জালাল আহমদ, মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় পুলিশি অভিযানে দু’টি অবৈধ চা পাতা প্রস্তুতের কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে। বাগান থেকে চোরাই চা পাতা নিয়ে কারখানা করে চা পাতা প্রস্তুতের দায়ে দুই মহিলাসহ ৩ জনকে শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ভোররাত ২টায় আটক করে পুলিশ। আটককৃতদের স্বীকারোক্তিতে শুক্রবার দুপুরে অবৈধ চা কারখানা ও সংলগ্ন গোদাম থেকে প্রচুর পরিমাণে তৈরি চা পাতা জব্দ করা হয়।
থানা পুলিশসহ একাধিক সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে কমলগঞ্জের বিভিন্ন চা বাগান থেকে চোরচক্র রাতের আঁধারে কাচা চা পাতা চুরি করছে। আর এসব চোরাই চা পাতা দিয়ে চা প্রস্তুতের জন্য অবৈধ চা কারখানাও গড়ে ওঠে। এমমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার ভোররাত ২টায় কমলগঞ্জ থানার ওসি নিহার রঞ্জন নাথ, এসআই চম্পক ধাম ও এসআই নূর মিয়ার যৌথ নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের আলীনগর বস্তিতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় রিনি বেগম (৩৪), তার ভাই তাহের মিয়া (৪৫) এবং জমরুন নেছাকে (৩৫) আটক করে পুলিশ। আটককৃতদের কমলগঞ্জ থানায় নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে আলীনগর বস্তিতে চা পাতা প্রস্তুতের দু’টি অবৈধ কারখানার তথ্য পায় পুলিশ।
কমলগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নিহার রঞ্জন নাথ এ প্রতিনিধিকে জানান, আটক তিনজনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী শুক্রবার দুপুর ১২ টায় এসআই কুদ্দুছ মিয়া, এসআই চম্পক ধাম, এসআই নূর মিয়া ও এসআই হারুন মিয়ার নেতৃত্বে আলীনগর বস্তিতে বিশেষ অভিযান চালানো হয়। এ অভিযানে আটক রিনি বেগমের আলিশান বাড়ির পেছনে একটি অবৈধ চা কারখানা ও পলাতক জয়নাল মিয়ার বাড়িতে আরও একটি অবৈধ চা কারখানার সন্ধান পায় পুলিশ। এসব কারখানায় চা প্রস্তুতের জন্য ইট ও মাটি দিয়ে তৈরি করা বড় আকারের দু’টি চুলা পাওয়া গেছে। অবৈধ চা কারখানার সামনে ও পেছনে প্রস্তুতকৃত চা পাতা শুকানোর জন্য পাকা ঢালাই করা উঠানও রয়েছে। অভিযানকালে এ দু’টি পাকা করা উঠানে প্রচুর পরিমাণে চা পাতা ছিল। আটক রিনি বেগমের আলিশান পাকা বাড়ির কয়েকটি কক্ষ থেকে প্রায় ৫০০ কেজি চা পাতা উদ্ধার করা হয়। এছাড়া অবৈধভাবে চা পাতা প্রস্তুতে ব্যবহৃত বড় একটি কড়াই, বেশ কয়েকটি চালনি ও ঢালা জব্দ করা হয়।
নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এ দু’টি অবৈধ কারখানায় চোরাই চা পাতা দিয়ে চা পাতা উৎপাদন করা হচ্ছিল। আগে ঢেকিতে ছেঁটে চা পাতা প্রস্তুত করা হলেও এখন রাইস ও আটার মিলে শুকনো চা পাতা গুঁড়া করা হয়। বিষয়টি পুলিশের একটি মহলের জানা থাকলেও তা প্রতিরোধে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এলাকাবাসী সূত্র জানায়, মৌলভীবাজারের গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের জনৈক কর্মকর্তা এক সপ্তাহ আগে আলীনগর বস্তিতে অবৈধ চা কারখানায় গিয়ে আর্থিক সুবিধা নিয়ে চলে যান। বিষয়টি কমলগঞ্জ থানার পুলিশকে অবহিত করা হলে শুক্রবার আলীনগর বস্তিতে দু’দফা অভিযান চালিয়ে অবৈধ চা কারখানার সন্ধান পায় পুলিশ। এ সময় সরঞ্জামসহ এ কারখানায় উৎপাদিত প্রচুর পরিমাণে চা পাতাও জব্দ করা হয়।
কমলগঞ্জ থানার ওসি আরও জানান, এ অভিযানে দু’টি অবৈধ চা কারখানার সন্ধান পাওয়ার পর তা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানিয়েছেন। এ ঘটনায় কোনো চা বাগান কর্তৃপক্ষ নিজেরা মামলা না করলেও পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
প্রসঙ্গত, চা বাগান থেকে কাঁচা চা পাতা চুরি করে ট্রাকযোগে পাচারকালে গত ৩১ আগস্ট ভোর ৫টায় এএসপি (কুলাউড়া সদর সার্কেল) আলমগীর হোসেন ট্রাকসহ শমশেরনগর ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্যসহ ২ জনকে আটক করেন।