খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি : খাগড়াছড়ি রাংগামাটি বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলার বছরের পর বছর জুম চাষ করে জীবন জীবিকার তাগিদে পাহাড়ের পাহাড়ি বা আদিবাসীরা গড়ে উঠেছে জীবন যাপন। খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলাধীন আর্য্যমিত্র বৌদ্ধ বিহারে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ভাদ্র পূর্ণিমা উপলক্ষে ধান কেটে পুন্য অনুষ্ঠান সম্পন্ন করলেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য শতরূপা চাকমা। বিহার প্রাঙ্গনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ধর্মদেশনা দেন বিহার অধ্যক্ষ সূদর্শী স্থবির। এ উপলক্ষে পঞ্চশীল গ্রহন, বুদ্ধ পূজা, অষ্ট পরিস্কার দান করা হয়। প্রধান অতিথিসহ এ সময় চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা কৃষানীরা জুম ধান কাটেন। এ উপলক্ষে পরে গাছের চারা রোপন করা হয়।
ঐতিহ্যবাহী পাহাড়ি পোশাকে পানছড়ির জোতির্ময় কার্বারী পাড়া (তালতলা) আর্যমিত্র বৌদ্ধ বিহার এলাকার জুম ক্ষেতে ধান কাটার এক দৃষ্টিনন্দন উৎসব শুরু হয়েছে। চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরাদের নিজস্ব পোশাকে ধান কাটার দৃশ্য উপভোগে ছুটে আসে এলাকার আবাল-বৃদ্ধ-বনিতারা। আর এই উৎসবে অতিথি হয়ে ছুটে আসেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য সতীশ চন্দ্র চাকমা ও শতরূপা চাকমা। এই প্রাণবন্ত উৎসবটির আয়োজক ছিলেন বিহারাধ্যক্ষ ভদন্ত সুদর্শী ভিক্ষু।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঐতিহ্যবাহী পোশাকে কাস্তে হাতে ধান কেটে পিঠে ঝুলানো হাল্লোংয়ে ধান ভরাচ্ছে পাহাড়ি তরুনীরা। সরকারের সফল প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মতে মন্দির, মসজিদ, বিহার, গীর্জা ও বাড়ি ঘরের আশে-পাশে পরিত্যক্ত জায়গা খালি না রেখে বাগান করার আহ্বান জানান বলে বিহারাধ্যক্ষ ভদন্ত সুদর্শী ভিক্ষু।
তিনি আর্যমিত্র বৌদ্ধ বিহার এলাকা এলাকা সাজিয়েছেন জুম ধানের পাশাপাশি, আনারস, পেঁপে ও নানান জাতের আমসহ মিশ্র ফল বাগান লাগানো। অতিথিরা তার সৃজনশীল কর্মকান্ডের ভুয়শী প্রশংসা করেন।
এদিকে প্রাকৃতিক অনুকুলে থাকায় খাগড়াছড়ি ৯টি উপজেলাসহ পার্বত্য পর্যটন সাজেকের পাহাড়ি ঢালুতে ৪কেজি ধান রোপন করে বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলা সদর আলুটিলা, মাটিরাংগা হৃদয় মেম্বার পাড়া, মহালছড়ি যৌথ খামার, দীঘিনালা ভৈরফা, পানছড়ি জিরানীখোলা রাচাই কার্বারী পাড়া, রামগড় কালাডেবা, মানিকছড়ি গচ্ছাবিল, গুইমারা সিন্দুকছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি বর্মাছড়ি এলাকায় প্রাকৃতিক অনুকুলে থাকায় পাহাড়ের জুম চাষের বাম্পার ফলন হওয়ায় প্রত্যন্ত দুর্গম কৃষকরা খুশি মনে ধান কাটা শুরু করে দিয়েছে।
আলোসভা চাকমা জানিয়েছেন পরিবার পরিজন নিয়ে সুখের সংসার চলছিল। স্বামী ব্যবসা করেন বড় মেয়ে রাঙামাটি সরকারি কলেজে অর্নাস পড়েন ছোট ছেলে নবম শ্রেণিতে। এভাবে সুখে শান্তিতে বসবাস গ্রামের সহজ সরল পরিবার নিয়ে বেশ ভালোই যাচ্ছিল। হঠাৎ অজানা অসুখে আলোসভা চাকমার স্বামী সজ্জাসাহী। অনেক ডাক্তার কবিরাজ বৈদ্য চিকিৎসা করে প্রচুর টাকা খরচ করেও এখনো পুরোপুরি সুস্থ্য হয়নি। বিধাতার কৃপায় বেচেঁ গেলেও, পরিবারের উপার্জনকারী মানুষটি সুস্থ্য না হওয়ার কারনে ছেলে মেয়ে লেখা-পড়া খরচ বহন করার সামার্থ্য নেই বলে জানা যায়। অসহায় হতদরিদ্রর মাঝেও করোনাকালীন সময়ে খাদ্য সহায়তা পায়নি বলে জানিয়েছে আলোসভা চাকমা।
এইবার সাজেকে দুর্গম পাহাড়ী ঢালুতে ৪কেজি জুমের ধান রোপন করে যথেষ্ট ফলন পেয়ে আনন্দিত আলোসভা চাকমা। স্বামীর জীবন নিয়ে দুঃচিন্তায়,পরিবারের অভাব অনটন নিয়ে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন আলোসভা চাকমা। তার পরেও বেচে থাকার কিছুটা হলেও স্বস্তি পান তিনি।
সরকারি সহযোগিতা পেলে জুম চাষিদের নিরাপদ আশ্রয় বাসস্থান ও পূর্নবাসন করা গেলে পার্বত্য জেলার বনজঙ্গল রক্ষা করা সম্ভব হতো। ১৯৭৫/৮০সালে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী দেখা যেতো। বাচার তাগিদে জুম চাষের কারণে বছরের পর বছর বনজংগল জুমের আগুনে পুড়ে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য।
উল্লেখ্য পাহাড়ের জুম চাষীদের ধানের বীজ বপনের সময় এক সাথে ২৫থেকে ৩১টি জাতীয় মিশ্রনে বিভিন্ন প্রকারের বিন্নি ধান, মারফা, টক পাতা, টিল, জংলী আলু, ডেরস, শসা, টিটা করলা, চিকন মরিচ, বাসকোরল, আদা, হলুদ, কলা গাছ ও ঔষধি গুনাগুন লতা-পাতা লাগানো হয়। প্রথাগত নিয়ম নীতিতে একটি পরিবারের জীবন চলার এক বছরের খোরাকি হিসেবে মোটামুটি খরচ মেটানো সম্ভব হয়।