শাহ্ আলম শাহী,স্টাফ রিপোর্টার,দিনাজপুর থেকেঃ বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)দিনাজপুর অঞ্চলের নশিপুরভিত্তিক পাটবীজ খামার থেকে বীজ গম পাচারের অভিযোগে যুগ্ম পরিচালক কৃষিবিদ মোফাজ্জল হোসেনসহ ৩জনকে বরখাস্ত করা হলেও পাচারকারীর হোতা ডিএডি শামসুজ্জামান রয়েছে ধোরাছোয়ার বাইরে। এর আগে ২৪ জুন সাত মাইল এলাকার তাহেরের মিল হতে নশিপুর খামারের ২৪ বস্তা ধান এবং এর আগের দিন ২৩ জুন দিনাজপুর পুলহাট এলাকা থেকে ১০০ বস্তা আটককৃত ধানের পাচারকারী তিনিই ছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। আটক ২৪ বস্তা ধান স্থানীয় চেহেলগাজী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মকসেদ আলীর বাড়িতে জমা রয়েছে। তবে পুলহাটে আটক ধান এবং সেই সাথে নগদ কিছু টাকা গ্রহণ করে তা আত্মসাৎ করেছে স্থানীয় কতিপয় ছাত্র নেতা। এমন অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। এর আগেও ঠাকুরগাঁও ও গড়েয়া নামক স্থানে নশিপুর পাটবীজ খামারের ধান ও গম আটক করা হয়েছে। তবে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোন মূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এর হোতা ছিলেন নশিপুরভিত্তিক পাটবীজ খামারের উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) শামসুজ্জাম বলে জানিয়েছেন তারা। বিএডিসি দিনাজপুর অঞ্চলের নশিপুরভিত্তিক পাটবীজ খামারে পাচার ও লুটপাটের ঘটনার সাথে ১৩ মাইল গড়েয়া সালাম এগ্রো ফার্মিং,বীরগঞ্জ কবিরাজ হাটের সোহাগ,বীরগঞ্জ-খানসামা রোডে লাকী বীজ ভান্ডার, ঠাকুরগাও বিএডিসি’র বীজ প্রসেসিং দপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তারা জড়িত বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবী করেছে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)দিনাজপুর অঞ্চলের নশিপুরভিত্তিক পাটবীজ খামার থেকে বীজ গম পাচারের অভিযোগে বৃহস্পতিবার যুগ্ম পরিচালক কৃষিবিদ মোফাজ্জল হোসেনসহ ৩জনকে কর্তৃপক্ষ বরখাস্ত করেন। বরখাস্ত অন্য দু’জন হলেন উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) জাহাঙ্গীর আলম ও ষ্টোর কিপার আমজাদ হোসেন। বিএডিসি’র সচিব তুলসি রঞ্জন চন্দ্র এই বহিস্কারের আদেশ দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন ঘটনার তদন্ত টিমের সদস্য ও বিএডিসি দিনাজপুর অঞ্চলের সার বিপনের যুগ্ম পরিচালক আ.ফ.ম.আফরুজ আলম। এডিশনাল জেনারেল ম্যানেজার ইকবাল হোসেনকে প্রধান করে ৩ সদস্যের এই তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। টিমের অন্যরা হলেন,বিএডিসি দিনাজপুর অঞ্চলের বীজ প্রসেসিং এর যুগ্ম পরিচালক আলতাফ হোসেন ও সার বিপণনের যুগ্ম পরিচালক আ.ফ.ম আফরোজ আলম।এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে । বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)দিনাজপুর অঞ্চলের নশিপুরভিত্তিক পাটবীজ খামারের অতিরিক্ত দায়িত্বে এখন রয়েছেন সার বিপণনের যুগ্ম পরিচালক আ.ফ.ম আফরুজ আলম। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন যুগ্ম পরিচালক আ.ফ.ম আফরুজ আলম।
সংশ্লিষ্ট শ্রমিক নেতাদের অভিযোগ এর আগেও অসংখ্যবার এ খামার থেকে বীজ গম ও ধান পাচারের পর জনতার হতে ধরা পরার পরেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় সংশ্লিষ্ট পাচারকারীরা। ভেতর-বাইরের একটি চক্র এই খামার থেকে দীর্ঘদিন ধরে পণ্য ও মালামাল চুরি এবং পাচারের সঙ্গে জড়িত। সংশ্লিষ্টদের দাবী, সরকারি এ খামারটি রীতিমতো লুটপাটের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। চুরি ও পাচারের কারণে খামারটি ভেস্তে গেছে। পরিনত হয়েছে লোকসানের প্রতিষ্ঠানে।খামারের শ্রমিক এবং স্থানীয়রা বলছেন, শুধু ১৬০ বস্তা গমই নয়, বিএডিসির বৃহত্তম এ পাটবীজ খামারটিতে চলছে পাচারের মহোৎসব।
৬২০ একর জায়গা নিয়ে অবস্থিত বিএডিসি-দিনাজপুরের নশিপুর পাট বীজভিত্তিক এ খামার। এর মধ্যে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৫১০ একর। পাটের ঐতিহ্য হারানোর পর দেশের সর্ববৃহৎ এ খামারটিতে এখন নামমাত্র পাটবীজ উৎপাদন করা হলেও মূলত আবাদ করা হচ্ছে- ধান, গম, আলুসহ বিভিন্ন ফসল।
চলতি মৌসুমে এখামারে ২৪০ মেট্রিক টন গম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। উৎপাদন হয়েছে দেড়গুন বেশী। কিন্তু কর্তৃপক্ষ উৎপাদন দেখিয়েছে ২০৫ টন মাত্র। বাকি সব গম পাচার হয়েছে।চুক্তিভিত্তিক নিবন্ধকৃত কৃষকের মাঝে এসব বীজ গম ও বীজ ধান বিতরণের কথা থাকলেও তা আগেই বাইরে চলে যাচ্ছে। বেশী দামে তা বিক্রি হচ্ছে অন্য কৃষকদের কাছে।
এব্যাপারে ডিএডি শামসুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেন। বলেন,আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে একটি মহল।
Tagged with: দিনাজপুরে বিএডিসি’র গম পাচারঃ ডিএডি শামসুজ্জামান ধোঁরাছোয়ার বাইরে !