ডেস্ক রিপোর্ট : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আর নেই। ইন্নানিল্লাহি…রাজিউন। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় ৬টা ৩০ মিনিটে সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাঃস ত্যাগ করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
২ ফেব্রুয়ারি মওদুদ সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর ১০ মার্চ সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেয়া হয়।
সে সময় মওদুদের একান্ত সহকারী মমিনুর রহমান সুজন বলেছিলেন, ‘স্যারের ফুসফুসে গত ১২ দিন ধরে পানি জমা হচ্ছে, যার কারণে ফুসফুসে অক্সিজেন গ্রহণক্ষমতা একেবারেই কমে গেছে। পাশাপাশি তার কিডনি জটিলতাও দেখা দিয়েছে।’
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক উপ-রাষ্ট্রপতি। তিনি বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ৪ দলীয় জোট সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন।
মওদুদ আহমেদ নোয়াখালী জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪০ সালের ২৪ মে। তার বাবা মাওলানা মমতাজ উদ্দিন আহমেদ এবং মা বেগম আম্বিয়া খাতুন। ছয় ভাইবোনের মধ্যে মওদুদ চতুর্থ।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মিছিলে যোগ দিয়ে পুলিশি নির্যাতনের পর ঠাঁই তার হয়েছিল কারাগারে। এই ঘটনা মনের অজান্তেই তাকে করে তোলে রাজনীতি সচেতন। ঢাকা কলেজ ছাত্রসংসদের আপ্যায়ন সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় অ্যাডভোকেট ফরমান উল্লাহ খান প্রতিষ্ঠিত খেলাফত রব্বানীর ছাত্র সংগঠন ছাত্রশক্তির নেতা ছিলেন।
পেশাজীবী হিসেবে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর আইনজীবী, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, মানবাধিকার আইনজীবী হিসেবে নানা ভূমিকায় নিজেকে রেখেছিলেন রাজনীতির কক্ষপথেই। বিএনপি আর জাতীয় পার্টি গঠনে পালন করেছেন মুখ্য ভূমিকা। কারাভোগ করেছেন পাকিস্তান আমল, বঙ্গবন্ধু, এরশাদ, ওয়ান ইলেভেন ও মহাজোট সরকারের আমলে।
শিক্ষাজীবনে মওদুদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মান পাস করে ব্রিটেনের লন্ডনের লিঙ্কন্স্ ইন থেকে অর্জন করেন বার-অ্যাট-ল। দেশে ফিরে হাইকোর্টে ওকালতির একপর্যায়ে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শামিল হয়েছিলেন আইনি লড়াইয়ে।
বঙ্গবন্ধুর পক্ষে আইনি লড়াই করতে খ্যাতনামা ব্রিটিশ আইনজীবী স্যার টমাস উইলিয়ামস কিউসিকে বাংলাদেশে আনতে রেখেছিলেন ভূমিকা। ১৯৭১-এ ইয়াহিয়া খান আহূত গোলটেবিল বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠকের ভূমিকা ছাড়াও ব্যারিস্টার মওদুদকে পোস্টমাস্টার জেনারেল নিয়োগ করে মুজিবনগর সরকার। স্বাধীন বাংলাদেশের শুরুর দিকেও তাকে কারাভোগ করতে হয়েছে।