলীয় নেতা-কর্মীদের ভাষ্য, বদলে যাওয়া সাতক্ষীরার আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন সফল মো: সাহেদ। সাতক্ষীরা সদরের দলীয় রাজনীতিকে চাঙ্গা ও সুসংগঠিত করতে নেতৃত্ব পরিবর্তন সময়ের দাবি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ফলশ্রুতিতে দলটির তৃণমূল ও মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এই প্রতিশ্রুতিবান নেতা মো: সাহেদ কে সাতক্ষীরা ২ সদর আসনে মনোনয়ন দেয়ার জোর দাবি তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট।
সাতক্ষীরা-২ সংসদীয় আসন হল বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ৩০০টি নির্বাচনী এলাকার একটি। এটি সাতক্ষীরা জেলায় অবস্থিত জাতীয় সংসদের ১০৬ নং আসন। সাতক্ষীরা-২ আসনটি সাতক্ষীরা জেলার সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত। জামায়াতের ঘাটি বলে পরিচিত ১৯৭৩-এর সাধারণ নির্বাচনের ৪১ বছর পর এবারই সাতক্ষীরা সদর আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি। এর আগের ৮টি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পরাজিত বরণ করেন, তবে গত নির্বাচনে বিএনপি ও তার ২০ দলীয় জোট থেকে কোন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করায় মীর মোস্তাক আহমেদ ৬৫ ভাগ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তবে আগামী সংসদ নির্বাচনে তার পাশাপাশি এ আসন থেকে মনোনোয়ন চান আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল থেকে আরো কয়েকজন প্রার্থী। কিন্তু ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে বিএনপি – জামাত না থাকায় নির্বাচিত হলেও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলের হাই কম্যান্ড তার প্রতি ভরসা পাচ্ছেনা বলে জানা গেছে। সাতক্ষীরা-২ সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের মনোয়ন লাভে এগিয়ে আছেন প্রধানমন্ত্রীর স্নেহভাজন মো: সাহেদ। তিনি জানান প্রধানমন্ত্রী এবং দলের হাই কম্যান্ড এর প্রতি তার আস্থা আছে। তারা মাঠ জরিপ করে সঠিক সিদ্বান্ত নিবেন বলে আশা করছেন।
এদিকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং নির্বাচনী গবেষণা মুলক একটি প্রতিষ্ঠানের জরিপে জানা গেছে আগামী জাতীয় সংসদ নিরবাচনে সাতক্ষীরা-২ সংসদীয় আসনে রিজেন্ট গ্রুপ এর চেয়ারম্যান ও জাতীয় দৈনিক নতুন কাগজ এর সম্পাদক মো: সাহেদ এগিয়ে আছেন।
কিন্তু বর্তমান এমপি মীর মোস্তাক আহমেদ রবি অন্য কাউকে প্রতিপক্ষ মানতে নারাজ। তবুও তরুণ নেতৃত্বকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেহেতু অগ্রাধিকার দিচ্ছেন, তাই মো: সাহেদ মনোনোয়ন পেতে আগ্রহী বলে জানা গেছে। সাংসদ মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি ও তার পিএস মকছুমুল হাকিম নিতাই ঢালী সহ তার সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনিয়মের ও প্রতারনার অভিযোগ। সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবিসহ দালাল ও প্রতারকদের বিচারের দাবি জানান
জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল খায়ের সরদার তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তার কাছ থেকে বিভিন্ন কাজের কথা বলে বেশ টাকা নেওয়া হয়েছিল। কিছু টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে বাকি টাকা ফেরত পাওয়ার আশা তিনি ছেড়েই দিয়েছেন। তবে সংসদ সদস্যের পিএস মকছুমুল হাকিম নিতাই ঢালী কারো নিকট থেকে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন।
সাতক্ষীরায় বিগত তিন দশকের ধারাবাহিকতায় জামায়াতে ইসলামী সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী ভিত গড়ে তুলেছে। তারা এলাকায় বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। অর্থলগ্নিকারী সংস্থাগুলো থেকে ক্ষুদ্রঋণ পাইয়ে দিয়ে মাঠপর্যায়ে কর্মী সৃষ্টি ও তাঁদের আর্থিকভাবে শক্তিশালী করেছে।
এর বাইরে আছে ঐতিহাসিক কারণও। জেলার রাজনীতিসচেতন ব্যক্তিরা বিশেষভাবে সাতচল্লিশের ভারত বিভক্তির কথা উল্লেখ করে বলেন, তখনো এ জেলায় সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল হিন্দুরা। তারা এলাকা ছেড়ে যেতে শুরু করলে তাদের জায়গায় এসে বসবাস শুরু করে অভিবাসী মুসলমানরা। ঐতিহ্যগতভাবে এই অভিবাসীদের মধ্যে প্রবল ভারতবিদ্বেষ রয়েছে।
সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এখানে সব কয়টি আসন পেলেও আওয়ামী লীগের বিরোধীপক্ষ নেহাত কম ভোট পায়নি। স্থানীয় একাধিক রাজনীতিক জানান, পরিস্থিতি একেবারে বদলে যায় পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিকশিত হতে থাকে মৌলবাদী রাজনীতি।
১৯৭৯ সালের (জিয়াউর রহমানের আমলে) জাতীয় নির্বাচনে সাতক্ষীরার তিনটি আসনে মুসলিম লীগের প্রার্থী জয়লাভ করেন। ওই নির্বাচনে সাতক্ষীরা সদর আসনে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান বিরোধিতাকারী খান এ সবুর জয়লাভ করেন।
জাতীয় রাজনীতিতে ক্ষয়িষ্ণু হয়ে আসা মুসলিম লীগের বিপর্যয়ের ওপরই নিজেদের ভিত গড়তে শুরু করে জামায়াত। প্রথমে মুসলিম লীগ সমর্থকদের দলে টানে তারা। তাদের দিয়েই জেলাব্যাপী শক্তিশালী একটি ঘাঁটি তৈরি করতে সক্ষম হয় জামায়াত। তখন থেকেই জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতায় জেলায় একের পর এক মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। বর্তমানে এ জেলা ২৭৪টি মাদ্রাসা রয়েছে। আর সাতক্ষীরা ২ সদর আসনেই আছে শতাধিক মাদ্রাসা।
১৯৭৯-এর দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা সদর ও কলারোয়ার অংশ বিশেষ নিয়ে গঠিত তৎকালীন খুলনা-১৪ আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন মুসলিম লীগের খান এ সবুর । তিনি আসনটি ছেড়ে দেয়ায় উপনির্বাচনে জয়ী হন একই দলের সৈয়দা রাজিয়া ফয়েজ। এরপর ১৯৮৬-এর তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-২ আসনে নির্বাচিত হন জামায়াতের কাজী শামসুর রহমান। অন্যদিকে ১৯৮৮-এর চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে এই আসনে নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির মোঃ হাবিবুর রহমান। ১৯৯১-এর পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ফের জয়লাভ করেন জামায়াতের কাজী শামসুর রহমান। এদিকে ১৯৯৬-এর ষষ্ঠ সংসদীয় নির্বাচনে জয়লাভ করেন বিএনপির অ্যাডভোকেট শামসুল হক। অন্যদিকে একই সালে অনুষ্ঠিত সপ্তম সংসদ নির্বাচনে জয়ী হন জামায়াতের কাজী শামসুর রহমান। ২০০১-এর অষ্টম সংসদ নির্বাচনে আসনটি আবারও চলে যায় জামায়াতের দখলে। এতে জয়লাভ করেন জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ মওলানা আবদুল খালেক মণ্ডল। ২০০৮-এর অষ্টম সংসদ নির্বাচনে আসনটি লাভ করেন জাতীয় পার্টির এমএ জব্বার। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সদ্য সমাপ্ত দশম সংসদ নির্বাচনে আসনটি লাভ করলেন মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি । তিনি হারিয়েছিলেন শ্রমিক লীগ নেতা ছাইফুল করিম সাবুকে। গত ১০ম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি ৩২ হাজার ৮৫৯ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শ্রমিক লীগের ছাইফুল করিম সাবু পেয়েছেন ১৫ হাজার ৭৮৯ ভোট।
কিন্তু ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামাত অংশ নিলে আওয়ামী লীগ মীর মোস্তাক আহমেদ রবির মতো জনবিচ্ছিন্ন দুর্বল প্রার্থী মনোয়ন দিলে পুনরায় জামায়াতে ইসলামী সাংগঠনিকভাবে ভিত গড়ে তুলবে। দেশের আশেপাশের শহরগুলোর তুলনায় সাতক্ষীরা সদর উন্নয়ন বঞ্চিত থেকেছে দিনের পর দিন। নেতৃত্বের দূরদর্শিতার কারণে উন্নয়ন এখানে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে পারেনি।
অতএব এমন বাস্তবতায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো: সাহেদ সাতক্ষীরা সদরকে নতুন সুন্দর করে গড়ার প্রত্যয় নিয়ে কাজ শুরু করেন। সাতক্ষীরা সদরের বিদ্যমান সঙ্কট এবং সমস্যার বেড়াজাল থেকে শহরটিকে পরিকল্পিত ও আধুনিক রূপ দিতে সাধারণ মানুষের আশা আখাঙ্কার প্রতিক মো: সাহেদ নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করবেন নির্বাচিত হলে। তার সুচারু দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই সাতক্ষীরা শহর আধুনিক মাত্রায় প্রবেশ করতে সক্ষম হবে।
