স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা, ২ মার্চ, বিডিটুডে ২৪ডটকম : মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে দলটি আগামী রবি ও সোমবার সারা দেশে একটানা ৪৮ ঘণ্টা হরতালের ডাক দিয়েছে। তাদের সঙ্গে শরিক হয়ে বিরোধীদল বিএনপিও মঙ্গলবার সকাল সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করেছে। ফলে একই ইস্যুতে জামায়াতের সঙ্গে একাত্ম হয়ে বিএনপিও আন্দোলনে মাঠে নামছে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেছেন, জামায়াতের আন্দোলনে আগে বিএনপির প্রত্যক্ষ সমর্থন না থাকলেও এখন মঙ্গলবারের হরতাল ডাকার মধ্যদিয়ে সমর্থনের বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে যে গণজাগরণ সেই শাহবাগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। এ অবস্থায় তিনি জাতীয় ঐক্যের কথাও জানান।
বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট সাদেক খান বলেছেন, বিএনপি জামায়াতের সমর্থনে নয়, দেশের স্বার্থে ও নিরীহ মানুষ হত্যার প্রতিবাদে হরতালের আহ্বান করেছে। তিনি বলেন, শাহবাগের আন্দোলনের গণজারণ নয়, বরং রাজপথে যারা এখন সরকারের হত্যা ও নির্যাতেনর শিকার তাদের পক্ষেই গণজাগরণ হচ্ছে। তবে তিনি এধরনের অবস্থা মোকাবেলায় জরুরী অবস্থা জারি অথবা জামায়াত ইস্যুতে সংলাপের বিষয়টিও উল্লেখ করেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে বৃহস্পতিবার মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। আদেশের পর সারাদেশে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সমর্থকরা। তারা পুলিশের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। জামায়াত পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় বৃহস্পতিবার সারাদেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় পুলিশসহ কমপক্ষে ৪২ জন নিহত হয়। আজও দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ৪ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এ অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান ২ দিনের হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেন। বিবৃতিতে বলা হয়, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের রায় প্রত্যাখ্যান করে যখন জনগণ স্বত:স্ফূর্তভাবে প্রতিবাদ জানায়। তখনি সরকার এ প্রতিবাদ স্তব্ধ করে দিতে সারা দেশে ৪২ জন নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা করে। এর প্রতিবাদে হরতালসহ এসব কর্মসূচি দেয়া হয়।
একইভাবে শুক্রবার বিকেলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার গুলশানের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে ৫ মার্চ মঙ্গলবার হরতাল ঘোষণা করেন। খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গণহত্যার পৈশাচিক তা-বে মেতে উঠেছে সরকার। যা থেকে বৃদ্ধ, শিশু কিশোর, এমনকি গৃহবধূ পর্যন্ত রক্ষা পাচ্ছে না। এভাবে গণহত্যা চলতে দেয়া যায় না। তিনি সরকারকে এ মূহূর্ত থেকে গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানান। অন্যথায় ভয়াবহ পরিণতি হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন বেগম জিয়া।
সংবাদ সম্মেলনে মঙ্গলবার হরতাল ছাড়াও আগামীকাল শনিবার বেলা ৩টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে ও একই সময়ে দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় প্রতিবাদ মিছিল বের করার ঘোষণা দেয়া হয়। প্রতিবাদ মিছিলে দেশের সকল নাগরিককে যোগ দেয়ার আহ্বান জানান খালেদা জিয়া।