স্টাফ রিপোর্টার, ১০ মার্চ, বিডিটুডে ২৪ডটকম : প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ না হওয়ায় নতুন সূচকে সদ্য তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর লেনদেনের হিসাব যুক্ত হচ্ছে না। ফলে বর্তমান বাজার সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাচ্ছেন না কেউই। পূর্বের ডিজিইএন এবং বর্তমানের ডিএসইএক্স সূচকে ব্যাপক পার্থক্য থাকায় বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, গত ২৭ জানুয়ারি থেকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) নতুন সূচক গণনা শুরু হয়। ডিএসইএক্স এবং ডিজিইএন সূচকের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৫০ পয়েন্ট। ওইদিন লেনদেন শেষে ডিএসইএক্স এবং পূর্বের ডিজিইএন সূচকের পার্থক্য ছিল ১১৬ পয়েন্ট। ২৭ জানুয়ারি দিনশেষে ডিএসইএক্স সূচক অবস্থান করে ৪০৫৫.৯০৬৪৫ পয়েন্টে এবং ডিজিইএন সূচক অবস্থান করে ৪১৭১.৪১০৭১ পয়েন্টে। ওইদিন এ ২ সূচকের পার্থক্য ছিল ১১৬ পয়েন্ট।
আজ বৃহস্পতিবার দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইএক্স সূচক অবস্থান করছে ৩৮৩২.৮৫৩৭৮ পয়েন্টে এবং ডিজিইএন সূচক অবস্থান করছে ৩৯১৪.২২৯২৭ পয়েন্টে। এ ২ সূচকের মধ্যে পার্থক্য ৮১ পয়েন্ট। অল্প সময়ের ব্যবধানে এ ২ সূচকের মধ্যে পার্থক্য কমে যাওয়ায় বাজার পরিস্থিতি নিয়ে অনেকটা অন্ধকারে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
এদিকে সদ্য তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ার নতুন সূচকে অর্ন্তভূক্ত না হওয়ায় উত্থান পতন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাচ্ছেন না বলে বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স, আরগন ডেনিমস, গোল্ডেন হার্ভেস্ট, প্রিমিয়ার সিমেন্ট এবং গ্লোবাল হেভী ক্যামিকেলের লেনদেনের প্রথমদিনে শেয়ার দর গড়ে প্রায় ৩৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তালিকাভুক্তির প্রথম দিনের লেনদেনে আলোচিত কোম্পানিগুলো টপটেন গেইনার এবং টার্নওভার তালিকার প্রথমস্থান দখল করে। এছাড়া উভয় শেয়ারবাজারের মোট লেনদেনের প্রায় এক চতুর্থাংশেরও বেশি দখল করে রাখে একেকটি কোম্পানি। কিন্তু এতো কিছুর পরও সূচকে তার কোনো প্রভাব লক্ষ্য করা যায় না।
৩১ জানুয়ারি সানলাইফ ইন্স্যূরেন্সের লেনদেন শুরুর প্রথমদিন ডিএসইএক্স সূচক ১০ পয়েন্ট বেড়ে ৪১৩৬ পয়েন্টে স্থির হয়। ডিজিইএন সূচক ৩ পয়েন্ট বেড়ে স্থির হয় ৪২৩০ পয়েন্টে।
১৯ ফেব্রুয়ারি আরগন ডেনিমসের লেনদেন শুরুর দিন ডিএসইএক্স সূচক ৫৫ পয়েন্ট কমে ৪২১০ পয়েন্টে স্থির হয়। ডিজিইএন সূচকও ৫৫ পয়েন্ট কমে স্থির হয় ৪৩০১ পয়েন্টে।
৩ মার্চ প্রিমিয়ার সিমেন্টের লেনদেন শুরুর দিন ডিএসইএক্স সূচক ২০৮ পয়েন্ট কমে ৩৭৬৫ পয়েন্টে স্থির হয়। ডিজিইএন সূচক ১৯৯ পয়েন্ট কমে স্থির হয় ৩৮৪৮ পয়েন্টে।
৪ মার্চ গোল্ডেন হার্ভেস্টের লেনদেন শুরুর দিন ডিএসইএক্স সূচক ১২৯ পয়েন্ট বেড়ে ৩৮১৪ পয়েন্টে স্থির হয়। ডিজিইএন সূচক ১৩৪ পয়েন্ট বেড়ে স্থির হয় ৩৯৮২ পয়েন্টে।
এবং ৬ মার্চ গ্লোবাল হেভী ক্যামিকেলের লেনদেন শুরুর দিন ডিএসইএক্স সূচক ৩০ পয়েন্ট কমে ৩৮৫৪ পয়েন্টে স্থির হয়। ডিজিইএন সূচক ২৬ পয়েন্ট কমে স্থির হয় ৩৯৩৭ পয়েন্টে।
