স্টাফ রিপোর্টার, ১১ মার্চ, বিডিটুডে ২৪ডটকম : যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে দেশজুড়ে জামায়াত-শিবিরের সহিংসতার প্রতিবাদে জেগেছে দেশের মানুষ। নিজেদের নিরাপত্তায় নিজেরাই তারা মাঠে নামছেন৷ সরকারের পক্ষ থেকেও শুরু হয়েছে সন্ত্রাস এবং নাশকতা প্রতিরোধ কমিটি গঠনের কাজ৷
গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পরাণ গ্রাম৷ এই গ্রামে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধী জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির আদেশের পর৷ হামলার পর সুরজিৎ কুমার প্রামাণিকের বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷ লুট করা হয়েছে মূল্যবান জিনিসপত্র৷ প্রথম দফা হামলার সময় পুলিশের কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি৷ এরপর ওই গ্রামের ৪০টি সংখ্যালঘু পরিবাকে আবারো হামলার হুমকি দেয়া হয়৷
পুলিশ তখন নিরাপত্তা না দিয়ে তাদের সাবধানে থাকার পরামর্শ দেয়৷ কাউকে কাউকে বাড়িতে না থাকারও পরামর্শ দেয়৷ কিন্তু তারা নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে কোথাও যাননি৷ বরং নিজেদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেরাই নিয়েছেন৷ সুরজিৎ কুমার প্রামাণিক জানান, এলাকাবাসী মিলে রাতে গ্রামে পাহারার ব্যবস্থা করেছেন৷ আর এই পাহারায় সব সম্প্রদায়ের তরুণরা অংশ নিচ্ছেন৷ তারা রাত ৯টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত পালাক্রমে পাহারা দেন৷
মানুষের এই জেগে ওঠা শুধু গাইবান্ধায় নয়৷ বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চট্টগ্রাম, সিলেট, মৌলভীবাজার, নাটোর সবখানে৷ চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে, ‘কানসাট আন্দোলনের’ নেতা গোলাম রাব্বানী রীতিমত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন৷ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে আগুন দিয়ে ২০০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷ এখন ৪৮ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন৷ তিনিই এক সময় বিদ্যুতের জন্য আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন৷ নাশকতা পর তিনিই আবার সবাইকে এক করেছেন নাশকতা প্রতিরোধে৷
সরকারের পক্ষ থেকেও এখন দেশের সব এলাকায় সন্ত্রাস এবং নাশকতা প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তুলতে বলা হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল জানান এই কমিটি ইউনিয়ন, থানা, জেলা বিভাগসহ সারাদেশে গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ এসব কমিটিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ রাজনৈতিক নেতা, সমাজ সেবক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাধারণ মানুষ সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে৷ সংসদ সদস্যরা এই কমিটিগুলোর সঙ্গে সক্রিয় থাকবেন৷
নাটোরের সিংড়া এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিন জানান, কমিটি গঠনের কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে৷ পুলিশ প্রশাসন তাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছে৷ তবে তারা জামায়াতে ইসলামীর কাউকে কমিটিতে না রাখার ব্যাপারে একমত হয়েছেন৷
এদিকে রাজধানী ঢাকায় সন্ত্রাস বা নাশকতার আগাম ও তাৎক্ষণিক তথ্য জানাতে ২৪ ঘন্টার একটি সেল খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার বেনজির আহমেদ৷ তিনি নাগরিকদের তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছেন৷
পুলিশের সাবেক আইজি এ এস এম শাহজাহান জানান, সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধে মানুষের এই জেগে ওঠা ইতিবাচক৷ আর সবখানে সরকারের সহয়তায় সবাইকে নিয়ে কমিটি গঠনও কাজে দেবে৷ তিনি বলেন, যে হামলা এবং নাশকতা হয়েছে তা পরিকল্পিত৷ দেশে পুলিশের সংখ্যা অপ্রতুল, মাত্র ১ লাখ ৬০ হাজার৷ এই অল্প সংখ্যক পুলিশ দিয়ে পরিকল্পিত নাশকতা বা হামলা পুরোপুরি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়৷ মানুষ যদি সচেতন হয়, তাহলে তাদের প্রতিরোধ করা সম্ভব৷ আর মানুষ সংগঠিত হলে দুর্বৃত্তরাও নাশকতা বা হামলা চালাতে সাহস পাবেনা৷ সব মিলিয়ে মানুষের ভিতরে নিরাপত্তাবোধ গড়ে উঠবে৷ সামাজিক প্রতিরোধের কোনো বিকল্প নেই, বলেন তিনি৷