স্টাফ রিপোর্টার : দুই দিনেও খোঁজ মিলেনি সাবেক রাষ্ট্রদূত এম মারুফ জামানের। তার ব্যবহৃত গাড়িটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার সন্ধান পেতে পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দারাও মাঠে কাজ করছেন।
বিদেশ-ফেরত মেয়েকে আনতে সোমবার সন্ধ্যায় বিমানবন্দরের উদ্দেশে ধানমন্ডির বাসা থেকে গাড়ি নিয়ে বের হন মারুফ জামান। এরপর থেকেই তিনি নিখোঁজ বলে জানায় তার পরিবার।
মারুফ জামানের ছোটভাই রিফাত জামান বলেন, বেলজিয়াম ফেরত তার ছোট মেয়ে সামিহা জামানকে আনতে সোমবার সন্ধ্যায় বিমানবন্দরের উদ্দেশে ধানমন্ডির বাসা থেকে গাড়ি নিয়ে বের হন মারুফ জামান। তার মোবাইল নম্বর বন্ধ পেয়ে সামিহা একাই বাসায় চলে আসে। পরে তার মুঠোফোন বন্ধ পেয়ে একদিন পর গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ধানমন্ডি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন সামিহা জামান। ধানমন্ডি থানার সাধারণ ডায়েরি নম্বর-২১৩।
রিফাত জামান বলেন, মারুফ জামানের ছোট মেয়ে সামিহা জামান তার বড়বোনের সঙ্গে দেখা করতে কয়েক সপ্তাহ আগে বেলজিয়াম গিয়েছিল। সোমবার রাত আটটায় ঢাকা বিমানবন্দরে সে পৌঁছায়। তার বাবার জন্য দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করে না পেয়ে ধানমন্ডির বাসায় চলে আসে সামিহা।
রিফাত আরও জানান, মারুফ নিজেই গাড়ি চালিয়ে বিমানবন্দরে যাচ্ছিলেন। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে খিলক্ষেত থানা পুলিশ তিনশ ফুট সড়ক থেকে মারুফ জামানের গাড়িটি উদ্ধার করে।
রিফাত জামান বলেন, গত সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে গাড়ি নিয়ে বেরোনোর ঘণ্টাখানেক পর মারুফ জামান বাসায় ফোন করেন। কয়েকজন লোক গেলে তাদের কাছে নিজের ল্যাপটপটি দিয়ে দিতে বলেন। পরে তিনজন লোক বাসায় আসেন। তারা একটি ল্যাপটপ, কম্পিউটারের সিপিইউ, ক্যামেরা ও একটি স্মার্টফোন নিয়ে যান এবং মারুফ জামানের ঘরে তল্লাশি করেন।
মারুফ জামান নিখোঁজ সংক্রান্ত ডায়েরিটি তদন্ত করেছেন ধানমন্ডি থানার উপপরিদর্শক তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি।
ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবদুল লতিফ বলেন, মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে পূর্বাচলমুখী তিনশ ফুট সড়কে মারুফ জামানের গাড়ি পাওয়া গেছে। তবে তার মুঠোফোন বন্ধ রয়েছে। তার বাড়ি থেকে আমরা ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। বাসায় আগত তিনজনের ছবি দেখে তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। তবে তার অবস্থান সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি।
বুধবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের জঙ্গিবিরোধী বিশেষ শাখা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে ধানমন্ডি থানায় একটি জিডি হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি আমরাও কাজ করছি। তবে এখন পর্যন্ত মারুফ জামানের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
ধানমন্ডির ৯/এ নম্বর সড়কের ৮৯ নম্বর বাড়ির ছয়তলা ভবনের তৃতীয় তলায় থাকেন মারুফ জামান। আর ওই বাড়ির পঞ্চম তলায় তার ছোট ভাই রিফাত জামান থাকেন।
এম মারুফ জামান ১৯৭৭ সালে সেনাবাহিনীতে সিগন্যাল কোরের ‘ষষ্ঠ শর্ট কোর্সে’ ক্যাপ্টেন হিসেবে যোগ দেন। পরে শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি ওই চাকরি থেকে চলে আসেন। ১৯৮২ সালে আর্মি থেকেই ফরেন সার্ভিসে যোগ দেন তিনি। প্রথম দিকে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি ছিলেন। পরে ২০০৭ সালের পর থেকে কাতারে এবং তারপর ভিয়েতনামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন।
মারুফ জামান সর্বশেষ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজের (বিআইএসএস) অতিরিক্ত মহাপরিচালক ছিলেন। ২০১৩ সালে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর চাকরি থেকে অবসরে যান তিনি। মারুফ জামানের দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে বেলজিয়াম থাকেন।