হুমায়ুন কবির,কালিয়াকৈর(গাজীপুর)প্রতিনিধি ॥
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার পূর্বচান্দরা এলাকায় বুধবার দিনব্যাপী বন বিভাগ ও থানা পুলিশ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছেন। এসময় বনের জমিতে থাকা অর্ধশতাধিক দোকানপাঠ ও ঘর-বাড়ি উচ্ছেদ করা হয়। এতে প্রায় এক কোটি টাকা মূল্যের বন বিভাগের এক একর জমি উদ্ধার করা হয়।এলাকাবাসী, বনবিভাগ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে,কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর-বড়ইবাড়ি আঞ্চলিক সড়কের পূর্বচান্দরা এলাকায় মাটিকাটা রেলক্রসিংয়ের পাশে বনবিভাগের জমিতে দীর্ঘদিন আগে সার্বজনীন দূর্গা মন্দির গড়ে উঠে। পরে মন্দিরের নাম ব্যবহার করে ওই মন্দির কমিটির সভাপতি সুশিল চন্দ্র বর্মণ ও স্থানীয় একটি দালাল চক্র গজারি গাছ কেটে সেখানে দোকানপাঠ, ঘর-বাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করে। তারা কিছু স্থাপনা মোটা অংকের টাকা লেনদেনের বিনিময়ে বিভিন্ন লোকের কাছে বিক্রি করে। স্থাণীয় বন অফিসে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমেই তারা বনের জমিতে এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া গত দূর্গা পূজাকে কেন্দ্র করে মন্দিরের নাম ব্যবহার করে মন্দির কমিটির সভাপতি সুশীল সেখানে আরো ২৫-৩০টি দোকান বসান। পরে তিনি প্রত্যেক দোকান থেকে তিন দিনের জন্য ৯ হাজার টাকা করে আদায় করেন। এছাড়া প্রতিদিন দোকান প্রতি ৬০-৮০ টাকা করে জেনারেটর বিল বাবদ আদায় করতেন তিনি। কিন্তু সেখান থেকে এক টাকাও মন্দিরের কোনো কাজ করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ওই মন্দির কমিটির সদস্য জয়দেব বর্মণ,স্থানীয় সুশময় চন্দ্র বর্মণ,বিপুল বর্মণসহ আরো অনেকেই। বিষয়টি জানতে পেরে বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কালিয়াকৈর রেঞ্জ কর্মকর্তা একেএম আজাহারুল ইসলাম ও কালিয়াকৈর থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই জাফর আলীর নেতৃত্বে বনবিভাগের লোকজন ও পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। অভিযান চালিয়ে বনের জমিতে থাকা দোকানপাঠ,ঘর-বাড়িসহ প্রায় অর্ধশতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এসময় টিন, কাঠসহ স্থাপনার তৈরি বিভিন্ন মালামালও জব্দ করা হয়। এতে প্রায় এক একর বনের জমি উদ্ধার হয়েছে। যার মূল্য প্রায় এক কোটি টাকা। ভুক্তভোগী দোকান ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন, আরশাদসহ আরো কয়েকজন দোকান ব্যবসায়ী জানান, প্রতি তিন দিনে দোকান প্রতি ৯ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রতিদিন দোকান প্রতি জেনারেটর বিল হিসেবে আরো ৬০-৮০ টাকা করে নিয়েছে। কিন’ বনবিভাগের লোকজন আমাদের দোকানপাট ভাংচুর করেছে। এতে নষ্ট হয়েছে দোকানের বিভিন্ন মালামাল। বনের জমিতে স্থাপনা তৈরি করে বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করে অভিযুক্ত ওই সার্বজনীন দূর্গা মন্দিরের সভাপতি সুশিল চন্দ্র বর্মণ বলেন, পুজাকে কেন্দ্র করে মন্দিরের স্বার্থে বন অফিসে জানিয়েই সেখানে কিছু দোকানপাঠ বসানো হয়েছিল। সেখান থেকে দোকান প্রতি ২ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। তবে ওই টাকা মন্দিরের কাজে লাগানো হয়। কালিয়াকৈর বন রেঞ্জ কর্মকর্তা একেএম আজাহারুল ইসলাম জানান, বনের জমি দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে এমন খবর পেয়ে ওই এলাকায় অভিযান চালানো হয়। অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এতে প্রায় এক কোটি টাকা মূল্যের বনের জমি উদ্ধার করা হয়।তবে এ অভিযান একটি চলমান প্রক্রিয়া। এ রেঞ্জের আওতাধীন বনের জমিতে থাকা সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে বলেও জানান তিনি। কালিয়াকৈর থানার সেকেন্ড অফিসার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ জাফর আলী জানান, বনের জমিতে উচ্ছেদ অভিযানে যেন কোনো বিশৃঙ্খলা না ঘটে। সেজন্য ওই অভিযানে পুলিশের একটি টিম সেখানে উপস্থিত ছিল।
