স্টাফ রিপোর্টার : টেলিভিশনের বদৌলতে জরুরি নিরাপত্তা বা অন্যান্য পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রে ৯১১ নম্বরটি অপরিচিত নয় বাংলাদেশেও। এই নম্বরে কল করলেই পাওয়া যায় পুলিশ বা ফায়ার সার্ভিসের সেবা। বাংলাদেশেও পুরোদমে চালু হচ্ছে একই ব্যবস্থা। এ ক্ষেত্রে নম্বর ঠিক করা হয়েছে ৯৯৯।
আগামী ৫ ডিসেম্বর সকালে ওসমানী মিলনায়তনে এই সেবাটির উদ্ধোধন করবেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়। এ জন্য চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে পুলিশে।
পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক সহেলী ফেরদৌস ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এই সেবাটি চালু হলে সাধারণ মানুষেরা তিনটি সংস্থার সেবা পাবে দ্রুত সময়ের মধ্যে। ফলে জনভোগান্তি অনেকটাই কমে আসবে বলে আমরা আশাবাদী।’
ব্রিটিশরা ন্যাশনাল হেল্পডেস্ক চালু করে ১৯৩৭ সালে, যুক্তরাষ্ট্রে তা চালু হয় ১৯৬৮ সালে। আর বাংলাদেশে এক বছর আগে ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে এই সেবাটি চালু করে সরকার। তখন ছয় মাস চালু ছিল এই সেবা। তখন সকাল সাতটা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কল করা যেত। তবে পুরোদমে চালু হলে ২৪ ঘণ্টাই কল গ্রহণ করা হবে।
ছয় মাসের অভিজ্ঞতার আলোকে ভুল ত্রুটিগুলো শুধরে নিয়ে ও নতুন নতুন যেসব সংযোজন-বিয়োজন দরকার ছিল, তা করে এই সেবাটি পুরোদমে চালু করার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সেবাটির তত্ত্বাবধানে রয়েছে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ।
পুলিশ জানিয়েছে, ৯৯৯ সেবার প্রশিক্ষিত প্রতিনিধিরা জরুরি মুহূর্তে প্রয়োজন অনুযায়ী ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ বা অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদানকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেবেন। এ জন্য গত এক বছরে অপারেটরদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
সেবা গ্রহণে যেসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ
সঠিক ও মানসম্মত সেবা দিতে এজেন্টরা কিছু প্রযুক্তিগত সহায়তা পেয়ে থাকেন। তবুও যখন কোন নাগরিক ৯৯৯ এ কল করবেন বেশকিছু বিষয় খেলা রাখা প্রয়োজন।
জরুরি সেবা পাওয়ার জন্য সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তাপ্রার্থীর ঠিকানা জানা। অপারেটরকে (এজেন্ট) যতটা সম্ভব সঠিক অবস্থান বলতে হবে।
সাহায্যপ্রার্থীর সঠিক অবস্থান না জানা থাকলে পার্শ্ববর্তী বড় রাস্তা, বাজার বা মহাসড়কের নাম বলা যাবে।
আবার ৯৯৯ নম্বরে কল করলে সেখান থেকে কল ব্যাক করা হতে পারে জানিয়ে পুলিশ যে নম্বর থেকে কল করা হয়েছে, সেটি চালু রাখার পরামর্শ দিয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস বা অ্যাম্বুলেন্স কর্তৃপক্ষও সাহায্যপ্রত্যাশীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে বলেও নম্বরটি চালু রাখা জরুরি।
প্রশ্নের সঠিক উত্তর
অপারেটর বা জরুরি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান (পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস বা অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ) সেবা গ্রহীতাকে কিছু প্রশ্ন করবেন। তারা যথাযথ কর্মকর্তা বা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজন জানাবেন অথবা জীবন রক্ষাকারী কিছু পরামর্শ বা করনীয় সম্পর্কে জানাতে পারেন।
এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য একই প্রশ্নের উত্তর একাধিকবার দেয়া হতে পারে। বিশেষ করে ৯৯৯ থেকে কল ট্রন্সফার হয়ে পুলিশ বা ফায়ার সার্ভিস বা হাসপাতালে পাঠানো হলে এমনটা হতে পারে।
ধৈর্যশীল থাকা
কলের সময়ে শান্ত থাকতে হবে এবং সমস্যা বিস্তারিত তুলে ধরতে হবে। ভাবাবেগে আক্রান্ত হয়ে অপ্রয়োজনীয় কথা চলবে না। এতে অপাটেরের মূল সমস্যাটা ধরতে অসুবিধা হতে পারে।
জরুরি পরিস্থিতি ব্যাখা করা
জরুরি পরিস্থিতি ব্যাখার সময়ে কয়েকটি বিষয়ে সর্তক থাকার পরামর্শ দিয়েছে উদ্যোক্তারা। এর মধ্যে আছে সেবাগ্রহীতা নিজে নাকি কাছের কেউ সমস্যায় পড়েছেন, কীভাবে ঘটনাটি ঘটল, কোন ধরনের জরুরি সেবার প্রয়োজন, পুলিশ নাকি অ্যাম্বুলেন্স লাগবে? কেউ আহত হলে তার অবস্থা কেমন, ব্যক্তির অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক কি না, তার চেতনা আছে কি? তিনি নিঃশ্বাস নিতে পারছেন কি না, তার শরীর থেকে রক্ত বের হচ্ছে কি না?
