অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) থেকে : দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হওয়া বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বড়দুলালী গ্রামের ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক শাহাদাত হোসেন ঘরামীর (২২) মা জাহানারা বেগম ও তার স্ত্রী নববধু সুমা বেগমসহ পরিবারের লোকজনের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠে। মোটরসাইকেল চালক শাহাদাত হোসেন ঘরামীকে বুধবার সন্ধ্যায় প্রতিবেশী দুই যুবক মোটরসাইকেলসহ তাকে ভাড়ায় নিয়ে মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের সিকি নওহাটা গ্রামে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ একটি ধানক্ষেতে ফেলে রাখে। বৃহস্পতিবার বিকেলে অজ্ঞাত যুবকের লাশ দেখতে পেয়ে এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দেয়। সদর থানা পুলিশ সন্ধ্যায় লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মাদারীপুর মর্গে পাঠায়। ঘটনাস্থল থেকে দুই কি.মি দূরে মস্তফাপুর পাওয়ার হাউজের পিছন থেকে শাহাদাতের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে। রাতে শাহাদাতের পরিবার খবর পেয়ে মর্গে লাশ সনাক্ত করে। এঘটনায় নিহত শাহাদাতের পিতা দিন মজুর মোকসেদ ঘরামী বাদি হয়ে শুক্রবার সকালে পার্শ্ববর্তী কমলাপুর গ্রামের মন্নাত ফকিরের পুত্র মিরাজ ফকির, সুলতান শরীফের পুত্র সেন্টু শরীফ ও মিরাজের নিকটাতœীয় মস্তফাপুর এলাকার বাসিন্দা ফজলে হকের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাত ৫ জনকে আসামি করে ্একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। শুক্রবার সকালে শাহাদাত হত্যার প্রতিবাদে ও খুনিদের গ্রেপ্তারসহ শাস্তির দাবিতে এলাকার শত শত নারী ও পুরুষ বিক্ষোভ মিছিল বের করে। অপরদিকে শুক্রবার দুপুরে শাহাদাত হত্যা মামলার প্রধান আসামি মিরাজ ফকিরের পিতা মন্নাত ফকির ও সেন্টুর মামা জাকির ফকিরকে উপজেলার ইল্ল¬া এলাকা থেকে এলাকাবাসী আটক করে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে।
সরেজমিনে এলাকাবাসী, পুলিশ ও নিহতের পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সুঠাম দেহের অধিকারী, অত্যন্ত ভদ্র ও বিনয়ী শাহাদাত হোসেন দু’মাস পূর্বে পার্শ্ববর্তী কমলাপুর গ্রামের ছাদের হাওলাদারের মেয়ে সুমা বেগমকে সামাজিকভাবে বিয়ে করে। বিয়ের পর পর প্রতিবেশী জুয়েল মৃধার বাজাজ প্লাটিনা কালো রংয়ের মোটরসাইকেলটি মাসিক ৬হাজার টাকা কিস্তিতে ভাড়া নেয় সে। মোটরসাইকেল চালিয়ে ৬ সদস্যর পরিবারের ভরণপোষণ জোগাত শাহাদাত। শাহাদাতের প্রতিবেশী ওহাব খান জানান, বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে বড়দুলালী বেইলী ব্রিজ থেকে মাদারীপুর যাওয়ার জন্য ৩শ’ টাকায় ভাড়া করে নিয়ে যায় কমলাপুর গ্রামের মন্নাত ফকিরের পুত্র মিরাজ ফকির, সুলতান শরীফের পুত্র সেন্টু শরীফ। বড়দুলারী গ্রামের আপাং খান, ইউপি সদস্য মাহাবুব আলম খোকন সহ অনেকে জানান, শাহাদাত ছিল অত্যন্ত ভদ্র, বিনয়ী ও নমনীয়।
মাদারীপুর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকেলে ৫টার দিকে অজ্ঞাত যুবকের লাশ দেখতে পেয়ে এলাকাবাসী আমাকে জানান। পুলিশ সন্ধ্যায় লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মাদারীপুর মর্গে পাঠায় এবং ঘটনাস্থল থেকে দুই কি.মি দূরে মস্তফাপুর পাওয়ার হাউজের পিছন থেকে শাহাদাতের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেন। নম্বরবিহীন মোটরসাইকেলের মাদারীপুরের শো-রুম রহমান মোটর্সের মালিকের মাধ্যমে মোটরসাইকেল মালিক জুয়েল মৃধাকে জানান হয়। রাতে শাহাদাতের পরিবার খবর পেয়ে মর্গে গিয়ে লাশ সনাক্ত করে। এঘটনায় নিহত শাহাদাতের পিতা মোকসেদ ঘরামী বাদি হয়ে শুক্রবার সকালে পার্শ্ববর্তী কমলাপুর গ্রামের মন্নাত ফকিরের পুত্র মিরাজ ফকির, সুলতান শরীফের পুত্র সেন্টু শরীফ ও মিরাজের নিকটতম আতœীয় মস্তফাপুর এলাকার বাসিন্দা ফজলে হকের নাম উল্লে¬খ করে আরো অজ্ঞাত ৫জনকে আসামি করে ্একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ জানায়, এজাহারভুক্ত আসামীদের গ্রেপ্তারের জোর প্রচেষ্টা চলছে। আসামিদের গ্রেপ্তার করা হলে হত্যার রহস্য ইদঘাটন হবে’। দুপুরে মাদারীপুর মর্গ থেকে শাহাদাতের পিতা তার লাশ গ্রহণ করেন। অপরদিকে শুক্রবার সকাল ৯টায় শাহাদাত হত্যার প্রতিবাদে ও খুনীদের গ্রেপ্তারসহ শাস্তির দাবিতে এলাকার শত শত নারী ও পুরুষ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বিক্ষুব্ধরা খুনীদের ফাঁসির দাবি করেন। অপরদিকে গতকাল শুক্রবার দুপুরে শাহাদাত হত্যা মামলার প্রধান আসামি মিরাজ ফরিরের পিতা মন্নাত ফকির ও সেন্টুর মামা জাকির ফকিরকে উপজেলার ইল¬া এলাকা থেকে এলাকাবাসি আটক করে গনধোলাই দিয়ে গৌরনদী থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। গৌরনদী থানার উপ-পরিদর্শক স্বপন কুমার হাওলাদার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আটককৃতদের মাদারীপুর থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে।