ব্রেকিং নিউজ
Home | ফটো সংবাদ | নির্বাচন সামনে রেখে নাটোর-৪ আসনে মনোনয়ন-প্রত্যাশী নেতারা আগাম প্রচারণায়

নির্বাচন সামনে রেখে নাটোর-৪ আসনে মনোনয়ন-প্রত্যাশী নেতারা আগাম প্রচারণায়

স্টাফ রিপোর্টার : আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নাটোর-৪ (বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর) আসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন-প্রত্যাশী নেতারা নেমে গেছেন আগাম প্রচারণায়। বিলবোর্ড, পোস্টার, ব্যানার, মোবাইল ফোনে ম্যাসেজ ও ফেসবুকের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন দুই উপজেলার প্রায় কুড়িজন মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমেও ভোটারদের সঙ্গে চলছে গণসংযোগ।

এবার নাটোর-৪ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে পুরাতন একাধিক প্রার্থীর পাশাপাশি রয়েছে নতুন মুখের ছড়াছড়ি।

দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন-প্রত্যাশী বর্তমান সংসদ সদস্য নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস। তার অবর্তমানে যেন তার পরিবারের কেউ এই আসন থেকে মনোনয়ন পান সেজন্য এখনই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তার মেয়ে কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি।

বাবা-মেয়ের বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবেন বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী এবং গুরুদাসপুর পৌরসভার মেয়র শাহনেওয়াজ আলী মোল্লা।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রতন সাহা, প্রয়াত এমপি রফিক সরকারের ছেলে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আরিফ উদ্দিন সরকার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আহাম্মদ আলী মোল্লা ও কৃষক লীগ নেতা জেলা মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার নাটোর জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল ওয়াহাব।

অন্যদিকে, বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোজাম্মেল হক এবারও মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। তার মনোনয়ন-দৌড়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন গুরুদাসপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল আজিজ। দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, দলের দুঃসময়ে যখন বিএনপির নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ ও পুলিশের হামলা-মামলার শিকার, তখন একমাত্র আব্দুল আজিজ চেয়ারম্যানই তাদের পাশে ছিলেন। তাই আগামী নির্বাচনে তিনিই মনোনয়ন পাওয়ার প্রকৃত হকদার।

এই আসনের দুটি উপজেলার মধ্যে বড়াইগ্রাম উপজেলায় ভোটার সংখ্যা বেশি হওয়ায় এবার বড়াইগ্রাম থেকে একাধিক নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। এর মধ্যে রয়েছেন বড়াইগ্রাম উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ইসাহাক আলী, যিনি পর পর দুবার প্রথমে বড়াইগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও পরে দুবার বড়াইগ্রাম পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। দুই উপজেলাতেই তার ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। তার সমর্থকেরা এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে তাকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ ছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জন গমেজ, বড়াইগ্রাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল কাদের মিয়া, সন্ত্রাসী হামলায় নিহত বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লা নুর বাবুর সহধর্মিণী মহুয়া নুর কচি নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রাখার পাশাপাশি জনসাধারণের সাথে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন।

বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোজাম্মেল হক গত ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের সরকারের সময় থেকে রয়েছেন একেবারে নিষ্ক্রিয়। দলেও এখন তার কোনো পদ নেই। মাঝে মাঝে দেশের বাইরে থাকলেও বেশির ভাগ তার সময় কাটে ঢাকার একাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করে। গত ১১ বছর ধরে তিনি নেতাকর্মী ও এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন।

এ আসনে বিএনপি থেকে এবার কে দলীয় প্রার্থী হতে পারেন তা নিয়ে সব মহলেই রয়েছে জোরালো আলোচনা। দলের কিছু নেতাকর্মী মনে করেন স্থানীয়ভাবে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন না করা গেলে প্রার্থী হতে পারেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক মন্ত্রী ও নাটোর জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। এ ছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক নাটোর চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. আমিনুল হক নিজেও।

জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবুল কাশেম সরকার দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি নানা কর্মকা-ের মাধ্যমে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দুবার সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার ভালো আচরণের বিষয়টি এখনো দুই উপজেলার মানুষের মধ্যে আলোচনা রয়েছে।

অন্যদিকে নাটোর জেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি বর্তমানে সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন খান ২০-দলীয় জোট বা জামায়াতের দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দলের নিবন্ধন নিয়ে জটিলতার কারণে প্রয়োজনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে হলেও তার নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে। এ ছাড়া জাসদের জেলা সাধারণ সম্পাদক ডি এম আলম নির্বাচন করার লক্ষ্যে গণসংযোগ করছেন।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, নাটোর-৪ আসনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসের সঙ্গে রয়েছে বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিরোধ। দুই উপজেলা আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতার সঙ্গে  তার সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। এমনকি দুই উপজেলাতেই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গুরুদাসপুর পৌর মেয়র শাহ নেওয়াজ আলী মোল্লা অভিযোগ করেন, নানা কারণে উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে তাকে গুরুদাসপুর এলাকায় বারবার অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।
নাটোর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক কুদ্দুস এমপি তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, নিয়োগ বাণিজ্য একটি মুখরোচক অভিযোগ। এ ধরনের অভিযোগ শুধু মিথ্যা তাই নয়, এগুলো ষড়যন্ত্রমূলক রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ।

এ আসন থেকে নিজের চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার কথা উল্লেখ করে সাংসদ কুদ্দুস বলেন,   ‘এলাকার লোকজন ভালোবাসে বলেই আমাকে বারবার নির্বাচিত করেছেন।’ যে যা-ই বলুক আগামী দিনে তিনিই দলের মনোনয়ন পাবেন বলে শতভাগ আশাবাদী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

মদনে সিএনজি অটো রিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের কমিটি গঠন

সুদর্শন আচার্য্য, মদন (নেত্রকোণা) ঃ নেত্রকোণা মদন উপজেলায় মিশুক, সিএনজি, অটো রিক্সা ...

মদনে হানাদারমুক্ত দিবস পালিত

সুদর্শন আচার্য্য, মদন (নেত্রকোণা)ঃ নেত্রকোণা মদনে উপজেলা প্রশাসন ও মুক্তিযুদ্ধ সংসদ কমান্ডের ...