স্টাফ রিপোর্টার : সাংবাদিক উৎপল দাস নিখোঁজের প্রায় দুই মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর তার পরিবারের সঙ্গে এখন আর যোগাযোগই করছে না পুলিশ। এতে তার স্বজনদের মধ্যে ধারণা জন্মেছে তাকে উদ্ধারে পুলিশের আর কোনো তৎপরতা নেই।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মোবাশ্বার হাসান সিজারও ফেরেননি এক মাসেও। তার পরিবারের সঙ্গেও পুলিশ বা র্যাবের যোগাযোগ নেই। যদিও পুলিশের দাবি, তারা মাঝেমধ্যে ফোন করে, কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে না।
দুই জনেরই হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যাওয়া নিয়ে তুমুল আলোচনা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং গণমাধ্যমে। দুই জনের ক্ষেত্রেই পুলিশ-র্যাবের দৃশ্যমান তৎপরতা ছিল শুরুতে। দুই জনের স্বজনদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। কিন্তু সে ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়েছে। উৎপলের পরিবারের সঙ্গে এখন আর যোগাযোগ নেই তদন্ত কর্মকর্তাদের।
১০ অক্টোবর রাজধানীর মতিঝিলে কর্মস্থল পূর্বপশ্চিমবিডি ডট নিউজ এর অফিস থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন অনলাইন সংবাদ মাধ্যমটির জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক উৎপল দাস। দুই দিন পর মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি করে পূর্বপশ্চিমবিডি কর্তৃপক্ষ। আরেকটি ডায়েরি করা হয় তার পরিবারের পক্ষ থেকে।
উৎপলের পরিবারের দাবি, কারও সঙ্গে এই তরুণের কোনো দ্বন্দ্ব বা শত্রুতা ছিল না। শুরু থেকেই তার নিখোঁজের ঘটনাটিকে রহস্যজনক বলা হচ্ছে।
উৎপল দাসের বাবা চিত্তরঞ্জন দাস বলেন, ‘আমার ছেলে কোথায় আছে তা আমরা কেউ জানি না।’ তিনি বলেন, ‘উৎপল নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারে থানায় একটি জিডি করেছিলাম। প্রথমদিকে পুলিশ ফোনে কমবেশি যোগাযোগ করতেন। এখন আর কেউই কোন যোগাযোগ করেন না।’
‘যেদিন আমরা ক্রাবে (ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন) সংবাদ সম্মেলন করেছিলাম ওইদিন একজন সাংবাদিক আমাদের উত্তরায় র্যাবের সদর দপ্তরে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু র্যাবের পক্ষ থেকেও কেউ এখন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন না। আমরা ফোন করলে বলে আমরা আমাদের কাজ করছি।’
জানতে চাইলে র্যাবের সদর দপ্তরের জেষ্ঠ্য সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান ভূঁঞা বলেন, ‘বিষয়টি (উৎপলের নিখোঁজ হওয়া) খুব সেনসেটিভ। তাই ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা না বলে কোন মন্তব্য করা ঠিক হবে না ‘
যে থানায় উৎপলের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছিল সেই মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘সাংবাদিক উৎপলের কোন খবর পাওয়া যায়নি। আমরা কাজ করছি।’
আপনারা উৎপলকে খুঁজে বের করতে কী করছেন- এমন প্রশ্নে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা তদন্তাধীন বিষয়। কোন তদন্তাধীন বিষয়ে মন্তব্য করা বা কথা বলা ঠিক নয়।’
সিজারের পরিবারও হতাশ
গত ৭ নভেম্বর বিকাল থেকে নিখোঁজ নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মুবাশ্বার হাসান সিজার। সেদিন সকালে রামপুরার বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন তিনি। পরে আর বাসায় ফেরেননি। এ ঘটনায় সিজারের বাবা মোতাহার হোসেন খিলগাঁও থানায় একটি জিডি করেন।
প্রায় এক মাসেও ছেলের সন্ধান না পেয়ে চরমভাবে হতাশ হয়ে পড়েছেন সিজারের বাবা মোতাহার হোসেন। তিনি বলেন, ‘এখন আমার ৬৮ বছর বয়স। কী করব বুঝতে পারছি না। তবে এটা আমাদের সোভাগ্য যে আপনারা ফোন করেন খোঁজ খবর নেন।’
সিজারের মেয়ে কেমন আছে জানতে চাইলে মোতাহার বলেন, ‘মেয়েটি তার মায়ের সঙ্গে থাকে। আমি মাঝে মধ্যে তার খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য গতকালই ফোন করেছিলাম। ফোন ধরতেই অপরপ্রাপ্ত থেকে বলে, ‘কে বাবা?’।”
সিজারের অন্তর্ধানের বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি হয়েছিল রাজধানীর খিলগাঁও থানায়। তদন্তে অগ্রগতি কতটুকু- জানতে চাইলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, ‘সিজারের ব্যাপারে আমাদের কাজ চলছে। তবে নতুন কোন আপগ্রেড নেই। তার পরিবারের কেউ এখন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন না। আমিই মাঝে মধ্যে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করি খবর রাখি।