স্টাফ রিপোর্টার : দেশের তৈরি পোশাক খাতের কারখানার শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে শ্রমিক ও মালিকপক্ষের মধ্যে ব্যাপক মতপার্থক্য দেখা যাচ্ছে। ন্যূনতম এই মজুরি নিয়ে কাজ করছে সরকারের একটি উচ্চ পর্যায়ের মজুরি বোর্ড। এই বোর্ডের সদস্যরা এরই মধ্যে কয়েক দফা বৈঠকও করেছেন।
কারখানার মালিকরা ন্যূনতম মজুরি ৩,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩,৬০০ টাকা করার প্রস্তাব করেছেন। কিন্তু শ্রমিকরা দাবি করেছেন ৮,১১৪ টাকা। তবে বিশ্লেষকরা বলেছেন পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হওয়া উচিত ৬,৫০০ টাকা।
সম্প্রতি রানা প্লাজার দুর্ঘটনায় পোশাক শ্রমিকের মৃত্যুর পর আন্তর্জাতিক চাপ এবং বিদেশে বাংলাদেশি পোশাকের বাজার ধরে রাখতে তৈরি পোশাক খাতে নতুন করে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়। এই বোর্ড ২১ অক্টোবর ন্যূনতম মজুরি চূড়ান্ত করবে। সর্বশেষ ২০১০ সালে পোশাক শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম ৩,০০০ টাকা মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছিল।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফেডারেশনের আহ্বায়ক ও মজুরি বোর্ডের সদস্য সিরাজুল ইসলাম বলেন, পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৮,১১৪ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছেন। ২০১০ সালে যে মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছিল তা ছিল প্রাপ্য মজুরির চেয়ে কম বলে।
শ্রমিকদের দাবি, গত ৩ বছরে মুদ্রাস্ফীতি, জীবনযাপন ব্যয়, বাসা ভাড়া, চিকিৎসা এসব মিলিয়ে কোনোভাবেই তাদের প্রস্তাবিত মজুরির কমে একজন পোশাক শ্রমিকের টিকে থাকা সম্ভব নয়।
এদিকে পোশাক প্রস্তুতকারী মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাব করছে ৩,৬০০ টাকা। তারা ন্যূনতম মজুরি মাত্র ৬০০ টাকা বাড়াতে প্রস্তুত। তাদের কথা গত ৩ বছরে যে মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে তার হিসাব ধরেই তারা এই প্রস্তাব করেছেন।
বিজিএমইএর এক নেতা বলেন, এরচেয়ে বেশি মজুরি বাড়ানো তাদের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। মালিকদের আয় বাড়েনি বরং কমেছে। তাই তারা বাড়তি মজুরি দেবেন কোথা থেকে।
বিজিএমইএ নেতার এমন কথার জবাবে শ্রমিকনেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, গার্মেন্টস মালিকরা অতি মুনাফা করছেন। তারা সেই মুনাফা ছাড়তে চাইছেন না। তাই তারা মজুরি বাড়ানোর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। তাই পোশাক শ্রমিকরা তাদের প্রাপ্য মজুরি আদায়ে দেশে ও বিদেশে প্রচার চালাবেন। তারা আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছে যাবেন, কথা বলবেন আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন এবং নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে।
এ প্রসঙ্গে মজুরি বোর্ড-২০১০ এর চেয়ারম্যান ইকতেদার আহমেদ, শ্রমিক ও মালিকদের ন্যুনতম মজুরি নিয়ে একটি মাঝামাঝি অবস্থানে আসতে হবে। তিনি বলেন মালিকদের কথিত মুদ্রাস্ফীতির হিসাব ধরে মজুরি নির্ধারণ হয় না। ন্যুনতম মজুরি নির্ধারণে আরো অনেক বিষয় বিবেচনায় নিতে হয়।
তিনি এক বিদেশি গনমাধ্যমকে জানান, ২০১০ সালে ৩,০০০ টাকায় যে জিনিস কেনা যেত এখন কি তা ৩,৬০০ টাকায় কেনা সম্ভব? বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু গড় আয় ১,০৪৪ ডলার – যা কম বেশি ৮০,০০০ টাকা। সেই বিচেনায় শ্রমিকদের মাসিক ন্যুনতম মজুরি হওয়া উচিত ৬,৫০০ টাকা।
একটি পোশাক ১০ ডলার দিয়ে তৈরি করে তা বিক্রি করা হচ্ছে ২৫ ডলারে। তাহলে শ্রমিকদের লাভের অংশ কেন দেয়া হবে না। তার মতে মালিকদের অতি মুনাফার মনোভাব ছাড়তে হবে। শ্রমিকদের জীবনযাপনের উপযোগী ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করতে হবে। এক্ষেত্রে মালিকদের গো ধরলে ঠিক হবে না বলে মনে করছেন শ্রমিকনেতাসহ দেশের সুশীল সমাজ। সূত্র: ডয়চে ভেলে।