স্টাফ রিপোর্টার : ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত অমর একুশে গ্রন্থমেলা আজ শেষ হয়েছে। সেই সঙ্গে সাঙ্গ হলো লেখক-পাঠক- প্রকাশকদের মিলনমেলা।
মেলার শেষ দিনে নতুন বই এসেছে ১৭৪টি। আর পুরো মাসজুড়ে এসেছে মোট ২৯৫৯টি বই। এবার সবচেয়ে বেশি এসেছে কবিতার বই, সংখ্যা ৭১০টি। পরের স্থানেই রয়েছে উপন্যাস, ৫০২টি। গতবছর কবিতা ও উপন্যাস দু’ই ছিল এবারের চেয়ে বেশি এবং সে সংখ্যা দু’টি যথাক্রমে ৭৭১টি ও ৫৩২টি।
এছাড়া এবার মাসজুড়ে নতুন বইয়ের তালিকায় গল্প ৩৯২টি, প্রবন্ধ ১১৯টি, গবেষণা ৫৪টি, ছড়া ১১৪টি, শিশুতোষ ১০৫টি, জীবনী ৯২টি, রচনাবলী ১১টি, মুক্তিযুদ্ধ ৫৭টি, নাটক ৩৩টি, বিজ্ঞান ৪১টি, ভ্রমন ৭১টি, ইতিহাস ৪২টি, রাজনীতি ১৪টি, চিকিৎসা/স্বাস্থ্য ২৬টি, কম্পিউটার ১১টি, রম্য/ধাঁধা ৭১টি, ধর্মীয় ৩৮টি, অনুবাদ ২৫টি, অভিধান ৫টি, গোয়েন্দা/বৈজ্ঞানিক ফিকশন ৩৩টি এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর এসেছে ৩০৭টি নতুন বই।
উল্লেখ্য, গত বছর মোট এসেছিল ৩০৭০টি নতুন বই।
সমাপনী অনুষ্ঠান
আজ মেলার শেষ দিনে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি সচিব ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। স্বাগত বক্তৃতা করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। গ্রন্থমেলার ২০১৪-র প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন অমর একুশে গ্রন্থমেলার সদস্য-সচিব ও একাডেমির পরিচালক শাহিদা খাতুন।
আসাদুজ্জামন নূর বলেন, সকলের একান্ত সহযোগিতায় অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৪ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। প্রথমবারের মতো ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গ্রন্থমেলা স্থানান্তর আমাদের জন্য ছিল একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। ভবিষ্যতে আরো সুপরিসরে মেলা আয়োজনের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে সংশ্লি¬ষ্ট সবার আন্তরিক সহায়তা কামনা করছি।
প্রতিবেদন উপস্থাপন করে শাহিদা খাতুন বলেন, বাংলা একাডেমির অমর একুশে গ্রন্থমেলা এখন গোটা বাঙালি জাতির প্রাণের মেলাতে পরিণত হয়েছে। এবারের একুশে গ্রন্থমেলা ঘিরে দেশ ও দেশের বাইরে যে বিপুল চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে তা আমাদের সাংস্কৃতিক অগ্রসরমানতারই প্রতীক। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকাশিত বিভিন্ন বিষয়ে নতুন বইয়ের সংখ্যা ২,৯৫৯টি। গ্রন্থমেলা গতকাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমির নিজস্ব বিক্রয় ছিল এক কোটি ১০ লাখ ২৪ হাজার পাঁচ টাকা ৭০ পয়সা এবং বাংলা একাডেমিসহ এবারের গ্রন্থমেলায় মোট বিক্রির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি টাকা।
তিনি বলেন, সম্প্রসারিত মেলার স্থান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান-অংশের প্রাকৃতিক পরিবেশকে রক্ষা করে অপরিহার্য দিকগুলো বিবেচনায় রেখে নান্দনিক সাজসজ্জায় বিন্যাসের মাধ্যমে ২০১৫ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলা আয়োজন করা সম্ভব হবে বলে আমরা আশা রাখি।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, একুশে গ্রন্থমেলা আজ এক জাতীয় উৎসবের নাম। বইয়ের প্রতি যে ভালোবাসা এই মেলা উপলক্ষে প্রকাশ হতে দেখি তা তুলনাহীন তবে এই মেলা সম্প্রসারণের পাশাপাশি এর আঙ্গিক নিয়েও নতুন করে ভাবনার সময় এসেছে।
নতুন বই
