ছাদেকুল ইসলাম রুবেল, গাইবান্ধা : পীরগঞ্জে কাশিমপুর দাখিল মাদ্রাসায় কোনও মহিলা শিক কর্মচারি নেই আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার কাশিমপুর দাখিল মাদ্রাসায় কোনও মহিলা শিক বা কর্মচারি নেই। অথচ সরকারি বিধান রয়েছে, শতকরা তিরিশ ভাগ কোটা শিক-কর্মচারি মহিলা নিয়োগের। মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সুপার শওকত আলী ফতোয়া দিয়েছিলেন মহিলাদের নিয়োগ দেয়া যাবে না। তিনি অবসর গ্রহণের পরেও তার সেই ফতোয়া আজ অবধি পালন করা হচ্ছে। সম্ভবত দেশের মধ্যে এটি একমাত্র ব্যতিক্রম। তারপরেও দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে ওই মাদ্রাসায় নিয়মিত সরকারি বেতন ভাতা উত্তোলন করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠালগ্নে প্রতারণা দিয়েই শুরু। মসজিদের নামে মৃত হাজী দিদার আলীর দানকৃত ২৩ শতাংশ জমিকে মাদ্রাসার জমি হিসেবে দেখিয়ে সদরা কুতুবপুর সিনিয়র মাদ্রাসার মাত্র সিকি কি.মি. দূরে কাশিম দাখিল মাদ্রাসার নামে ওই মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। নিজে সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর অবসর নিয়ে জামাতা আব্দুর রউফকে সুপার হিসেবে নিয়োগ করেন। শওকত আলী তার প্রথম পুত্র মোস্তফা সাইফুল ইসলাম, দ্বিতীয় পুত্র সাদা মিয়া, তৃতীয় পুত্র আনোয়ারুল ইসলাম, চতুর্থ পুত্র শরিফুল ইসলাম, অপর জামাতা রফিকুল ইসলাম এবং ভাগ্নি জামাতা আব্দুল ওয়াহেদকে ওই মাদ্রাসায় নিয়োগ দিয়ে এটিকে পারিবারিক মাদ্রাসা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।জানা গেছে, নিয়োগপ্রাপ্ত শিকদের অধিকাংশ শিক নিবন্ধনই ভুয়া। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আজ অবধি সব ক’টি নিয়োগ দেয়া হয়েছে অত্যন্ত গোপনে এবং ঘরে বসেই। নিজে সভাপতি সেজে এলাকার কতিপয় আজ্ঞাবহদের নিয়ে পকেট কমিটি গঠন পূর্বক মাদ্রাসাটি পরিচালনা করেন এলাকায় পীর হিসেবে খ্যাত শওকত আলী কাশিমপুরী। দারুল আমান কমপেক্স সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে ভেতরে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সব ক’টি প্রতিষ্ঠানের কোনও ভিত্তি নেই। বিশেষ উদ্দেশ্য হাসিলের ল্েয স¤পূর্ণ ভুয়া তথ্য আর রেকর্ড পত্রে গড়ে তোলা হয়েছে এসব প্রতিষ্ঠান। দাখিল মাদ্রাসায় কোনও ছাত্রছাত্রী না থাকলেও মাদ্রাসা সংলগ্ন এতিমখানা ও লিলাহ বোডিং এর আবাসিক অনাবাসিক শিার্থীদের ছাত্র হিসেবে দেখানো হয়। এ ছাত্রদের এতিম হিসেবে তালিকাভুক্ত করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রতি বছর কেপিটেশন গ্রান্ড বাবদ ৬ লাধিক টাকা উত্তোলন করেন তিনি।একটি সূত্র দাবি করেছে, এতিমখানায় মাত্র ২৩ জন প্রকৃত এতিম রয়েছে। অথচ প্রতি বছর ৫০ জন এতিমের নামে বরাদ্দকৃত ৬ লাধিক টাকা উত্তোলন পূর্বক পকেটস্থ করা হচ্ছে। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার সহযোগিতায় প্রতি বছর নিয়মিত এ অর্থ উত্তোলন করা হচ্ছে নির্বিঘ্নে। স্থানীয় ধর্মভীরু ব্যক্তিদের বাগিয়ে নিয়ে এতিমখানা প্রতিষ্ঠার নামে তাদের কাছে মোট ১১ বিঘা জমি দানপত্র করে নিয়ে সম্পূর্ণ জমি আত্মসাত করা হয়েছে। সূত্র মতে, এতিমখানার নামে আব্দুল খালেক মিয়ার দানকৃত ১৫২ দাগে ২১ শতাংশ জমিতে নিজে বাড়ি করে বসবাস করছেন। এতিমখানার পৃথক একটি ৫৮ শতক জমিতে বড় ছেলে মোস্তফা সাইফুল ইসলামকে বাড়ি করে দিয়েছেন এবং ওই জমির মধ্যে সোহরাব, মিজানুর ও আবু বক্কর এর কাছে ৪২ শতক বিক্রি করে স¤পূর্ণ টাকা আত্মসাত করেছেন। এতিমখানার নামে হাজী কপিল উদ্দিনের দানকৃত ২নং খতিয়ানভুক্ত ৭৪ দাগে মোট ১৭ শতক জমি কাশিমপুর গ্রামের মৃঃ ইসমাইল হোসেনের পুত্র আজিজার রহমানের কাছে বিক্রি করেছেন। এসব ব্যাপারে সরেজমিন তদন্ত হলে দুর্নীতি অনিয়মের আরও অনেক চমকপ্রদ তথ্য বেরিয়ে আসবে বলেও সূত্রটি দাবি করেছে। বিষয়টিতে সংশিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আশু হস্তপে দাবি করেছেন এলাকাবাসী।