ব্রেকিং নিউজ
Home | ফটো সংবাদ | গাজীপুর সিটি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হওয়ার দৌঁড়ে আওয়ামী লীগের চার জন

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হওয়ার দৌঁড়ে আওয়ামী লীগের চার জন

স্টাফ রিপোর্টার : গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হওয়ার দৌঁড়ে আওয়ামী লীগের চার জনের নাম থাকলেও ‍মূল লড়াই হবে দুই জনের মধ্যে। এর হলেন টঙ্গী পৌরসভার সাবেক মেয়র আজমত উল্লাহ খান এবং নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম।

এদের দ্বৈরথ পাঁচ বছর আগের নির্বাচনেও দুর্ভাবনায় ফেলেছিল। ক্ষমতাসীন দলের বিচারে এই দুই জনের মধ্যে আজমত অপেক্ষাকৃত যোগ্য এবং জাহাঙ্গীর বেশি জনপ্রিয়। এদের মধ্যে একজনকে বেছে নেয়ার কঠিন কাজটা করতে হবে তাদেরকে।

আগামী ১৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ভোট হবে। ভোটে দাঁড়াতে হলে প্রার্থিতা জমা দেয়ার শেষ সময় ১২ এপ্রিল। আর প্রত্যাহার করার সুযোগ আছে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত।

অর্থাৎ দলগুলোকে ২৩ এপ্রিলের মধ্যে তাদের প্রার্থী বাছাই করলেই চলবে। তবে সচরাচর আগেই জানিয়ে দেয়া হয় তাদের প্রার্থী কে।

দেশের সবচেয়ে বড় সিটি করপোরেশনটিতে ভোটার সংখ্যা সংখ্যা ১১ লাখ ৬৪ হাজার ৪২৫ জন। ফলে এই ভোটে জয় পরাজয় আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দুই দলের গ্রহণযোগ্যতার একটি পরীক্ষা হবে। আর এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে মরিয়া হয়েই লড়বে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।

গাজীপুর আওয়ামী লীগের দূর্গ-এই ধারণা ভেঙে গেছে পাঁচ বছর আগেই। এক লাখ ভোটে আজমতকে হারিয়ে তখন মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপির এম এ মান্নান।

এবারও মান্নানকেই বিএনপি প্রার্থী করতে চায়। তবে কোনো কারণে তাকে করা না গেলে বিকল্প হিসেবে থাকবের হাসান উদ্দিন সরকার। তবে এ নিয়ে দুই নেতার মধ্যে কোনো বিরোধ নেই।

পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগে আজমত ও জাহাঙ্গীরের সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ প্রবল। গত নির্বাচনে আজমতের অপ্রত্যাশিত হারের পেছনে জাহাঙ্গীরের নিরব বিরোধিতাকেই দায়ী করেন আজমতের সমর্থকরা।

ওই নির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে আওয়ামী লীগে ছিল নাটকীয়তা। ক্ষমতাসীন দল তখন আজমতকে সমর্থন দিলেও দলের জাহাঙ্গীর আলম ভোট করবেন জানিয়ে অটল ছিলেন। পরে হঠাৎ উধাও হয়ে যান জাহাঙ্গীর আর পরে একটি হাসপাতালে সন্ধান মেলে তার।

দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশের পর জাহাঙ্গীর ভোট থেকে সরে দাঁড়ান। কিন্তু কাঁদতে কাঁদতে তার এই ঘোষণার কারণে দলের ভেতর তৈরি হওয়া বিভেদের ফল পরে ভোটে।

আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘গাজীপুরে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে আমাদের বিজয় নিশ্চিত। আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ আজমত ও জাহাঙ্গীরের সমর্থকদেরকে এক করা।’

ওই নেতা বলেন, ‘আজমত উল্লাহ তার দক্ষতার প্রমাণ রেখেছেন টঙ্গী পৌরসভার মেয়র হওয়ার পর থেকেই। তিনি দুই জনের মধ্যে অধিক যোগ্য সন্দেহ নেই। কিন্তু তিনি আবার গত নির্বাচনে বড় ব্যবধানে হেরেছেন।’

আর জাহাঙ্গীরের জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত। তিনি আবার জয়দেবপুরের বাসিন্দা। বিএনপির প্রার্থী মান্নান হলে তিনি ওই এলাকায় আঞ্চলিকতার সুর তুলে ভোট টানতে পারবেন না। এখন কাকে দল বেছে নেবে সেটার জন্য আগামী শনিবার পর্যন্ত অপেক্ষার বিকল্প নেই।’

