ব্রেকিং নিউজ
Home | বিবিধ | স্বাস্থ্য | ডাঃ গাজী মিজানের সফল চিকিৎসায় প্রাণ ফিরে পেয়েছেন নড়াইলের কিবরিয়া

ডাঃ গাজী মিজানের সফল চিকিৎসায় প্রাণ ফিরে পেয়েছেন নড়াইলের কিবরিয়া

নড়াইল প্রতিনিধি: নড়াইলের গোলাম কিবরিয়া, বয়স ২৪, পেশায় কাঠমিস্ত্রী, পিতা মৃত: মোঃ বাবু মিয়া। সংসারে মা আর একমাত্র সন্তান গোলাম কিবরিয়া। মা আর ছেলের দুইজনের সংসার টানাপোড়েনের মাঝেও বেশ ভাল চলছিল কিন্তু ২০১০ সালে এসে অসুস্থ হয়ে পরেন গোলাম কিবরিয়া, প্রচন্ড রকমের পেট ব্যাথা আর বমি নিয়ে শারিরীকভাবে ভিষন অসুস্থ হয়ে পরেন, ক্রমান্বয়ে অবস্থার অবনতি দেখে অসহায় মা ভর্তি করার নড়াইল সদর হাসপাতালে। দীর্ঘ ১৭ দিন পর রেফার্ড করা হয় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এ, সেখানে সাড়ে তিন মাস ভর্তি ছিলেন গোলাম কিবরিয়া। অবস্থা দিনে দিনে খারাপ হতে লাগল। অসহায় মায়ের উপার্জনক্ষম একমাত্র সন্তান ও শেষ অবলম্বন গোলাম কিবরিয়া শারিরীক অবস্থার চরম অবনতি হতে থাকে। পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এ।

চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন তার শারিরীক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে, বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরও কোন কিছু ধরা পড়ছে না। অবশেষে চিকিৎসকরা হাল ছেড়ে দেন। হয়তো আর মাস তিনেক বাঁচতে পারেন গোলাম কিবরিয়া। অসহায় মা একমাত্র সন্তানকে নিয়ে ফিরে আসেন নড়াইল নিজ গ্রামে।কিছু বিত্তবানদের সহায়তায় ভারতেও কয়েকবার চিকিৎসার জন্য গিয়েছে। কিন্তু ফলাফল শুন্য। শেষ দিনগুলো নিজ জন্মভূমিতেই থাকুক এ প্রত্যাশায়। অবস্থা খুবই সংকটজনক যেকোন সময় প্রান বায়ু বের হয়ে যেতে পারে গোলাম কিবরিয়ার। হয়তো নিয়তির এই কঠিন সিদ্ধান্তকেই মেনে নিয়েছে গোলাম কিবরিয়া পরিবার-আত্বীয় স্বজন। কিন্তু মা এর মন মানেনা। নড়াইল থেকে আবার যশোর মেডিকেল হাসপাতালে। এফ এম আমিরুল ইসলাম ও নাহিদ এনাম কিবরিয়ার চিকিৎসার জন্য ফেসবুকে যোগাযোগ মাধ্যমে সাহায্যের আবেদন চেয়ে সংবাদ প্রকাশ করেন। যা ছড়িয়ে যায় সাড়া দেশে।

ডাঃ বঙ্গ কমল বসু, সহযোগী অধ্যাপক (সার্জারী) গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা এর নজরে আসে খবরটি তিনি গোলাম কিবরিয়া কে গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এ নিয়ে আসেন। প্রফেসর ডাঃ এ এম ই ওয়াছে,ডাঃ বঙ্গ কমল বসু এর সাথে ছিলেন ডাঃ গাজী মিজানুর রহমান, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর ধরা পরে অন্ত্রের যক্ষা। কিন্তু বড্ড দেরী করে ফেলেছেন গোলাম কিবরিয়া। শারীরিক অবস্থার এতটাই অবনতি হয়েছে যে শরীরের ওজন মাত্র ১৬ কেজি। শরীরে হাড় ছাড়া কিছুই নাই। হাল ছাড়েননি গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এর ডাঃ গাজী মিজানুর রহমান ও ডাঃ বঙ্গ কমল বসু, সিদ্ধান্ত নেন অপারেশনের। অপারেশনের মাধ্যমে শরীর থেকে বাদ দেওয়া হয় অন্ত্রের আক্রান্ত হওয়া অংশ। ৩ মাস ভর্তি থাকেন গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। নতুন জীবন ফিরে পান গোলাম কিবরিয়া।

আপনারা ভাবছেন হয়তো চিকিৎসা ব্যায় অনেক হয়েছে। বাস্তবে গোলাম কিবরিয়ার অপারেশন থেকে শুরু করে বেড চার্জ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, খাওয়া-দাওয়া সবই হয়েছে বিনা পয়সায়। এজন্য গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কোন অর্থই গোলাম কিবরিয়া বা তার পরিবারের কাছ থেকে নেয়নি। অপারেশন হয়ে গেছে ৯ মাস আগে। গোলাম কিবরিয়া এখন সম্পূর্ন সুস্থ্য স্বাভাবিক মানুষ। অপারেশনের সময় ১৬ কেজি ওজনে থাকা গোলাম কিবরিয়ার ওজন এখন ৫২ কেজি। কৃতজ্ঞতা জানাতে এসেছেন গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাঃ গাজী মিজানুর রহমান ও ডাঃ বঙ্গ কমল বসু এর প্রতি। সহজ-সরল মনের গোলাম কিবরিয়া আজ সুস্থ। তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার ভাষা নেই। কৃতজ্ঞতার কথা বলতে ঝরে পড়ছে অশ্রু ধারা। ভাল আছেন গোলাম কিবরিয়া, চাকুরী করছেন ঢাকায় এক সিকিউরিটি এজেন্সিতে। ডাঃ গাজী মিজান ও ডাঃ বঙ্গ এর জন্য নিয়ে এসেছে শ্রদ্ধার উপহার। বিয়ে করেছেন কিনা জিজ্ঞাসা করাতে হালকা লজ্জা পেলেন গোলাম কিবরিয়া, তবে খুব তাড়াতাড়ি করবেন বলে বলেছেন। কান্না বিজরিত কন্ঠে প্রকাশ করলেন সকলের প্রতি সরল কৃতজ্ঞতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

দেশে ৬ জনের শরীরে মিললো করোনার নতুন ধরন

ডেস্ক রিপোর্ট : বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ছয়জনের শরীরে মিলেছে ব্রিটেনে শনাক্ত হওয়া ...

মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগে

মদন (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি : নেত্রকোনার মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মচারিগণ অভিযোগ করেছেন ...