কলকাতা প্রতিনিধি : শুরু হয়ে গেছে দিদিকে মানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলো, প্রচার। ঘরে ঘরে গিয়ে ইতোমধ্যে জনসংযোগ বাড়ানোর চেষ্টায় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-মন্ত্রীরা।
তৃণমূল সূত্রের খবর, দুশোরও বেশি বিধায়ককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আগামী দুদিনের মধ্যে দিদিকে বলো প্রচার নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করতে। ইতোমধ্যেই সাংবাদিক বৈঠক করেছেন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। গ্রামের ক্ষেত্রে প্রত্যেক বিধায়ককে নিজের এলাকায় গিয়ে থাকতে হবে। সেখানকার জনপ্রতিনিধি, সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হবে, তাদের অভাব অভিযোগ শুনতে হবে। শহরের ক্ষেত্রে প্রত্যেক বিধায়ককে নিজের ওয়ার্ডে গিয়ে থাকতে হবে।
প্রবীর ঘোষাল, অরূপ রায়ের মতো তৃণমূল নেতৃত্ব বুধবার থেকে পথে নেমে পড়েছেন। বুধবার সকাল থেকেই শহর থেকে গ্রামের রাস্তায় তৃণমূল নেতৃত্বের প্রচারাভিযান দেখে কার্যত মনে হচ্ছে নির্বাচন এসে গেছে। আসলে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কথা মাথায় রেখেই এই প্রচারে নেমেছে মমতা-শিবির।
প্রথমত, জনসংযোগ বাড়ানোর মধ্য দিয়ে একেবারে মানুষের মনের কাছে পৌঁছতে চাইছে তৃণমূল। দ্বিতীয়ত, কাটমানিসহ একাধিক ইস্যুতে বিরোধীরা যে গত দু-তিন মাস ধরে আক্রমণ শানিয়েছেন, তার পাল্টা জবাব দিয়ে তৃণমূলও দেখাতে তৎপর, তারা কতটা মানুষের কাছে পৌঁছেছে। আগামী ১০০ দিন ধরে চলবে জনসংযোগ বাড়ানোর এই চেষ্টা।
বুধবার থেকেই দেখা যাচ্ছে, তৃণমূলের তাবড় নেতা-মন্ত্রীরা গ্রামগঞ্জ চষে বেড়াচ্ছেন, সেখানেই গ্রামবাসীদের বাড়িতে বসে খাচ্ছেন। আসলে তারা যে কতটা মানুষের অন্দরমহলে পৌঁছচ্ছেন, তাই এই প্রচারাভিযানে ধরা পড়বে। অন্যদিকে, জনসংযোগের নেপথ্য-মঞ্চ সল্টলেকে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত একটি অফিস। সেখানে তরুণ পেশাদার-বাহিনীর কেউ ফোন ধরছেন, কেউ ওয়েবসাইটের বিভিন্ন তথ্য গোছগাছে ব্যস্ত। নেপথ্যে নির্বাচনী উপদেষ্টা প্রশান্ত কিশোরের টিম।
এত তথ্য ঠিক কোথায় যাচ্ছে, তা নিয়ে অবশ্য নানা মহলে প্রশ্ন রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে কিছু জানানোর সময়ে ব্যক্তিবিশেষকে জানাতে হচ্ছে, তিনি কোথায় থাকেন, কোন ওয়ার্ড বা পঞ্চায়েত এলাকা, বয়স, পেশা ইত্যাদি ব্যক্তিগত খুঁটিনাটি, এমনকি ফোন এবং হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরও। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত হওয়ার আশঙ্কা দানা বাঁধছে ।
এই অবস্থায় বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুর আশঙ্কা, রাজ্যের যা অবস্থা, তাতে নাম-ধাম জানিয়ে কেউ অভিযোগ করলে তার পেছনে পুলিশও লাগিয়ে দেওয়া হতে পারে। নজরদারি করতেই এই ব্যবস্থা। যা শুনে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, যত্তসব আজগুবি কথা। বাংলার সংস্কৃতি নিয়ে ধারণা নেই। কী বলছে, আর কী করছে নিজেরাই জানে না।
এদিকে দিদিকে মানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলা মানেই সব তথ্য সোজাসুজি তার কাছে পৌঁছচ্ছে, বিষয়টা তেমন নয়। শোনা যাচ্ছে, সংকলিত তথ্যভাণ্ডার তৃণমূলের শীর্ষ স্তরের যুব নেতা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো এবং সাংসদ অভিষেকের অফিসে পাঠানো হবে। এই তথ্যভাণ্ডার আদতে দু’বছর বাদে বিধানসভা ভোটের আগে ভোটারদের চাহিদার পূর্ণাঙ্গ ছবিই তুলে ধরবে। কারণ, কোন বয়সের ভোটার, গ্রামে বা শহরে কোন এলাকায় কী চাইছেন, সব থাকবে সংগৃহীত এই সব তথ্যে।