স্টাফ রিপোর্টার : মাসের শেষ পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর। বীরভূম জেলায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিধন্য এলাকায় প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়েও যাবেন তিনি। আর তাকে বরণে সেখানে নেয়া হয়েছে সাজ সাজ রব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সবুজকলি সেন বলেন, ‘প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কোনও প্রধানমন্ত্রী শান্তিনিকেতন আসছেন। যে কারণে বিশ্বভারতীতে সাজ-সাজ রব। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বরণে ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতিও হাতে নেয়া হয়েছে।’
সবুজকলি সেন জানান, সফরে গিয়ে বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন করবেন শেখ হাসিনা। এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ম্যুরালও উম্মোচন করবেন তিনি।
বাংলাদেশ ভবনে অত্যাধুনিক প্রেক্ষাগৃহ রয়েছে, যেখানে বছরভর নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
‘তা ছাড়া রয়েছে প্রদর্শনী কক্ষ। বড় একটি পাঠাগারও তৈরি করা হয়েছে। যেখানে দুই বাংলার সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও স্বাধীনতা সংগ্রামের কাহিনি সংক্রান্ত নানা বইপত্র থাকবে।’
এই সফরে প্রধানমন্ত্রীকে সম্মান সূচক ডি-লিট দিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের চুরুলিয়ার কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়। এই ডি-লিট ডিগ্রি নিতে ২৪ মে বর্ধমান যাবেন শেখ হাসিনা। তার পরদিন রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত শান্তিনিকেতন যাবেন তিনি।
মোদি-হাসিনা সাক্ষাতে তিস্তার জট খুলবে?
তবে এই সফরকে ঘিরে প্রধান আগ্রহ থাকবে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ নিয়ে।
২৫ মে বিশ্বভারতীতে বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধনে থাকবেন মোদিও। এই বৈঠেকে তিস্তার জট খুলে কি না, সেদিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ।
চলতি বছর জাতীয় নির্বাচনের আগেই তিস্তা চুক্তি করার বিষয়ে অঙ্গীকার আছে ভারতের। আর ভোটের মাস ছয়েক আগে পশ্চিমবঙ্গে তিস্তা চুক্তির বিরোধিতাকারী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের রাজ্যে এই সাক্ষাৎকার নিয়ে আছে আগ্রহ।
ভারতের কূটনীতিক মহলের কেউ কেউ বলছেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নকে সম্প্রতি আরও বিশেষভাবে জোর দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে আলাদাভাবেই গুরুত্ব দিচ্ছে তার সরকার।
যে কারণে ধারণা করা হচ্ছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর শান্তিনিকেতন সফরের সময় দুই দেশের শীর্ষ প্রধানের সম্ভাব্য বৈঠকে তিস্তা চুক্তিসহ দ্বিপাক্ষিক আরও বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার ও স্থিতিশীল রাখতে তিস্তা চুক্তি ভারতের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের সুযোগসহ বেশ কিছু সুবিধা দিয়েছে ভারতকে। তার ভারতেই রাজ্যের বিরোধিতার দোহাই না দিয়ে তিস্তা চুক্তি করার বিষয়ে পত্রিকায় লেখালেখি করছেন কোনো কোনো কলামিস্ট।
তিস্তাসহ কয়েকটি বড় বিষয় অমীমাংসিত থাকলেও বাংলাদেশের সঙ্গে বৃহৎ প্রতিবেশি ভারতের সম্পর্ক শিখরদেশ ছুঁয়েছে। স্বাধীনতার পর এত দীর্ঘসময় এমন ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এর আগে পার করেনি দুই দেশ।
শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বাংলাদেশকে ব্যবহার করে কার্যক্রম চালানোর অবৈধ সুযোগ সমূলে বন্ধ করে দেয়। এছাড়া উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়নে বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহার করে মালামাল আনা নেয়ার সুবিধাও পেয়েছে দেশটি।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ভারত নিয়মিত পণ্যের আনা-নেয়াও করছে। এতে করে ওই রাজ্যগুলোতে আর্থ-সমাজিক-বাণিজ্যিক পরিবর্তন হচ্ছে।
ত্রিপুরার খুব কাছের ভৈরব নদীবন্দরও ব্যবহার করছে দেশটি। ভারতও বাংলাদেশের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময় করেছে যাতে ১০ হাজার একর ভূমি বেশি পেয়েছে বাংলাদেশ। নির্ধারিত হয়েছে সমুদ্র সীমা। কমে এসেছে সীমান্ত হত্যা।
তবে বাংলাদেশের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তিস্তা চুক্তি এখনও না হওয়ায় অস্বস্তিতে রয়েছে বাংলাদেশ।
তিস্তা নিয়ে ভারত বরাবরই তার রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের আপত্তির কথা বলে আসছে। যদিও আলোচিত চুক্তিটি হবে ঢাকা-দিল্লির। কিন্তু দেশটির যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় রাজ্যকে পাশ কাটিয়ে ওই রাজ্যসংশ্লিষ্ট কোনও বিষয়ে চুক্তি করতে পারে না দেশটি। তিস্তা আন্তর্জাতিক নদী হওয়ায় স্বাধীন দুইটি দেশের মধ্যে এই চুক্তি সম্ভব।