স্টাফ রিপোর্টার, ১৭ মার্চ, বিডিটুডে ২৪ডটকম : ১৮ দলের ডাকা সোম ও মঙ্গলবারের হরতালপূর্ব সম্ভাব্য সহিংসতা ঠেকাতে রাজধানীতে নেমেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। রোববার রাত ৮টা থেকে বিভিন্ন রাস্তায় টহল দিতে শুরু করেছেন বিজিবি সদস্যরা। এর আগেই জামায়াত-শিবিরের নাশকতা প্রতিরোধে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছে পুলিশ।
হরতালের সমর্থনে রাজধানীতে দুপুরের পর থেকে বাসে আগুন দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে চলেছে হরতাল সমর্থকরা। তবে যে কোনো ধরনের নাশকতা ঠেকাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে আছে পুলিশ-বিজিবি।
রোববার দুপুর ১টার পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১৬টি বাস-মাইক্রোবাস-পিকআপে আগুন দিয়েছে হরতাল সমর্থকরা। এতে রাজধানীজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আব্দুল জলিল মণ্ডল বলেন, “হরতালে নাশকতা ঠেকাতে পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দু’এক জায়গায় চোরাগোপ্তা আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।”
তবে রগরের সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
বিএনপি-জামায়াতের সোম ও মঙ্গলবারের হরতাল শুরুর আগের দিন রোববার দুপুর থেকে নাশকতা শুরু হয়েছে রাজধানীজুড়ে। জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় বাসে আগুন দিয়ে আতঙ্ক তৈরি করছেন। দুপুর ১টার দিকে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেট সংলগ্ন একটি বাসে প্রথম আগুন দেয় শিবির।
এর পরপরই মালিবাগ মোড় ও ফার্মগেট এলাকায় বাসে আগুন দেন হরতাল সমর্থকরা। কাপ্তানবাজারেও যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়া হয়। দুপুর ২টার দিকে বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন দেওয়া হয়।
বিকেল সাড়ে ৩টায় কাকরাইল মসজিদের সামনে ৩-নম্বর রুটের একটি বাসে আগুন দেন হরতাল সমর্থকরা। বিকেল ৪টায় কল্যাণপুর খালেক পেট্রোল পাম্পের সামনে একটি যাত্রীবাসে, বিকেল সাড়ে ৪টায় রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে মিডলাইন পরিবহনের একটি বাসে এবং ৫টায় রাজধানীর কারওয়ানবাজারস্থ এটিএন বাংলা কার্যালয়ের সামনে আগুন দেওয়া হয়।
এছাড়া সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ দুদক প্রধান কার্যালয়ের পেছনের ফটকের কাছে একটি সিএনজি ক্যাব, সন্ধ্যা ৬টার কিছু আগে মিরপুর ১১নং সেকশনে মিরপুর থেকে আজিমপুরগামী সেফটি পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস, সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে মেরুল বাড্ডায় সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাস এবং সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে সদরঘাটে সুতাবাহী একটি পিকআপে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
গুলিস্তান নগর ভবনের সামনেও যাত্রীবাহী একটি বাসে আগুন দেওয়া হলে বাসটির শতভাগ পুড়ে যায়। এসব ঘটনায় ১৫ জনকে আটকের কথা জানিয়েছে ডিএমপি।
গাড়িতে হঠাৎ করে আগুন দেওয়ার ঘটনায় দুপুরের পর থেকে রাজধানী জুড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন শুরু হয়। দুপুর ৩টার পর থেকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত পল্টন, দৈনিক বাংলা, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, সাইনবোর্ড, হাজারীবাগ, বিজয়নগর, নয়াপল্টন, ফকিরারপুল, কাকরাইল, মালিবাগ, মগবাজার, রামপুরা, বাড্ডা, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, গাবতলী, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এসব এলাকায় নাশকতা রোধে পুলিশ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছে।
এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সড়কে বাড়ানো হয়েছে পুলিশের টহল। পুলিশের সাঁজোয়া যান এপিসি নিয়ে জোরদার করা হয়েছে টহল।
তেজগাঁও জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির বাংলানিউজকে বলেন, “এ এলাকায় হরতালের সার্বিক নিরাপত্তায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।”
সার্বিক বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আব্দুল জলিল মণ্ডল বলেন, “হরতালে নাশকতা রোধে রাজধানীজুড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এ জন্য টহল পুলিশ বাড়ানো হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “পুলিশ হরতালের নামে যে কোনো ধরনের অরাজকতা রোধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবে।”