মোঃ আফজাল হোসেন ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : বাংলাদেশের জ্বালানীর চাহিদা মিটানোর জন্য বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি ওপেন মাইনিং পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করে কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলা দরকার। এতে সরকারের জ্বালানী মন্ত্রণালয়কে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন । বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি সুড়ঙ্গ পদ্ধতিতে কয়লা তোলা খনি ধ্বংস করে দেয়ার নামান্তর। উত্তর অঞ্চলেরর তথা সারা বাংলাদেশের জ্বালানীর চাহিদা মিটানোর জন্য তৎকালিন সরকার উত্তর অঞ্চলের দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ১৯৯৪ সালের ২৭শে জুন প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন শুরু হয় এর কার্যক্রম। ২০০৩ সালের ২৩শে এপ্রিল কয়লা খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের উদ্বোধন মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয়। ১৯৯৪ সালের ৭ই ফেব্রুয়ারি পেট্রোবাংলা গনচীনের চায়না ন্যাশনাল মেশিনারী ইনপোর্ট এন্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশনের মধ্যে খনির সকল কার্যক্রম করার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। শুরু হয় পুরোদমে সুড়ঙ্গ পদ্ধতিতে কয়লা তোলার কার্যক্রম । প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রথমে ৫শত কোটি টাকা থেকে প্রায় ১৪শত কোটি টাকা দাড়ায়। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সেই সময় কত কোটি টাকার পিপি অনুুমোদ দেয়া হয়ে ছিল তা যানা যায়নি। তবে সুত্র যানায় ১৪শত কোটি টাকা অধিক পরিমাণ ব্যয় হয়। সেই সময় প্রকল্প বাস্তবায়নে সুড়ঙ্গ পদ্ধতিতে কয়লা তুলতে গিয়ে অতিরিক্ত ব্যয় এবং খনিটি ধ্বংস করা ছাড়া আর কিছু নয়। কারণ সুড়ঙ্গ পদ্ধতিতে খনির ভূ-গর্ভ থেকে ১৫% কয়লা তোলা যায়। বাকী ৮৫ ভাগ কয়লা ভূ-গর্ভের নিচে থেকে যায়। এখন চিন্তা ভাবনা করে খনির উত্তর দিকে একাংশ থেকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতেই কয়লা তোলার চিন্তা ভাবনা করছেন জ্বালানী মন্ত্রনালয়। প্রাপ্ত সুত্রে জানাযায় উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তুলে প্রায় ১ হাজার মেগোওয়ার্ড নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করে সেখানে কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছেন জ্বালানী মন্ত্রনালয়। বর্তমানে চলতি বছর জ¦ালানী মন্ত্রনালয় তাপবিদ্যুৎ কেন্দে প্রায় ১হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে তৃতীয় ইউনিট নির্মান করা হয়েছে। যা পরীক্ষা মূলক চলছে। চলতি বছরের শেষের দিকে আনুষ্ঠানিক উদ্ভোধন হবে। তবে এই পদ্ধতিতে কয়লা তুলতে সরকারের ব্যয় হবে কম এবং ৯০ ভাগ কয়লা ভূ-গর্ভের নিচ থেকে তুলে আনা সম্ভব । বর্তমান ঐ পদ্ধতিতে কয়লা তোলার জন্য সরকার পানি ব্যবস্থাপনা, এলাকার পরিবেশ, এলাকার মানুষের বাসস্থান তৈরি করে পূর্নবাসন করতে হবে। সেদিকে সরকারের সঠিক চিন্তা ভাবনা করার দরকার। তবে সরকার কবে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের কাজ করবে তা জানা যায়নি। তবে কর্ম পরিকল্পনার কাজ চলছে এই পদ্ধতি নিয়ে কয়লা তোলাকে কেন্দ্রকরে রিতি মত সরকারের ভিতরে এবং বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনেক বিতর্ক রয়েছে। একাংশ এই পদ্ধতির ঘোর বিরোধী। সুড়ঙ্গ পদ্ধতিতে এই খনিটি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সাময়িক