জালাল আহমদ, মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি, ১৬ সেপ্টেম্বর : ফের গৃহদাহের আগুনে জ্বলছে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি। কেন্দ্রীয় নেতাদের মাঠপর্যায়ে সফরে পাঠিয়েও নিরসন করা সম্ভব হয়নি গৃহদাহের। বরং কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রকাশ্যে সংঘাতে লিপ্ত রয়েছে নেতাকর্মীরা। নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ আর পাল্টাপাল্টি মামলায় বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে মৌলভীবাজারসহ জেলার সাতটি উপজেলায়। একাধিক মামলায় গ্রেফতার আতংকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান তনয় মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি এম. নাসের রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক খালেদা রব্বানীর মধ্যে দলীয়ভাবে আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে পর্যবেকমহল মনে করছেন। এই বিরোধের বিরূপ প্রভাব আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পড়বে এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এদিকে গত ২৬ আগস্ট দলের কর্মীসভায় সংঘর্ষের ঘটনায় উভয়পরে পাল্টাপাল্টি একাধিক মামলায় দলীয় নেতাকর্মীরা গ্রেফতার আতংকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সংঘর্ষের পর কেন্দ্রীয় বিএনপির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও মৌলভীবাজার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি খালেদা রব্বানী মৌলভীবাজার প্রেসকাবে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় নেতা শাজাহান মিয়ার আমন্ত্রণে কর্মীসভায় যোগদান করতে গেলে জেলা বিএনপির সভাপতি এম. নাসের রহমানের নির্দেশে তার অনুসারীদের ওপর হামলা চালানো হয়। এতে তাদের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়। কেন্দ্রীয় নেতারা বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য এলেও তাদের একগুঁয়েমির কারণে উসকে দেয়া হচ্ছে বিরোধ।
অপরদিকে নাসের রহমান পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, খালেদা রব্বানী ভাড়া করা লোক নিয়ে সভাস্থলে গোলমাল করার জন্য এসেছিলেন। এমন অবস্থা বুঝতে পেরে নেতাকর্মীরা তাকে আগে থেকে প্রতিহত করেছে। সংঘর্ষের দু’দিন পর নাসের রহমানের পরে নেতা ছাদিকুর রহমান বাদী হয়ে খালেদা রব্বানী গ্র“পের নেতা মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল করিম ময়ূনকে প্রধান আসামী করে ৩৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
পাল্টা হিসেবে খালেদা রব্বানী গ্র“পের নেতা জুনেদ আহমদ বাদী হয়ে হামলা ও ভাংচুরের অভিযোগে নাসের রহমানের অনুসারী বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরীকে প্রধান আসামী করে এবং জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল মুকিতকে আসামী করে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরদিন পৃথক আরও দু’টিসহ মৌলভীবাজার মডেল থানায় উভয়প থেকে ৪টি মামলা করা হয়। একই ঘটনায় মামলার হিড়িক পড়ায় এখনও যারা জামিন নিতে পারেননি সেইসব নেতাকর্মীরা গ্রেফতার আতংকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ আগস্ট মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিরোধ মেটানোর জন্য কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব শাজাহান মিয়ার নেতৃত্বে মৌলভীবাজার সফরে আসেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা: সাখাওয়াত হোসেন জীবন, কেন্দ্রীয় মহিলা বিষয়ক সম্পাদক খালেদা রব্বানী, জাসাস কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সম্পাদক দারাদ আহমদ। নেতৃবৃন্দ নাসের রহমানের অনুসারী নেতাকর্মীদের নিয়ে শহরতলীর রুমেল কমিউনিটি সেন্টারে সভায় বসেন। অপর অংশের নেতাকর্মীরা যোগদান করতে গেলে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে উভয় গ্র“প। এতে উভয়পরে প্রায় ৫০ জন নেতাকর্মী আহত হয়। এ সময় ৩টি গাড়ি ও ১৭টি মোটর সাইকেল এবং ওই কমিউনিটি সেন্টারে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেয়া হয়। ভাংচুর করা হয় আরও কয়েকটি কার এবং মোটর সাইকেল। ঘটনার পর শুরু হয় পাল্টাপাল্টি মামলা। সংঘর্ষের তিন সপ্তাহ পর পুনরায় তিনটি পাল্টাপাল্টি মামলা করা হয়। এ নিয়ে মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫টি। এসব মামলায় সহস্রাধিক বিএনপির নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছে। আদালত সূত্র জানায়, সর্বশেষ দায়ের করা মামলা তিনটির বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠাতে মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।