সাহায্যপ্রার্থী নিজে বিপদে পড়লে অসুবিধা হলে পাশের কাউকে দিয়ে কথা বলানোর পরামর্শও দেয়া হয়েছে ৯৯৯ এ সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে।
পুলিশের সেবা যেভাবে মিলবে
পুলিশি সাহায্যের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিকটস্থ থানায় গিয়ে অভিযোগ করতে হয়। লিখিত অভিযোগ ছাড়া অনেকক্ষেত্রে পুলিশ তদন্ত শুরু করতে পারে না।
তবে জরুরি পুলিশি সেবার ক্ষেত্রে ৯৯৯ অপারেটর সাহায্যপ্রার্থীকে টিকটস্থ থানায় যোগাযোগ করিয়ে দেবে।
কোনো অপরাধ ঘটতে দেখলে নিরাপদ অবস্থানে থেকে ৯৯৯ এ কল করার পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ। অপরাধীকে চিনে থাকলে তা জানানো বা কাউকে সন্দেহ হলে কী কারণে সন্দেহ করছেন তা জানানোর পরামর্শ দিয়েছে বাহিনীটি।
অপরাধী দেখতে কেমন, তার বয়স, উচ্চতা, কাপড়ের রঙ প্রভৃতির তথ্য দেয়ার চেষ্টা করার পরামর্শ দিয়েছ পুলিশ। আবার অপরাধী পালিয়েছে কি না, গেলে কোন দিকে গেছে, তাদের কোন গাড়ি ছিল কি না, থাকলে কোন ধরনের গাড়ি?, গাড়ির মডেল, রঙ এবং আকার কতটা সে দিকে লক্ষ্য রাখা এবং সম্ভব হলে গাড়ির নম্বর টুকে রাখতে বলেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটি।
মিলবে ফায়ার সার্ভিসের সেবা
অগ্নি নির্বাচন ছাড়াও ফায়ার সার্ভিস সড়ক দুর্ঘটনা, নৌ দূর্ঘটনা, আটকে পড়া মানুষ বা পশু,পাখি উদ্ধার করে থাকে। এই ধরনের সেবার প্রয়োজন হলেও ৯৯৯ এ ফোন করা যাবে।
অ্যাম্বুলেন্স সেবা বিনামূল্যে নয়
৯৯৯ নম্বরে মাধ্যমে যে অ্যাম্বুলেন্স সেবা পাওয়া যাবে তা বিনামূল্যে দেয়া হবে না। অপারেটররা কেবল বিভিন্ন অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাকে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। ফলে অ্যাম্বুলেন্সের ধরন, গন্তব্যস্থল ইত্যাদি অনুযায়ী ভাড়ার পরিমাণ নির্ধারিত হয়। তাই অ্যাম্বুলেন্স সেবা চাইতে এসব তথ্য অপারেটরকে সঠিকভাবে জানাতে হবে।
তবে ৯৯৯ থেকে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করা হবে না।
অকারণে ফোন না করার অনুরোধ
৯৯৯ নম্বরে অকারণে হয়রানিমূলক বিশেষ করে শিশুরা যেন অকারণে ফোন না করে সে দিকে নজর রাখার তাগিদ দিয়েছে সেবাদাতারা। অকারণে ফোন করলে প্রকৃত বিপদগ্রস্থরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন বলে জানিয়েছেন তারা। শিশুদেরকেও ৯৯৯ এ অকারণে ফোন করার ক্ষতির বিষয়টি বুঝিয়ে বলা আর কোনটা জরুরি পরিস্থিতি, সেটিও তাদেরকে জানানোর পরামর্শ দিয়েছে সেবাদাতারা।
হয়রানিমূলক কল হলে আইনি ব্যবস্থা
রেফারেন্সের জন্য ৯৯৯ এ কল রেকর্ড করা হবে জানিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে কেউ মজা করতে বা হয়রানি করতে বা কাউকে ফাঁসাতে ফোন করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আবার অসর্তকতার কারণে যেন ৯৯৯ এ কল না যায় সেজন্য মোবাইল ফোন লক করে রাখার পরামর্শও দিয়েছে পুলিশ