জিয়া হোসেন, টাঙ্গাইল : স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দ্বিতীয় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’র(রিপ-২) আওতায় টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার জলছত্র সরকারি বাজারে নির্মিত মহিলা বিপণী কেন্দ্রের দোকান বরাদ্দের ৮ মাসেও অজ্ঞাত কারণে বুঝে পাচ্ছেন না ১২ নারী দোকানী। নানা অফিস ও নেতার কাছে ধর্না দিয়ে শেষে জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করেও কাজ হচ্ছে না।এমন কি বরাদ্দকৃত দোকান নবায়ন করে ৪ মাসের বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করছেন তারা। কিন্তু তারপরও দোকানের চাবি না পেয়ে ওই ১২ নারী দোকানীর প্রায় সবাই হতাশ হয়ে পড়েছেন। অথচ একই সাথে বরাদ্দ পেয়ে একই জেলার ভূঁয়াপুর উপজেলার নিকরাইলের ৪ ও জামালপুর জেলার বক্শিগঞ্জ উপজেলা সদরের ৮ নারী দোকানে ব্যবসা করে যাচ্ছেন ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মধুপুর উপজেলার গাছাবাড়ি মৌজার জলছত্র হাট পেরিফেরিভুক্ত নির্মিত মহিলা মার্কেটে সপ-লাইসেন্স(একসনা বন্দোবস্ত)প্রাপ্তির জন্য ওই এলাকার ২৮ নারী আবেদন করেন।তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছর ১১ সেপ্টেম্বর অরণখোলা ইউনিয়ন পরিষদে মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে উপস্থিত ২৭ নারী থেকে যাচাই বাচাই করে উল্লিখিত ১২ নারীকে নির্বাচিত করা হয়। পরে প্রকল্পের আওতায় মহিলা দোকানদারদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং ব্যবসায়িক দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৩ দিনের প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়।
ঢাকার আদাবর মোহাম্মদপুর ডিকে ফাউন্ডেশনে ‘ইনস্টিটিউশনাল সাপোর্ট কনসালট্যান্টস’ এর প্রশিক্ষকগণের দেয়া ৩ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে (১৮-২০ ডিসেম্বর’২০১২) ১মাস ১০ দিন পর ৩১ জানুয়ারি’১৩ মধুপুরের ওই ১২ নারী ব্যবসায়ীর সাথে উপজেলা ভূমি অফিস কর্তৃপক্ষের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
দেশের অপর ৫ টি জেলাসহ মোট ৬ জেলার ৮ টি উপজেলায় এ প্রকল্পের.আওতায় (৮টি গ্রোথ সেন্টারে)৬৪ জন নারী কে প্রশিক্ষণ দিয়ে ৬৪টিদোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মহিলারা দোকান চালনা করে যাচ্ছেন প্রায় সবগুলোতে। জামালপুর জেলার বকশ্গিঞ্জ (সদর) বাজারের মহিলা মার্কেট ঘুরে দেখতে গিয়ে কথা হয় শাহিদার নামে বরাদ্দকৃত ইলেকট্রিক দোকান পরিচালনাকারি স্বামী ফরহাদ হোসেনের সাথে। তিনি বলেন,‘ট্রেনিংয়ের কিছুদিন আগেই দোকান পেয়েছি। এ দোকান করে সংসারের স্বচ্ছলতা এসেছে।’
নিজেই কসমেটিকের দোকান করেন টাঙ্গাইলের ভূয়াপুর উপজেলার নিকরাইলের শামসুন্নাহার রাণী। দোকানের দখল বুঝে পেতে কোন সমস্যা হয়নি বলে তিনি জানান। তবে তার গোজ গাজে কিছুটা বিলম্ব হওয়ায় দোকান শুরুতে কিছুটা সময় লেগেছে বলে জানিয়েছেন।
এদিকে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার জলছত্র বাজারে নির্মিত মহিলা মার্কেটের দোকান গত ৮ মাসেও দখল বুঝিয়ে না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বরাদ্দপ্রাপ্তরা।এই দোকান পাওয়ার আশায় এক নারী দোকানী আগের দোকান ছেড়ে দিয়ে ভীষণ বেকায়দায় পড়েছেন।
ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের এক নেতার কথা বলে স্থানীয় এক নেতার দেড় লাখ টাকা দাবির কথা উল্লেখ করে ওই নারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখন এত টাকা পাবো কোথায়?
নেতাদের সাথে যোগাযোগ করেছেন কিনা প্রশ্ন করলে ১২ নারীর অন্যতম নারী নেত্রী , একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মারিয়া চিরান জানান, আমরা ইউএনও(উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) সাহেবের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এক নেতার সাথে কথা বলতে বলেন। আমরা তার সাথে দেখা করি।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা আমাদের ন্যায্যতার দাবি তুলে তার কাছ থেকে কোন প্রকার সহযোগিতা পাইনি।’
ওই ১২ নারীদের সাথে কথা বলে আরও জানা যায়,গত ১৬ মার্চ’১৩ গারো সংগঠন জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদ’র প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে খাদ্য মন্ত্রি ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি ‘জলছত্র মহিলা মার্কেট’ উদ্বোধন করার কথা ছিল । কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেদিন সকল প্রস্তুতি থাকার পরও উদ্বোধন হয়নি।পরে ২৮ মার্চ’১৩ তারিখে ওই ১২ নারী টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেও দোকান বরাদ্দের বিষয়ে কোন ইতিবাচক সাড়া পাননি তারা। ফলে এখনও দোকানগুলো খোলতে পারেননি বরাদ্দ পাওয়া নারীগণ।
বরাদ্দ পাওয়া দোকানের চাবি পেতে তবুও তারা বসে নেই।তারা শুরু থেকে স্থানীয় প্রকৌশল বিভাগ, সহকারি কমিশনার(ভূমি)কার্যালয় ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে খবর নিতে যাওয়া আসা অব্যাহত রেখেছেন।এমনকি তারা বাংলা হাল সালের নবায়ন ফিও জমা দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ওই মহিলা মার্কেট ব্যবস্থা কমিটির সভাপতি অরণখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির সরকার বলেন, ‘যথাযথ নিয়ম মেনে অত্যন্ত নিরপেক্ষতার সাথে উপযুক্ত নারীদের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। দখল পেতে বাধা থাকার কথা নয়।’ তিনি কর্তৃপক্ষকে দ্রুত এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেছেন।
একই সুরে কথা বলেছেন উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয়ের জনৈক দায়িত্বশীল ব্যক্তি। তিনি বলেন,‘আমাদের দায়িত্ব শুধু নির্মাণ। আমরা সেটা সেরেছি অনেক আগেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়েছি। এখন পুরো দায়িত্ব তাদের।’
মধুপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন,‘দখল বুঝিয়ে দিতে কোন বাধা নেই।মন্ত্রি মহোদয় (খাদ্যমন্ত্রি) এর আগে একবার উদ্বোধনের তারিখ দিয়ে ছিলেন। করতে না পারায় সেটি পিছিয়ে গেছে। এখন তার দেয়া তারিখের অপেক্ষা করা হচ্ছে।’
Home | সারা দেশ | টাঙ্গাইলের মধুপুরে মহিলা বিপনী কেন্দ্রে দোকান বরাদ্দের ৮ মাস দখল না পেয়ে বেকায়দায় ১২ নারী