কুদরতে খোদা সবুজ, কুষ্টিয়া : বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১২৭তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে কুষ্টিয়ার কুমারখালির ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ীতে সোমবার (১৬অক্টোবর) থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী লালন স্মরণ উৎসব। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এবং লালন একাডেমি ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের আয়োজনে তিন দিনব্যাপী এ উৎসবে থাকছে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গ্রামীণ মেলা। ইতোমধ্যেই অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ভক্ত অনুসারীরা আগে থেকেই লালন আখড়ায় জায়গা করে নিয়েছে। অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে মাজার প্রাঙ্গণ ধুয়ে মুছে এক বর্ণিল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে লালন একাডেমী কর্তৃপক্ষ। সোমবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব-উল আলম হানিফ আনুষ্ঠানিকভাবে লালন স্মরণ উৎসবের উদ্বোধন করবেন। কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. জহির রায়হানের সভাপতিত্বে প্রথমদিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম মেহেদী হাসান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যন হাজী রবিউল ইসলাম প্রমুখ। দ্বিতীয় দিন প্রধান অতিথি থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। বিশেষ অতিথি থাকবেন কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালি-খোকসা) আসনের সংসদ সদস্য আব্দুর রউফ। তৃতীয় দিন প্রধান অতিথি থাকবেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া। তিরোধান দিবস উপলক্ষে লালন মাজার প্রাঙ্গণে বসছে সাধুদের হাট। আখড়াবাড়ি ঘুরে দেখা গেছে, ইতোমধ্যেই মাজার প্রাঙ্গণে আসতে শুরু করেছে বাউল ভক্ত ও সাধুরা। লালন উন্মুক্ত মঞ্চে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে। কালিগঙ্গা নদীর তীরে হরেক রকমের পণ্যের পসরা বসাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আশপাশে ও আখড়াবাড়ি চত্বরে লালন ভক্তরা আসন গেঁড়ে বসেছেন। তাদের মুখে মুখে সাঁইজির বাণী। লালন মাজারের প্রধান খাদেম ফকির মহম্মদ আলী শাহ বলেন, ১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক উপ-মহাদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী আধ্যাতিœক সাধক বাউল সম্রাট লালন ফকির মৃত্যুর সময় তার শিষ্যদের বলেছিলেন, আমি কোন ধর্মের লোক নয়, থাকার ঘরেই আমার সমাধি হবে, আর সে সময় আমার গান চলবে। এরপর থেকে প্রথমে লালন অনুসারীরা, পরে আখড়া কমিটি ও লালন একাডেমি এই উৎসব পালন করে আসছে। জাত পাত ভূলে দেশ বিদেশের হাজার হাজার ভক্ত অনুসারী এখন থেকেই আসতে শুরু করেছে ছেউড়িয়ায় লালন আখড়াবাড়ীতে। তিনি আরো জানান, এই উৎসবে বাউল সাধক, ভক্ত আশেকানদের আখড়াবাড়িতে আসতে যেমন কোনো আমন্ত্রণপত্র লাগে না, তেমনি প্রথার বাইরেও তারা কিছু করেন না। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম মেহেদী হাসান জানান, উৎসব নির্বিঘœ করতে সব ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুরো এলাকাটি আমরা সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসবো। কালী নদীতে আমাদের নৌ টহল থাকবে। আমাদের গোয়েন্দা তৎপরতা থাকবে এবং শহরকেন্দ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাও আমরা জোরদার করবো। লালন একাডেমির সভাপতি ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. জহির রায়হান বলেন, ফকির লালন শাহের তিরোধান দিবস উপলক্ষে এখানে আসা দেশ-বিদেশের লালনপ্রেমী অনুসারীদের থাকা-খাওয়াসহ তাদের নিরাপত্তায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ অনুষ্ঠানের আমাদের সমগ্র এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আসছে। আশা করি এবছর দর্শণার্থী ভক্তরা ভালো নিরাপক্তা পাবে।
উল্লেখ্য, বাংলা ১২৯৭ সালের পয়লা কার্তিক মানব ধর্মের অন্যতম প্রবর্তক আধ্যাতিœক সাধক ফকির লালন শাহের তিরোধানের পর থেকেই কালীনদীর তীরে পালিত হয়ে আসছে লালন স্মরণোৎসব। এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে প্রতি বছর লালনের আখড়াবাড়ি কুমারখালীর ছেউড়িয়ায় মানুষের সমাগম হয়। এ উৎসবকে ঘিরে দেশ-বিদেশ থেকে দলে দলে মানুষ ছুটে আসেন লালনের আখড়ায়। কয়েক দিন আগ থেকেই লালন ভক্ত ও বাউলরা লালনের আখড়াবাড়িতে হাজির হন। এরপর শুরু হয় খ- খ- আস্তানা আর লালনের গানের আসর।