আলতাফ হোসেন সরকার, রাজারহাট, কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা : কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার তিস্তা নদী তীরবর্তী মানুষদের মধ্যে এখন নদী ভাঙ্গনের আতংক বিরাজ করছে। নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে শতাধিক পরিবার। ভাঙ্গনকবলিতরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাস্তার পাশে আশ্রয় নিলেও ঠাঁই মিলছেনা সেখানেও। গত ৩দিনে তিস্তার ভাঙ্গনে বিলীন হয়েছে ৩০টি পরিবারের শতাধিক ঘর-বাড়ি। কয়েকদিনের মধ্যে দু’দফা ভাঙ্গন দেখা দেয়ায় উপজেলার বিদ্যানন্দের ডাংরারহাট এলাকায় মন্দির মৌজার ৩০টি পরিবার নদীগর্ভে বিলীন হয়। একই সাথে ওয়াপদা ভেঙ্গে আবাসন প্রকল্পের ২টি পরিবারও তিস্তা নদী গর্ভে ভেঙ্গে যাওয়ায় আতংকে রাত কাটাচ্ছেন ওইখানকার শতাধিক পরিবার।
ভাঙ্গনের খবর পেয়ে রাজারহাট উপজেলার নির্বাহী অফিসার এস.এম মাজহারুল ইসলাম ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুনুর মোঃ আক্তারুজ্জামান ভাঙ্গন কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেন। নদীতে বসতভিটা ভেঙ্গে যাওয়া আব্দুল বাতেন, জহির উদ্দিন ও নূর ইসলামসহ অনেকে জানান, প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে প্রতি বছর এভাবেই নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে প্রায় অর্ধ শতাধিক পরিবার। গত ৩ দিন তীব্র ভাঙ্গনে ওয়াপদা ভেঙ্গে আবাসন প্রকল্পের ২টি পরিবারসহ ৪০টি ঘর ভেঙ্গে গেলে পাউবো’র কর্তৃপক্ষের মাত্র ২৫০ বস্তা বালু প্যাকেটিং করে নদী ফেলার নির্দেশ দেয়। এতে কতটুকু ভাঙ্গন রক্ষা হবে ওই এলাকার নদীর তীরবর্তী প্রায় শতাধিক পরিবার আতংকে রাত কাটাচ্ছেন।
অন্যদিকে গত বৃহস্পতিবার পাড়া মৌলা মৌজার ওয়াপদা রাস্তাটি প্রায় ১০০ মিটার তিস্তার নদীগর্ভে ডেবে যাওয়ায় পার্শ্ববর্তী ৭টি পরিবারের ঘর-বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এদিকে ডাংরারহাট ৬নং স্পার বাধটি তিস্তা নদীর প্রবল স্রোতে প্রায় ৪০ গজ সামনের দিকে ডেবে যায়। স্পার বাধটি ভেঙ্গে গেলে পুরো গ্রাম নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন এলাকাবাসী। উপজেলার বিদ্যানন্দের ৯টি মৌজার মধ্যে চতুরা, রামহরি, মন্দির, পাড়ামৌলা, রতি, তৈয়বখাঁ ও চর বিদ্যানন্দ সহ সিংহভাগ মৌজা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। একের পর ভেঙ্গে যাচ্ছে বসতভিটা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার ও হাজার হাজার একর ফসলী জমি। উপজেলার বিদ্যানন্দের চতুরা মৌজার তসলিম উদ্দিন জানান, তার বসতভিটা ১২বার নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। একই মৌজার সোলায়মান আলী জানান, ৭বার তার বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় সরকারী কিংবা বেসরকারীভাবে কোন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী আবু তাহের জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে ও প্রবল বৃষ্টির কারণে নদী ভাঙ্গনের প্রবনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি জানান, এ বিষয়ে আমি ৩-৪টা প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছি। অতি শীঘ্রই বাজেট পেলে ওইসব ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় কাজ শুরু হবে।