স্টাফ রিপোর্টার, ১১ মার্চ, বিডিটুডে ২৪ডটকম : রপ্তানি আয়ের গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি খাত থেকে হারিয়ে যাচ্ছে হিমায়িত খাদ্য। ইউরোপের দেশগুলোতে বাংলাদেশের চিংড়ি রপ্তানি কমে যাওয়ায় পর পর দুইবছর রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।
চলতি (২০১২-২০১৩) অর্থবছরের প্রথম আট (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) মাসেও লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ কম রপ্তানি হয়েছে। এ খাতের উদ্যোক্তরা বলছেন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব আর বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবেই মূলত এমনটা হচ্ছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) হিমায়িত খাদ্য গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে রপ্তানি কমেছে ১৭ দশমিক ০৯ শতাংশ। এ সময়ে ৩৬ কোটি ৮৯ লাখ মর্কিন ডলার হিমায়িত খাদ্য রপ্তানি হয়েছে। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল সাড়ে ৪৪ কোটি ডলার।
হিমায়িত খাদ্যের মধ্যে মাছের রপ্তানি কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এ খাতের রপ্তানি আয় কমেছে ৫৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় কমে ৫১ দশমিক ৭২ শতাংশ।
তাছাড়া ২০১১-১২ অর্থবছরে হিমায়িত খাদ্যের রপ্তানি হয়েছিল হয়েছিল ৬৫ কোটি ৯৮ লাখ ডলার। এ সময় হিমায়িত খাদ্যের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬৭ কোটি ২৬ লাখ মার্কিন ডলার। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রপ্তানি কম হয় প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ মার্কিন ডলার বা ১৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
২০১০-১১ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৬২ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ কম।
এ বিষয়ে হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি কাজী শাহনেওয়াজ বাংলামেইলকে বলেন, গত দুই বছর পরপর হিমায়িত খাদ্যের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়নি। আর বর্তমানে চলছে ইউরোপীয় ইউনিয়নে অর্থনৈতিক মন্দা।
তিনি বলেন, আগে ইউরোপীয় দেশগুলো আমাদের কাছ থেকে ১৬/২০ সাইজের চিংড়ি বেশি আমদানি করত, যেগুলোর দাম পড়ে সাড়ে ৫ থেকে ৬ ডলার পর্যন্ত। কিন্তু এখন ইউরোপীয় দেশগুলোর মন্দার কারণে তারা ছোট আকারের চিংড়ির প্রতি ঝুঁকছে। যেগুলোর দাম সাড়ে ৩ থেকে ৪ ডলার।
কাজী শাহনেওয়াজ জানান, ভারত ও পাকিস্তানের ভেন্নামি নামের ছোট আকৃতির চিংড়ি রপ্তানি বেড়ে যাওয়ায় এ ধস দেখা দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের চিংড়ি রপ্তানির বাজার ধরে রাখতে আমরা ভারতীয় ভেন্নামি প্রজাতির চিংড়ি উৎপাদনের অনুমতি চেয়ে প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিএফআরআই) যোগাযোগ করেছি। প্রধানমন্ত্রী সুপারিশ করলেও অর্থমন্ত্রণালয়ে বিষয়টি আটকে আছে। ’
এছাড়া অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে এটার পরীক্ষামূলক একটি পাইলট প্রকল্প চালু করার কথা বলা হলেও বিএফআরআই তা বিভিন্ন অজুহাতে আমলে নিচ্ছে না। তাছাড় অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল ও ব্যাংক ঋণের সুদের হার ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণের কারণে চিংড়ি উৎপাদনে অনেকে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন বলে জানান তিনি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর নির্বাহী সচিব শহিদুজ্জামান ফারুক বলেন, হিমায়িত চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ রপ্তানি পাঁচ বছর ধরে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। তারপরও এ খাতটি প্রতিবছরই রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারছে না।
তিনি বলেন, এ খাতটির রপ্তানি আয় কীভাবে বাড়ানো যায় তার জন্য ইপিবির পক্ষ থেকে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ভেন্নামি জাতের চিংড়ি চাষের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখা হয়েছে। চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করে ওজন বাড়ানোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।