স্টাফ রিপোর্টার : রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘে তোলা বাংলাদেশের প্রস্তাব নিয়ে চীন ও ভারতের ভূমিকাকে কৌশলী হিসেবে দেখছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। এর পেছনে দেশ দুটির আর্থিক স্বার্থ জড়িত বলে মনে করেন তিনি। চীন বাংলাদেশের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিলেও রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে তারা ভূমিকা পালন করতে পারে বলেও আশাবাদী তোফায়েল।
রবিবার সচিবালয়ে ঢাকায় ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত যাও তাবাযারা দি ওলিভেরা জুনিয়রের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা বন্ধ, ও রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে বাংলাদেশের তোলা প্রস্তাব পাস হয়েছে গত বৃহষ্পতিবার। মোট ১৩৫টি দেশ এই প্রস্তাবের পক্ষে এবং ১০টি দেশ এর বিরুদ্ধে ভোট দেয়। আবার বেশ কিছু দেশ ভোট দানে বিরত এবং অনুপস্থিত থাকে।
বাংলাদেশের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে যারা ভোট দিয়েছে তাদের মধ্যে আছে চীন। বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক দিনে দিনে আরও জোরাল এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে দেশটির অংশগ্রহণ বাড়তে থাকার পরও তাদের এই অবস্থান ঢাকার জন্য অনেকটাই হতাশাজনক।
আবার যেসব দেশ ভোট দানে বিরত ছিল তাদের মধ্যে আছে প্রতিবেশী ভারত। প্রতিবেশীদের মধ্যে বাংলাদেশ অগ্রাধিকার পাবে, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের এমন বক্তব্যের পরও বাংলাদেশের পক্ষে কেন জাতিসংঘে ভোট দিল না ভারত, এ নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া আছে দেশে।
চীনের বিরুদ্ধাচারণ এবং ভারতের নীরবতাকে কী চোখে দেখছেন-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নেরও জবাব দেন তোফায়েল। তার দৃষ্টিতে বিষয়টির সঙ্গে অর্থনীতি জড়িত। তিনি বলেন, ‘চীন ওখানে (রাখাইন রাজ্যে) ইকোনমিক জোন করছে, ভারত সেখানে পোর্ট তৈরি করেছে। এ কারণে তারা কৌশলী ভূমিকা নিয়েছে।’
চীন তার অবস্থান সুস্পষ্ট করলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দেশটি সহায়তা করবে-এমন আশা ছাড়ছেন না বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘চীনের মন্ত্রীর সাথে আমার কথা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে তারা উদ্যোগ নিতে পারেন।’
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারীদের বিরুদ্ধে ৮০ দশক থেকেই নানা সময় অভিযান চালিয়ে আসছে সে দেশের সেনাবাহিনী। কয়েক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে অবস্থান করছিল আগে থেকেই। তবে সাম্প্রতিক অভিযানের পর সীমান্ত মানবিক কারণে খুলে দেয় বাংলাদেশ এবং পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা এই দেশে প্রবেশ করে। তাদেরকে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক জনমত গঠনের চেষ্টা করছে সরকার। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে দেয়া ভাষণেও ইস্যুটি তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী। আর বিশ্ব জনমত এখন অনেকটাই মিয়ানমারের বিরুদ্ধে।
তোফায়েল বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে অনেকেরই স্বার্থ জড়িত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এটা নিয়ে কথা বলছে। আমরা আশা করছি, রোহিঙ্গাদের ফেরত দিতে পারব, তবে এটা কঠিন।’