সেকেন্ডারি মার্কেটে প্রথমদিনে স্টক এক্সচেঞ্জের মোট লেনদেনের গড়ে প্রায় এক চতুর্থাংশের বেশি উপরোক্ত কোম্পানিগুলোর দখলে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া শেয়ার দর গড়ে প্রায় ৩৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে দেখা গেছে। সে হিসাবে সূচক ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ার কথা থাকলেও ঘটেছে তার উল্টোটা। এছাড়া ডিএসইএক্স এবং ডিজিইএন সূচকের উত্থান পতনের বেলায়ও দেখা গেছে অসামঞ্জস্যতা। আর এতে করে বাজার সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাচ্ছেন না বলে বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন।
এছাড়া উপরোক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর বর্তমানে কমতে থাকলেও সূচকে তার প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে না; যেমনটি উত্থানের ক্ষেত্রেও ছিল না। ফলে বাজারের গতিবিধি নিয়ে অন্ধকারে রয়েছেন অনেকে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ডিএসই’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন সূচক গণনাকারি প্রতিষ্ঠান এস অ্যান্ড পি’র মেথোডলোজি অনুযায়ী ডিএসইএক্স সূচকে সংযুক্ত হতে হলে নতুন কোম্পানির কোয়াটারলি আইপিও রিভিউ (তিন মাস পর) এবং এস অ্যান্ড পি মেথোডলোজির শর্ত পূরণ করতে হবে। তবে পূর্বের ডিজিইএন সূচকে নতুন কোম্পানির হিসাব যুক্ত হচ্ছে।
জানা যায়, ডিএসইএক্স সূচকে অর্ন্তভুক্ত হতে হলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বাজার মূলধন কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকা হতে হবে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা লেনদেন হতে হবে এবং সর্বশেষ ৪ প্রান্তিকে কোম্পানির প্রবৃদ্ধি থাকতে হবে।
নতুন কোম্পানির ক্ষেত্রে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী (স্ট্রাটেজিক হোল্ডিং বাদে) ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ধারণ করা শেয়ারের ভিত্তিতেই স্টক এক্সচেঞ্জের নতুন মূল্য সূচক গণনা হবে। কিন্তু কত শতাংশ শেয়ার পাবলিক ফ্লোটে থাকলে নতুন সূচকে স্থান পাবে, তা নির্ধারণ করা হয়নি। আর এ কারণে বাজার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
এদিকে শর্ত পূরণের ব্যর্থ হওয়ায় ৪৪ কোম্পানি নতুন সূচকের বাইরে থাকায় বাজারের প্রকৃত চিত্র বোঝা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। অনেকে শেয়ারনিউজে ফোন করে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। দৈনিক ৫০ লাখ টাকা লেনদেন না হলে সূচকে স্থান পাবে না এমন শর্ত অধিকাংশ কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় না। কারণ, অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দৈনিক ৫০ লাখ টাকা লেনদেন হয় না। ফলে সূচক নিয়ে যে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে তা দ্রুত পরিস্কার করা জরুরি বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
এদিকে সূচকের ব্যাপারে ডিএসই’র বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কেউই এ ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা দিতে পারেননি। তাদের অধিকাংশের অভিমত, এসঅ্যান্ডপি যেহেতু এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান সেহেতু তারা ভুল করবে না।
এমতাবস্থায় এ বিষয়ে স্টক এক্সচেঞ্জগুলো পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের ষ্পষ্ট ধারনা দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ জানুয়ারি ডিএসইতে ডিএসইএক্স এবং ডিএস-৩০ সূচক চালু করা হয়। এ ২ সূচকের ভিত্তি ছিল ৪০৫৫.৯০ ও ১৪৬০.৩০ পয়েন্ট। ডিএসইএক্স সূচকটি ১৯৯টি কোম্পানি নিয়ে গঠন করা হয়েছে। এসব কোম্পানির বাজার মূলধন ৯৭ শতাংশ। বছরে একবার এই সূচক পুর্ন:মূল্যায়ন করা হবে।