আজমত উল্লাহর বাড়ি টঙ্গীতে। অবশ্য পাঁচ বছর আগের ভোটে তিনি নিজ এলাকাতেও জিততে পারেননি-এই বিবেচনাও রয়েছে আওয়ামী লীগে।

এই নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কাছে আগামী ৫ ও ৬ এপ্রিল মনোনয়ন ফরম বিক্রি করবে আওয়ামী লীগ। আগামী ৮ এপ্রিল মনোনয়ন ফরম সংগ্রহকারীদের সঙ্গে বৈঠক করবে দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড। বৈঠকেই চূড়ান্ত হবে দলের প্রার্থী কে হবে।

কাকে বেছে নেবে আওয়ামী লীগ?-এমন প্রশ্নে দলের ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘আমাদের দলে কেউ আগাম বলে দেবেন, সে সুযোগ নেই। আমরা ধারণা করতে পারি, তবে সেটা সত্য নাও হতে পারে।’

‘আগামী ৮ এপ্রিল আমাদের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক হবে। এ বৈঠকে মনোনয়ন প্রত্যাশী সকলকে ডাকা হবে। সেখানে যাকে বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হবে, তিনিই পাবেন দলীয় মনোনয়্ন।’

তবে একটি কথা নওফেল বলেছেন, সেটা হলো, আওয়ামী লীগ চায় না দলের মধ্যে কোনো বিরোধের কারণে এবার ভোটে পরাজয় হোক।

আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, গত নির্বাচনে শেষ সময়ে সরে দাঁড়ানোর কারণে জাহাঙ্গীর আলমের প্রতি মানুষের একটা সহমর্মিতা ছিল। তা ছাড়া ভোটের পরও তিনি মাঠ ছাড়েননি।

আবার আজমত উল্লাহ খানের রয়েছে বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ইতিহাস। তিনি দীর্ঘ সময় ধরে ছিলেন টঙ্গী পৌরসভার মেয়র। রাজনীতিবিদ হিসাবেও তার স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে।

আজমত উল্লাহ খান  বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দল। এখানে শুধু আওয়ামী লীগ নয়, সহযোগী ও আওয়ামী পরিবারের যে কোন সদস্যই প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করতে পারেন। সেই হিসাবে গাজীপুরেও অনেক প্রার্থী হতে চাইবেন তা খুবই স্বাভাবিক বিষয়।’

দল যাকেই মনোনয়ন দেবে, তিনি বিরোধিতা করবেন না, এটা স্পষ্টতই জানিয়ে দেন আজমত। বলেন, ‘১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে যারা সংগঠনের হাল ধরেছিল তাদের মধ্যে আমি অন্যতম। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আমি কোন দিন নীতির প্রশ্নে আপস করি নাই। আমার রাজনীতি সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য, এ লক্ষ্যে আমি কাজ করছি। আমি মানুষেরই জন্যই রাজনীতি করি; এমপি বা মেয়র হওয়ার জন্য নয়।’

‘দল বিচার বিশ্লেষণ করে যাকেই মনোনয়ন দেবে মহানগরের সভাপতি হিসাবে দলকে বিজয়ী করার জন্য সকল ধরনের প্রচেষ্টা চালানো তাই আমি করব।’

অন্যদিকে জাহাঙ্গীর আলম দাবি করেছেন, তিনি মনোনয়নের বিষয়ে ইঙ্গিত পেয়ে গেছেন। বলেন, ‘দল আমাকে মাঠ পর্যায়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে এবং আগামী নির্বাচনে আমাকে মনোনয়ন দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। আমি দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি এবং বিভিন্ন ওয়ার্ডে ও মহল্লায় সামাজিক কর্মকাণ্ডে শরিক হয়ে আগামী সিটি নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

মগড়া নদীর ভাঙ্গনে বিলীনের পথে বেশ কয়েকটি পরিবারের বসত ভিটে ও ঘরবাড়ি

সুদর্শন আচার্য্য, মদন (নেত্রকোণা) ঃ নেত্রকোণা মদন পৌর সদরের ১,২,৩,৮ ও ৯নং ...

মদনে দাতা সদস্যের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে মাদ্রাসার সুপারের বিরুদ্ধে

সুদর্শন আচার্য্য, মদন (নেত্রকোণা) ঃ নেত্রকোণা মদন উপজেলার বালালী বাঘমারা খন্দকার আব্দুর ...