স্টাফ রিপোর্টার : আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার পর চলমান সংসদ ভেঙে দিয়ে সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-(বাংলাদেশ ন্যাপ)। সেই সঙ্গে দলটি বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েনেরও প্রস্তাব দিয়েছে।
সোমবার আগারগাঁওস্থ নির্বাচন কমিশনের (ইসি)সঙ্গে সংলাপে এ প্রস্তাবসহ ২১টি প্রস্তাব দেয় দলটি।দুই ঘণ্টাব্যাপী এ সংলাপ শুরু হয় বেলা ১১টায়। সংলাপে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিইসি কে এম নূরুল হুদা।
বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানিন নেতৃত্বে ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন, মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার মশিউর রহমান গাণি, ভাইস চেয়ারম্যান মুনির ইনায়েত মল্লিক প্রমুখ।
সংলাপ শেষে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি সাংবদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশের সামাজিক-রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক বাস্তবতা হচ্ছে কোনো দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। দলীয় সরকারগুলোর অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বারবার। আর এই ব্যর্থতার দায় অনেকটা নির্বাচন কমিশনকেও বহন করতে হয়েছে। তাই আমরা প্রস্তাব করেছি, মহামান্য রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে ও ইসির মধ্যস্থতায় একটি জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নির্বাচকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা এবং সেই সরকারের অধীনে একটি জাতীয় নির্বাচন করা।’
চেয়ারম্যান জানান তাদের অন্য প্রস্তাবগুলো হলো- নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগেই জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরইপরই বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবহিনী মোতায়েন করা এবং তাদেরকে নির্বাচন পরবর্তী ১৫ দিন পর্যন্ত নিয়োজিত রাখা, অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিশ্চিত করা, নির্বাচনে অবৈধ অর্থ, কালো টাকা ও পেশীশক্তি ব্যবহার কঠিনভাবে নিয়ন্ত্রণ, নিরপেক্ষ স্থানে ভোটকেন্দ্র্র স্থাপন করা, ভোটার ও প্রার্থীর এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ভোটকেন্দ্রে ভোট গণনা শেষে প্রার্থীদের এজেন্টদের স্বাক্ষরসহ ভোটকেন্দ্রের ভোটের ফলাফল ঘোষণা, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অন্তত এক বছর আগে থেকেই সব দলের লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিশ্চিত করা, ‘না’ ভোটের বিধান সংযুক্ত করা, প্রবাসীদের ভোটাধিকার, ইভিএম ব্যবহারের বিষয়টি বাদ দেয়া, সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের সুবিধা ও নিরাপত্তা বাতিল করা এবং সব প্রার্থীকেই সেই নিরাপত্তা প্রদান, যেসব জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতর্কিত তাদের নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা, গণমাধ্যম কর্মীদের সব কেন্দ্রে উম্মুক্ত প্রবেশাধিকার, স্বাধীন, স্বতন্ত্র ও ক্ষমতাবান সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান।
এছাড়া আরও দাবি হচ্ছে জনবল ও বাজেটের দিক থেকেও নির্বাচন কমিশনের জন্য সরাসরি প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রাপ্তি নিশ্চিত করা, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল ও জোটসমূহের সারাদেশে প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে আনুপাতিক হারে প্রতিনিধি নির্বাচনের বিধান চালু করা, ভোটারের সংখ্যা অনুযায়ী নির্বাচনী এলাকা পুনঃনির্ধারণের কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া, আরপিও’র ধারাসমূহ বাতিল করা, নির্বাচনে ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতার ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো, নির্বাচনে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকেরা যাতে নির্বিঘ্নে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পারেন তা নিশ্চিত করা, জাতীয় নির্বাচনে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেবার বিধান চালু করা এবং গত নির্বাচনসমূহের অভিজ্ঞতার আলোকে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রার্থী ও দলসমূহের নির্বাচনী আচরণবিধি ঢেলে সাজানো।
গত ৩১ জুলাই সুশীল সমাজ, ১৬ ও ১৭ আগস্ট গণমাধ্যম প্রতিনিধির সঙ্গে সংলাপের পর ২৪ আগস্ট থেকে নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ করছে ইসি।