এম.এ রহিম, পীরগঞ্জ (রংপুর) : রংপুরের পীরগঞ্জে সরকারি ঘর বরাদ্দ আর সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসুচীর আওতায় বিভিন্ন ভাতার কার্ড করে দেয়ার নামে সঞ্জয় দাস ওরফে ভক্ত (৫০) নামে এক ব্যক্তি কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে সখ্যতার সুযোগে দরিদ্র-অসহায় অসংখ্য পরিবারকে প্রতারনার ফাদে ফেলে ওই টাকা হাতিয়ে নেয়।
উপজেলার মিঠিপুর ইউনিয়নে ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারে চলছে আহাজারি।
অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার মিঠিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম ফারুক আহমেদের সাথে সঞ্জয় সাহা ভক্ত নামে এক ব্যাক্তি সখ্যতা গড়ে তোলে। এই সুযোগে ‘ভক্ত’ ইউনিয়নটির বিভিন্ন গ্রামের সরলমনা মানুষদেরকে সরকারের ‘জমি আছে, ঘর নেই’ প্রকল্পে ঘর বরাদ্দ এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসুচীর আওতায় বিধবা, বয়ষ্ক, স্বামী পরিত্যাক্তা ভাতার কার্ড করে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। ই
উনিয়নটির বিভিন্ন গ্রাম থেকে ভক্তের বিরুদ্ধে প্রতারনার অভিযোগ পাওয়ার পর ওই চেয়ারম্যান ভক্তের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে। এরপরই প্রতারনার শিকার পরিবারগুলো মুখ খুলতে শুরু করেছে।
সরেজমিনে খোজ নিয়ে জানা গেছে, ঘর নির্মান করে দেয়ার কথা বলে সঞ্জয় সাহা ভক্ত মিঠিপুর ইউনিয়নের নন্দরাম ফতেপুর নয়াপাড়ার ওমর ফারুকের কাছে ৩৫ হাজার টাকা, মিঠিপুরের আঃ রশিদের ১৫ হাজার ও ফজলুর রহমান বাবুর ১০ হাজার; মিঠিপুর খিয়ারপাড়ার মোস্তাফিজারের ৩০ হাজার, একবারপুর কাঠালপাড়ার রবিউলের ৯ হাজার, নন্দরাম ফুতেপুরের আরমানের ৪৩ হাজার, আল-আমিনের ৩৫ হাজার, হাফিজুরের ১৫ হাজার, শফিকুলের ১৫ হাজার টাকা, কুতুবপুর কবিরাজপাড়ার জুয়েলের ৩৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। ভুক্তভোগী নন্দরাম ফতেপুরের আরমানের স্ত্রী রাজিয়া জানায়, সরকারি ঘর করে দেয়ার কথা বলে ‘ভক্ত’ আমাদের বাড়িতে এসে ৪৩ হাজার টাকা নিয়েছে। সে আরও জানায়, আমার দেবর রবিউল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা বেগমও ভক্তকে ২৫ হাজার টাকা দিয়েছে। ঘর নির্মান করে না দেয়ায় রবিউল তার স্ত্রীকে শ্বশুরবাড়ীতে পাঠিয়ে দিয়েছে। এখন তাদের সংসার ভাঙ্গার পথে।
এদিকে বয়স্ক ও বিধবা ভাতার কার্ড দেয়ার কথা বলে ‘ভক্ত’ কুটিপাড়াসহ কয়েকটি গ্রামে হাজার হাজার টাকা নিয়েছে। বিধবা ভাতা করে দেয়ার জন্য ‘ভক্ত’ নয়াপাড়া নন্দরামের রাবেয়া বেগমের কাছে ৬ হাজার টাকা, বয়ষ্ক ভাতার জন্য একবারপুর কাঠালপাড়ার জয়নালের ৩ হাজার, নন্দরাম ফতেুপুরের আয়শার ৩ হাজার টাকা এবং মৎস্য খামার প্রকল্পের ঋণ করে দেয়ার নামে ৯নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য দেলদার হোসেনের কাছে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। নন্দরাম ফতেপুরের মৃত. শাহজাহানের বিধবা স্ত্রী খৈমন বেগম (৫৭) ডুকরে কেঁদে বলেন, মরা (স্বামী মারা যাওয়ায় বিধবা কার্ড) কাট দিবার কথা কয়া মোরটে ৬ হাজার ট্যাকা নেচে। মুই মানুষের কাছে চায়া-মাংগি ট্যাকা আনি দিচো। ভক্ত বদটা এখন কাটও দেয় না, ট্যাকাও দেয় না। তার মতো অনেকেই আহাজারি করছেন।
এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান এসএম ফারুক আহমেদ বলেন, ভক্তের নামে আর্থিক কেলেংকারি ও অসংখ্য প্রতারনার অভিযোগ পেয়ে তাকে আমি বের করে দিয়েছি। এ খবর ইউনিয়নে ছড়িয়ে পড়লে প্রতারনার শিকার পরিবারগুলো টাকা ফেরত পেতে তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে।