স্টাফ রিপোর্টার : মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের পর আরেক নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলা নিয়ে উদ্বেগ ছড়ানো হচ্ছে জামায়াতের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত সাঈদীর আপিল শুনানি এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এখন রায়ের অপেক্ষা।কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর জামায়াতের কর্মী-সমর্থকদের জন্য এক বিরাট ধাক্কা। নেতারা তাদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ছড়িয়েছিল যে, সরকার যত কিছুই করুক জামায়াত নেতাদের ফাঁসি কার্যকর করতে পারবে না। কাদের মোল্লার নিজেরও এমন বিশ্বাস ছিল। কারণ, ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে তিনি পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চান জাতিসংঘ থেকে কোনো চিঠি এসেছে কি না। কিন্তু জামায়াত নেতাদের কিছু করা যাবে না- কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর কর্মী-সমর্থকদের এই বিশ্বাস ভেঙে যায়।এই অবস্থায় সাঈদীর মামলায় কী রায় হয় তা নিয়ে উদ্বিগ্ন জামায়াতের কর্মী সাঈম। তিনি বলেন, ‘আমরা এত আন্দোলন করলাম, কিন্তু কোনো কাজ তো হলো না। এখন আমরা কী ই বা করতে পারি?’গত এক বছরের অভিজ্ঞতায় জামায়াতের একটি অংশ মনে করে যে, আন্দোলন করে কোনো ফায়দা হবে না। নাশকতা করে রায় কার্যকর ঠেকাতে পারবে বলেও মনে করে না তারা। এই অবস্থায় আন্দোলনে না গিয়ে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করতে আগ্রহী তারা।তবে অন্য একটি অংশ রাজপথে কর্মসূচি দিয়ে অস্থিরতা তৈরির পক্ষে। সাঈদীর মামলার আপিলের রায়কে সামনে রেখে আবার মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে এই অংশটি। আপিল বিভাগ সাঈদীর ফাঁসি বহাল রাখলে নাশকতার পরিকল্পনা করছে তারা। এরই মধ্যে গত সোমবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে দলটি।জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা আত্মগোপনে থেকেই কর্মীদেরকে একজোট করার চেষ্টা করছেন। দলের আমির, সেক্রেটারি জেনারেল, দুইজন নায়েবে আমির, তিনজন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির একজন সদস্যের বিচার চলছে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে। এরই মধ্যে কার্যকর হয়েছে একটি রায়। ট্রাইব্যুনালে ফাঁসির দ- পেয়েছেন আরও তিনজন। দলের আমির নিজামী ফাঁসির দ- পেয়েছেন অন্য এক মামলায়। এই অবস্থায় দলের কার্যক্রম বলতে গেলে ভেঙে পড়েছে।রাজধানীর বড় মগবাজারে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং পুরানা পল্টনে মহানগর কার্যালয়ে গিয়ে কোনো নেতাকে পাওয়া যায়নি। গত প্রায় দুই বছরও ধরেই এই অবস্থায় চলছে দল। দলীয় কার্যালয়ে আসেন না নেতারা, তারা কোথায় আছেন সে বিষয়ে মুখ খুলতে চান না কার্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মীরা।জামায়াতের দায়িত্বশীল দুইজন নেতা জানান, সাঈদীর বিরুদ্ধে ইব্রাহিম কুট্টি হত্যার অভিযোগ সংক্রান্ত নথি তলবের জন্য তার আইনজীবীর করা আবেদন ১৬ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ খারিজ করার পর জামায়াতের কেন্দ্র থেকে জেলা ও থানার দায়িত্বশীল নেতাদের কাছে জরুরি বার্তা পাঠানো হয়। এতে উ”চ আদালতের রায় সাঈদীর বিরুদ্ধে যেতে পারে এমন ধারণা দিয়ে নেতা-কর্মীদের দ্রুত মাঠে নামার প্র¯‘তি নিতে বলা হয়। আপিলের রায়ের পর দলের কর্মসূচিতে যাতে সাধারণ মানুষকেও সম্পৃক্ত করা যায়, সে ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণেরও নির্দেশনা দেওয়া হয় ওই বার্তায়।জামায়াতের একাধিক সূত্র জানায়, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার রায়কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি। কারণ, দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে তিনি খুব জনপ্রিয়। এ ছাড়াও গ্রামগঞ্জে সাধারণ মানুষের মধ্যেও সাঈদীর জনপ্রিয়তা আছে বলে মনে করে জামায়াত। তাই সাঈদীকে কেন্দ্র করে কর্মসূচি দিলে তাতে কিছু সাধারণ মানুষকেও যুক্ত করা যাবে বলে দলটি আশা করে। এ জন্য আগাম প্র¯‘তিতে মনোযোগ দিয়েছে দলটি।দলের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, ইব্রাহিম কুট্টি হত্যার পর ১৯৭২ সালে তার স্ত্রীর দায়ের করা মামলার নথিপত্র তলবের আবেদন আপিল বিভাগ খারিজ করায় হতাশ হয়ে পড়েছে জামায়াত। এর আগে বিসা বালীর ভাই সুখরঞ্জন বালীর সাক্ষ্য গ্রহণের আবেদনও অগ্রাহ্য হয়।সাঈদীর বিরুদ্ধে আনা ২০টি অভিযোগের মধ্যে ৮টিতে দোষী সাব্যস্ত হন তিনি। এর মধ্যে ইব্রাহিম কুট্টি ও বিসা বালী হত্যায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসির দণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। সাঈদী এই দণ্ডাদেশ থেকে খালাস চেয়ে আপিল করেন। আর রাষ্ট্রপক্ষ বাকি ৬ অভিযোগে সাঈদীর সাজা চেয়ে আপিল করে।উভয় পক্ষের দীর্ঘ শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ১৬ এপ্রিল দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করে রায় অপেক্ষমাণ রাখেন।