ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক: রাশিয়া বিশ্ব রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে আসার বড় অবদান রয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের। এক্ষেত্রে বিশ্বে রাশিয়ার অবস্থান পাকাপোক্ত না হওয়া পর্যন্ত দেশটির ক্ষমতা নিজের হাতে রাখতে চান পুতিন। মঙ্গলবার দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ডুমাতে দেওয়া এক ভাষণে সংবিধানের প্রস্তাবিত সংশোধনের প্রতি সম্মতি জানিয়ে এমনটি বলেছেন তিনি। যে প্রস্তাবের ফলে প্রেসিডেন্টের মেয়াদের বাধ্যবাধকতা থাকবে না।
সংবিধানের প্রস্তাবিত সংশোধনী নিম্নকক্ষে পাস হয়েছে। পক্ষে ৩৮২ এমপি ভোট দিয়েছেন। ভোটদানে বিরত ছিলেন ৪৪ জন। আজ (বুধবার) তৃতীয় এবং শেষ পর্যালোচনা শেষে ভোটাভুটি হবে। এদিন সংশোধিত বিলটি পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ ফেডারেশন কাউন্সিলেও তোলা হবে। আগামী ২২ এপ্রিল সংবিধান সংশোধন প্রশ্নে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। গণভোটে জিতলে আর কোনো বাধা থাকবে না।
নিম্নকক্ষে দেয়া ভাষণে পুতিন বলেন, ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট থেকে যে কোনও ব্যক্তিকে দায়িত্ব থেকে না সরানোর প্রস্তাব নীতিগতভাবে সম্ভব কিন্তু এক শর্তে। যদি সাংবিধানিক আদালত আনুষ্ঠানিকভাবে রুল জারি করে যে এই সংশোধন প্রস্তাব সংবিধানের মূলনীতি ও ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্টের কথা ভাষণে তুলে ধরেন রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে মহামন্দার সময় রুজভেল্ট চার মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। যখন দেশ কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যায় তখন স্থিতিশীলতাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
গত জানুয়ারিতে সংবিধান পরিবর্তনের ঘোষণা দেন পুতিন। সরকারের তরফে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। রাশিয়ার সরকারনিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। তাতেও পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব জানানো হয়নি। যতটুকু প্রকাশিত হয়েছে, তাতেই অন্য কিছুর গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
পুতিন রাশিয়ায় দীর্ঘ ২০ বছর ক্ষমতায় আছেন। বর্তমান সাংবিধানিক নিয়ম অনুযায়ী, ২০২৪ সালের পর আর প্রেসিডেন্ট পদে থাকতে পারবেন না তিনি। এজন্য আরও
দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার রাস্তা তৈরি করছেন এই সাবেক কেজিবি কর্মকর্তা। তবে এর আগে বহুবার ৬৭ বছর বয়সী পুতিন বলেছেন, আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য সংবিধান পরিবর্তন হচ্ছে না। গত শুক্রবার ইভানোভোয় এক সভায়ও বলেছেন, ‘এটা আমার জন্য নয়। আমরা সংশোধনী প্রস্তাবটি আনছি ৫-১০ বছরের জন্য নয়, অন্তত ৩০-৫০ বছরের জন্য।’ তবে মঙ্গলবার স্টেট দুমায় এসে আকস্মিক ভাষণ দেয়ায় সব কিছু স্পষ্ট হয়ে গেছে।
পুতিনের সমালোচকদের আশঙ্কা, যদি সাংবিধানিক আদালত এই সংশোধন প্রস্তাবে সম্মতি দেয় এবং এপ্রিলে দেশব্যাপী ভোটে তা পাস হয় তাহলে পুতিন পরপর দুই মেয়াদে ছয় বছর করে ক্ষমতায় থাকতে পারবেন। সেক্ষেত্রে যদি তার স্বাস্থ্য ও ভোটভাগ্য ঠিক থাকে তাহলে ২০৩৬ সাল পর্যন্ত অনায়াসে ক্ষমতায় থাকতে পারবেন তিনি। তখন তার বয়স হবে ৮৩ বছর। আর তারপরে কী হবে তাও বলা সম্ভব নয়। হয়তো আজীবন ক্ষমতায় থাকবেন পুতিন।
ওই সংশোধনে রয়েছে, যারা রাশিয়া থেকে পালিয়ে গিয়েছেন বা অন্য দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন তারা প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে পারবেন না। এর ফলে যেসব বিরোধী নেতা রাশিয়া ছেড়েছেন, যাদের মধ্যে পুতিনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীও রয়েছেন। পুতিনের এই পদক্ষেপকে ‘সাংবিধানিক ক্যু’ আখ্যা দিয়েছেন সমালোচকরা।