এহসানুল হক, কক্সবাজার প্রতিনিধি, ১৬ মার্চ, বিডিটুডে ২৪ ডটকম :উচ্চ পর্যায়ের কড়া নজরদারিতে রয়েছে কক্সবাজারের পুলিশ প্রশাসন।সাম্প্রতিক সময়ে জামাত শিবিরের সহিংস কর্মকান্ডের কারণে এই নজরদারি। সহিংসতা পরবর্তী বিগত ২ সপ্তাহের মধ্যে বদলী হয়েছেন পেকুয়া ও কুতুবদিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। বর্তমানে আরো কয়েক কর্মকর্তা রয়েছেন বদলীর তালিকায়। সহিংসতা পরবর্তী তাঁদের কর্মকা- যাচাই করে নেয়া হবে ব্যবস্থা। এ ক্ষেত্রে অনেক পুলিশ অফিসারকে পদশূন্য(ক্লোজড) করার পাশাপাশি অনেককে ভিন্ন জেলা কিংবা উপজেলায় বদলী করা হতে পারে। এ ধরণের কিছু হলে এটি হবে দ্বিতীয় দফায়। ইতিপূর্বে রামুর সহিংসতা দমনে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে কক্সবাজারের পলিশ প্রশাসনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছিলো। সেবার জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে জেলা পুলিশের উচ্চ পর্যায়ে রদবদল করা হয়েছিলো। তবে, এবার সে রকম কিছু করা হচ্ছে না। ওসি পর্যায় থেকে উপ-পরিদর্শক (এসআই) রদবদল হতে পারে বলে জানা গেছে। জামাতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার রায় ঘোষণার আগে থেকেই জেলাব্যাপী ব্যাপক সতর্ক অবস্থানে ছিলো প্রশাসন। বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছিলো বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। তারপরও চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার শহরে জামাত শিবিরের সাথে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় সংঘর্ষে ৪ ব্যক্তি নিহত হন। এরপরই ২৮ ফেব্রুয়ারি জামাত নেতা সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পরপরই জেলাব্যাপী সহিংসতা শুরু হয়। এ সময় সহিংসতায় পুরো জেলায় অন্তত ১ ডজন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এক পর্যায়ে সহিংসতা উপজেলা পর্যায় থেকে ইউনিয়ন এমনকি গ্রাম পর্যায়ে পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। জামাত শিবিরের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন। বিশেষ করে পুলিশের উপর আক্রমণ করা রীতিমতো রুটিন কাজে পরিণত হয়েছিলো। এ ধরণের সহিংসতা দমন করতে তেমন সফল হয় নি কক্সবাজারের পুলিশ প্রশাসন। জামাত শিবির নেতা-কর্মীরা পুলিশের যানবাহনে অগ্নিসংযোগ থেকে শুরু করে
ভাঙচুর করলেও পুলিশ তেমন কার্যকরী কোন উদ্যোগ নিতে পারেনি। বিষয়টিই জেলার পুলিশ প্রশাসনকে ভাবিয়ে তুলেছে। ইতোমধ্যে পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে সহিংসতা কবলিত এলাকার পুলিশ স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)দের
বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া শুরু হয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।জানা যায়, কুতুবদিয়া, পেকুয়ার পর বর্তমানে মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বদলীর তালিকায় রয়েছেন। বিগত সময়ের সহিংসতামূলক কর্মকা- দমনে ব্যর্থতার অভিযোগে তাঁর (মহেশখালীর ওসি) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সহিংসতা দমন কিংবা বন্ধ করাতো দুরে থাক উল্টো জামাত শিবির
নেতা-কর্মীদের কাছে নিজেকে আত্মসমর্পন করে বসেছিলেন তিনি। মহেশখালীর ইউএনও সহ তাঁকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিলো জামাত শিবির কর্মীরা। বিষয়টি জেলার পুলিশ প্রশাসনকে ভাবিয়ে তুলেছে। বিশেষ করে এ রকম দুর্বল মানসিকতার পুলিশ অফিসারের পক্ষে সামনের কঠিন সময়গুলো পার করা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন জেলা পুলিশের কর্তাব্যক্তিরা। মহেশখালী পুলিশ ছাড়াও চকরিয়া পুলিশের ওসি রঞ্জিত বড়–য়ার বিরুদ্ধে জামাত শিবিরকে ইন্ধন জোগানোর অভিযোগ রয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোক
হিসেবে আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে তাঁর ব্যাপারে কোন অভিযোগ নেই। আর বিষয়টিকে পুঁজি করে জামাত শিবিরের সাথে সখ্যতা গড়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ২৮ ফেব্রুয়ারির পর চকরিয়ায় ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও তা সামাল দিতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন রঞ্জিত। এমনকি জামাতকে মিছিল করার জন্য মৌখিকভাবে অনুমতি দিয়েছিলেন বলেও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ
রয়েছে। পরবর্তীতে ওই মিছিল থেকে জামাত শিবির নেতাকর্মীরা ব্যাপক ভাঙচুর শুরু করলে সংঘর্ষ ব্যাপক আকার ধারণ করে। এমনকি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছিল। অথচ প্রাথমিক পর্যায়ে জেলা পুলিশের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে এ ধরণের পরিস্থিতি এড়ানো যেতো। মূলতঃ চকরিয়ার সহিংসতা পেকুয়া এবং কুতুবদিয়ার সহিংসতাকে উস্কে দিয়েছিল। ফলে,
বর্তমানে চকরিয়ার সহিংসতার বিষয়ে জেলা পুলিশ প্রশাসন রঞ্জিত বড়–য়ার ভূমিকা মূল্যায়ন করছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখিত থানা ছাড়াও কক্সবাজারের সবচেয়ে স্পর্শকাতর স্থান হচ্ছে কক্সবাজার সদর থানা। আসার এক সপ্তাহের মধ্যে বদলী হয়ে আবার নাটকীয়ভাবে কক্সবাজার থানায় এসেছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন। ১৫ ফেব্রুয়ারির সহিংসতার পর ৪ জন নিহত হওয়া ছাড়া এই পুলিশ অফিসারের সময়ে বড় ধরণের কোন অভিযোগ নেই। শহরে জামাত শিবির নামতে না পারার পেছনে সদর
থানা পুলিশের কঠোর অবস্থান অনেকাংশে ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে, পুলিশ অফিসারদের দুর্বল মানসিকতা ও কর্মক্ষেত্রে অদক্ষতার পরিচয় প্রদর্শন করার বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনে ব্যাপক গুঞ্জন শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেয়ার কারণে এ ধরণের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তারা। এ ধরণের পুলিশ অফিসার
দিয়ে রাজনৈতিক সহিংসতার মতো জটিল বিষয়তো দূরে থাক; সাধারণ বিষয়ও সামাল দেয়া সম্ভব নয় বলে মনে করছেন তাঁরা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আকতার বলেন, পুলিশ হেডকোয়ার্টারের নির্দেশে ২ থানার ওসিকে বদলী করা হয়েছে। বদলীকৃতদের বিশেষ কোন দুর্বলতা রয়েছে কীনা কিংবা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে, এ ধরণের কোন অভিযোগ নেই বলে জানান তিনি।
Home | আন্তর্জাতিক | দুর্বল মানসিকতা সম্পন্ন অফিসারদের সরিয়ে দেয়া হচ্ছে : জেলার পুলিশ প্রশাসনে ব্যাপক রদ-বদলের সম্ভাবনা