আজ মেলার শেষ দিনে নতুন বই এসেছে ১৭৪টি। এরমধ্যে গল্প-৩০টি, উপন্যাস-২৪টি, প্রবন্ধ-১২টি, কবিতা-৩৭টি, গবেষণা-৩টি, ছড়া-১৩টি, শিশুতোষ-৩টি, জীবনী-৭টি, রচনাবলি-১টি, মুক্তিযুদ্ধ-৪টি, নাটক-৩টি, বিজ্ঞান-৩টি, ভ্রমণ-৪টি, ইতিহাস-৩টি, চিকিৎসা-১টি, কম্পিউটার-১টি, রম্য/ধাঁধা-২টি, ধর্মীয়-২টি, অভিধান-১টি এবং অন্যান্য-২০টি। আজ মেলায় ১৪টি নতুন বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করা হয়।
শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, সংগীত, সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার পুরস্কার
অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আয়োজিত শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, সঙ্গীত, সাদারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে আজ পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। চিত্রাংকনে পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন, ক-শাখায় : সামারা মজুমদার (১ম), সুমাইতা নুসাইবা (২য়) এবং ইনারা আলম আমিরা (৩য়)। খ-শাখায় : নাহিয়ান মাঈশা আয়মী (১ম), মুহতাসিম জামান খান (২য়) এবং জয়া সরকার (৩য়)। গ-শাখায় : অমিয় কৃষ্ণমূর্তি সাহা (১ম), শ্রাবন্তী সাহা (২য়) এবং শায়লা আক্তার উর্মি (৩য়)।
শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন, ক-শাখায় : প্রিয়ন্ত দেব (১ম), তানিশা জাহান নরিকা (২য়) এবং যুগ্মভাবে ৩য় হয়েছেন ক. মাশুক কায়সার ইভান ও খ. সুনাম নাদভী-সামন্তি। খ-শাখায় : শিতাব তাহ্মিদ (১ম), মাশায়েখ হাসান (২য়) এবং নুজহাত সাবিহা পুষ্পিতা (৩য়)।
শিশু-কিশোর সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতার পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন, ইনতিসার তাহমিদ (১ম), তামীম কাইসান (২য়) এবং মারজান শাওয়াল রিজওয়ান।
শিশু-কিশোর উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন, সালমান শাহ্রিয়ার সাকিব (১ম), রিজওয়ান আমির ফাহিম (২য়) এবং রোজা শাওয়াল রিজওয়ান (৩য়)।
সকালে শিশু-কিশোরদের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিশুসাহিত্যিক এখ্লাসউদ্দীন আহ্মদ। অতিথি হিসেবে আরো ছিলেন গান বাংলা টেলিভিশনের পরিচালক শিল্পী মাহমুদ সেলিম। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক মোহিত কামাল।
শহীদ মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ও চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার প্রদান
গ্রন্থমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে সর্বাধিক সংখ্যক মানসম্মত গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ‘শহীদ মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হয়- মাওলা ব্রাদার্স, প্রথমা প্রকাশন ও অন্বেষা প্রকাশনকে। সেরা গ্রন্থের জন্য ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হয় বেঙ্গল পাবলিকেশন্স-এর অন্তর্দাহ এবং পাঠক সমাবেশের কাফকা সমগ্র গ্রন্থটিকে। পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের হাতে পুষ্পস্তবক, ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন সংস্কৃতি মন্ত্রী, বাংলা একাডেমির সভাপতি এবং মহাপরিচালক।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন শাহীন সামাদ, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, ইফফাত আরা দেওয়ান, বুলবুল মহলানবীশ, ইফফাত আরা নার্গিস, শ্রেয়সী রায়, সানজিদা মনজুরুল হ্যাপী এবং নবিন কিশোর।