ব্রেকিং নিউজ
Home | আন্তর্জাতিক | চট্টগ্রাম বন্দরে রপ্তানি অনিশ্চয়তা বাড়ছে

চট্টগ্রাম বন্দরে রপ্তানি অনিশ্চয়তা বাড়ছে

স্টাফ রিপোর্টার, ১৯ মার্চ, বিডিটুডে ২৪ডটকম : রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে সঠিক সময়ে পণ্য রপ্তানি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সোমবার সকাল থেকে পণ্য ডেলিভারি বন্ধ রয়েছে। হরতালের কারণে বেসরকারি কনটেইনার ডিপোগুলোতে দুই হাজারের বেশি একক রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনার আটকা পড়েছে। কনটেইনারগুলো বন্দর থেকে নেওয়া সম্ভব না হওয়ায় কনটেইনারবাহী জাহাজও নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী ছেড়ে যেতে পারছে না।

বন্দর এলাকার আশপাশের কোনো প্রাইভেট আইসিসিডিতেও কনটেইনার পরিবহন করা হয়নি। হরতাল শেষে অন্যকোনো ইস্যুতে নতুন করে হতরতাল কর্মসূচি না এলে মঙ্গলবার রাতে পণ্য ডেলিভারি শুরু হতে পারে বলে বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। তবে বুধবারের রাজধানীর সকাল-সন্ধ্যার হরতালকে কেন্দ্র করে পণ্য ডেলিভারির বিষয়ে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা এখনও কাটেনি। বন্দর কর্মকর্তাদের মতে, পর্যাপ্ত রপ্তানি পণ্য ছাড়াই কনটেইনারবাহী জাহাজ বন্দর ত্যাগে বাধ্য হলে অনেক রপ্তানিকারক নির্ধারিত সময়ে পণ্য পাঠাতে পারবেন না।

জানা যায়, পণ্য রপ্তারি প্রক্রিয়া অনুযায়ী কারখানা থেকে কাভার্ড ভ্যানে করে পোশাকশিল্পসহ বিভিন্ন রপ্তানি পণ্য বেসরকারি কনটেইনার ডিপোতে সংরক্ষণ করা হয়। এসব ডিপোতে কাভার্ড ভ্যান থেকে খালাস করে কনটেইনারে পণ্য বোঝাই করে বন্দর ইয়ার্ডে পাঠানো হয়। এরপর বন্দর ইয়ার্ড থেকে সরাসরি জাহাজে তুলে কনটেইনার ভর্তি পণ্য রপ্তানি হয়।

বেসরকারি কনটেইনার ডিপো মালিক সমিতির সচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, ‘১৬টি সেরকারি ডিপোতে এখন পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি একক কনটেইনার আটকা পড়েছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় রফতানি পণ্যবাহী কনটেইনার বন্দরে আসতে পারছে না। সোম ও মঙ্গলবার সারাদেশ এবং বৃহস্পতিবার রাজধানীতে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের কারণে আরও অন্তত ৫শ’ কনটেইনার বন্দরে প্রবেশ করতে পারবে না বলে কর্তৃপক্ষ আশঙ্কা করছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশই তৈরি পোশাক পণ্য।

বন্দরের পরিবহন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে সোমবার ২২ হাজার টিইইউএস কনটেইনার ছিল। চার শেডে ৯শ’ ইউনিট রিকন্ডিশন্ড ও নতুন গাড়ি ছিল। হরতালের আগে প্রতিদিন অন্তত এক হাজার কনটেইনার ডেলিভারি হয়। ১০ থেকে ১৫ ইউনিট গাড়ি ডেলিভারি নেয়া হতো। হরতালের কারণে সব বন্ধ রয়েছে। ওদিকে, বন্দরের বহির্নোঙরে বিভিন্ন ধরণের ৫০টি জাহাজ নোঙর করে আছে। এর মধ্যে ৩১টি জাহাজে আমদানি করা বিভিন্ন পণ্য রয়েছে।