সরকার লাভ দেখলেও রাষ্ট্রের বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। বাকী কয়লা এই পদ্ধতিতে তুলতে থাকলে খনির ক্ষতি দিন দিন বৃদ্ধি পাবে এবং কোন দিন ঐ প্রকল্প থেকে বাকী কয়লা তোলা সম্ভব নয়। এতে দেশের প্রচুর অর্থনীতির ক্ষতি হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে এখনিই বড়পুকুরিয়ার কয়লা তোলা বন্ধ করা উচিৎ। আর হয়তো বা গুরুত্বের সাথে ওপেন পদ্ধতিতে কয়লা তোলার পদক্ষেপ নিতে হবে। বড়পুকুরিয়া খনিটির সুড়ঙ্গ পদ্ধতিতে কয়লা তুলতে নানা ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। খনিতে বিভিন্ন সময়ে একাধিক বিপর্যয় ঘটেছে। বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে এ পযর্ন্ত ১০লাখ টন কয়লা উত্তোলন হওয়ার প্রস্তুতি থাকলেও খনি কতৃপক্ষ প্রায় ৫০ থেকে ৬০লাখ টনের মত কয়লা উত্তোলন করেছেন। জাতীয় কমিটি বড়পুকুরিয়া খনি থেকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলার জন্য ইতিপূর্বে সুপারিশ করেছিলেন। জানা যায় দিনাজপুরের পূর্ব অঞ্চলের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ১১৮ থেকে ২৫০ মিটার গভীরতা থেকে যে পরিমান কয়লা উঠবে তা দিয়ে ১ হাজার মেগওয়াড বিদ্যুৎ কেন্দ্র হবে বলে জানাযায়।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিটির বিস্তার ৬.৬৮ বর্গ কিলোমিটার এই খনিতে ১১৮ মিটার থেকে সর্বোচ্চ ৫০৯ মিটার গভীরতায় কয়লা রয়েছে বলে খনি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। এই ছোট মাপের খনিটিতে ভূ-গর্ভের নিচে মুজদ কয়লার পরিমান প্রায় ৩৯কোটি টন বা তার বেশিও হতে পারে। বড়পুকুরিয়ার ভূ-গর্ভের সঞ্জিত কয়লা এত উন্নত যা ইন্দোনেশিয়া এবং ভারতেও নাই। এই কয়লা খনিটি দেশের একটি বিরাট সম্পদ। এই খনি উন্মুক্ত পদ্ধতিতে উত্তোলন না করা হলে হয়তো বা যে কোন সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কারন সুড়ঙ্গ পথে কয়লা তুলতে অনেক ঝুকি পূর্ন এবং বিপুল অর্থের ব্যয়। তবে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে অনেক বেশি কয়লা তোলা সম্ভব হওয়ায় আর্থিক ভাবে তা এত বেশি লাভজনক যে এলাকার মানুষকে পূর্নবাসন, পরিবেশ ব্যবস্থা সংরক্ষন করা। খনি বাস্তাবায়নের যাবতীয় খরচ মিটিয়ে বিপুল অঙ্কের সম্পদ লাভ করা যাবে। অপর দিকে কিছু ক্ষতিকারক দিক রয়েছে যেমন, পানি ব্যবস্থাপনা, ভূমি ধ্বস এবং এলাকার মানুষকে পূর্নবাসন এবং তাদেরকে ক্ষতিপুরন পুশিয়ে দিতে হবে এবং আবাদী জমির ক্ষতি হবে। দিনাজপুরের দিঘিপাড়া, রংপুরের খালাশপীর, পার্বতীপুরের বড়পুকুরিয়া, ফুলবাড়ী, ও জয়পুর হাটের জামালগঞ্জ ।
এই ৫টি খনিতে মোট কয়লার পরিমান রয়েছে ৩শত ৩০কোটি টন। অতিদ্রুত দেশের জ্বালানী খাতের চাহিদা মিটাতে দ্রুত উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কৌশল গত দিক অবলম্বন করে কারিগরি পরীক্ষা নীরিক্ষা চলছে। দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ায় উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলা যায় কিনা সে জন্য ভারতীয় একটি কোম্পানী ইতিমধ্যে নথ-সাউথ ২টি জোনকে ভাগ করে পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজ চলছে।
এ দিকে গতকাল ২৭ শে অক্টোবর শুক্রবার জ¦ালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতি মন্ত্রী নসরুল হামিদ দিপু ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. খালেদ মাহমুদ বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মানকৃত তৃতীয় ইউনিট ও দিনাজপুরের দীঘিপাড়া নতুন কয়লাখনির কার্যক্রম পরিদর্শন করতে আসছেন।