রপ্তানিকারক ও সংশ্লিষ্টদের মতে, টানা কয়েকদিনের হরতালের কারণে দেশের রপ্তানি খাত বেশি অনিশ্চয়তায় পড়েছে। একদিকে বন্দর থেকে কাঁচামাল খালাস করতে না পারায় পোশাকশিল্পসহ রপ্তানিমুখী কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিক তৈরি পণ্য রপ্তানির জন্য প্রস্তুত হলেও বেসরকারি ইয়ার্ডে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। এসব কন্টেইনার বোঝাই করতে বন্দরের বিভিন্ন জেটিতে তিনটি জাহাজ অপেক্ষা করছে। বাংলাবাজার ঘাটসহ ১০টি ঘাটে লাইটার জাহাজ থেকে খালাস করা পণ্য খাতুনগঞ্জসহ বৃহৎ গুদামে ট্রাকে করে পরিবহন বন্ধ রয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানাম স্বাভাবিক রয়েছে বলে মঙ্গলবার জানান বন্দর সচিব সৈয়দ ফাহাদ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘হরতালের কারণে পথে সমস্যা থাকতে পারে। সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। বন্দরের অভ্যন্তরে স্বাভাবিক কাজকর্ম চলছে। তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’

তিনি বন্দরের অভ্যন্তরে কনটেইনার আটকা পড়েছে এ কথায় দ্বিমত পোষণ করে বলেন, ‘কনটেইনার আটকা পড়বে কেন, কনটেইনার রয়েছে। কার্যক্রমও স্বাভাবিক রয়েছে।’

এ ব্যাপারে সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক এস এম নুরুল হক বলেন, ‘বন্দর দিয়ে নির্ধারিত সময়ে পণ্য পাঠাতে না পারলে সবচেয়ে বিশি ক্ষতির মুখে পড়বে দেশের পোশাকশিল্প। বিদেশি ক্রেতা পণ্য না পেলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের ক্ষতিপূরণও গুণতে হয়। এর ফলে বিদেশি ক্রেতাদের বিকল্প বাজারের দিকে ঝুঁকতে উৎসাহ সৃষ্টি হবে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, হরতালে বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানো-নামানো হয়। তবে টানা হরতালের কারণে রপ্তানি পণ্য না পাওয়ায় নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী জাহাজ বন্দর ত্যাগ করতে পারছে না। আবার বন্দর ত্যাগ করলেও পর্যাপ্ত রপ্তানি পণ্য ছাড়াই জাহাজ বন্দর ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। বন্দরের হিসাব অনুযায়ী আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনার নিয়ে দুটি জাহাজ বন্দর জেটিতে ভিড়েছে। এ নিয়ে বন্দরের মূল জেটিতে এখন কনইেনার জাহাজ আছে আটটি। আগামীকাল আরও তিনটি জাহাজ জেটিতে ভেড়ার কথা রয়েছে। এসব জাহাজ থেকে আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনার খালাস হচ্ছে।

বন্দরের পরিবহন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, হরতালের আগে বন্দর জেটিতে যেসব জাহাজ ভিড়েছে, সেগুলো রপ্তানি পণ্য নিয়ে বন্দর ত্যাগ করতে সমস্যা হবে না। তবে গত সোমবার থেকে যেসব জাহাজ ভিড়েছে, সেগুলো পর্যাপ্ত রপ্তানি পণ্য নিয়ে বন্দর ছেড়ে যেতে পারবে কি না, তা অনিশ্চিত। কারণ, ইপিজেড ও বন্দরের আশপাশ এলাকা থেকে অল্পকিছু রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার বন্দর ইয়ার্ডে পৌঁছানো গেলেও চাহিদার তুলনায় তা খুবই নগন্য।

x

Check Also

‘গ্রেটার সিলেট এসোসিয়েশন ইন স্পেন’ নির্বাচনে মুজাক্কির – সেলিম প্যানেল বিজয়ী

জিয়াউল হক জুমন, স্পেন প্রতিনিধিঃ সিলেট বিভাগের চারটি জেলা নিয়ে গঠিত গ্রেটার ...

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সাথে পর্তুগাল আওয়ামী লীগের মতবিনিময় সভা

আনোয়ার এইচ খান ফাহিম ইউরোপীয় ব্যুরো প্রধান, পর্তুগালঃ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার ...