স্টাফ রিপোর্টার : গত এপ্রিলে ঢাকা মহানগর বিএনপির দক্ষিণ ও উত্তরের কমিটি ঘোষণা করা হয়। বলা হয়েছিল, এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে। কিন্তু দেখতে দেখতে চলে গেছে চার মাস। এখনো নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারছেন না কবে আলোর মুখ দেখবে গুরুত্বপূর্ণ এই দুই শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি।
নেতাকর্মীরা বলছেন, নানা গ্রুপিং, পছন্দের ব্যক্তিদের পদে আনাসহ নানা কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা দেরি হচ্ছে।
নেতাদের দাবি, আন্দোলন-সংগ্রামে ত্যাগী নেতাদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হবে। এই জন্য যাচাই-বাছাই করতে একটু দেরি হচ্ছে। শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।
গত ১৮ এপ্রিল রাতে বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের আংশিক কমিটি অনুমোদন করা হয়। দক্ষিণে বিএনপির ৭০ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে সভাপতি করা হয় হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে এবং সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার।
আর ৬৬ সদস্যবিশিষ্ট ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি হন এম এ কাইয়ুম এবং সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকার দুই আংশিক কমিটি অনুমোদনের কথা জানিয়ে বলা হয়, এই অনুমোদিত নির্বাহী কমিটি এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবে।
কিন্তু নির্ধারিত সময়ের চার মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি দায়িত্বপ্রাপ্তরা। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগর দক্ষিণে পদপ্রত্যাশী লালবাগ থানার একজন নেতা বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছি। প্রত্যাশায় ছিলাম মহানগর কমিটিতে মূল্যায়ন পাব। কিন্তু এত দিন হয়ে গেল এখনো কোনো খবর নেই। কবে কমিটি হবে তাও কেউ বলতে পারছে না। অথচ নতুন কমিটির কাছে আমাদের আশা ছিল ভালো কিছু পাওয়ার।’
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আন্দোলনে ব্যর্থতার কারণে সাদেক হোসেন খোকা ও আব্দুস সালামের নেতৃত্বাধীন মহানগর কমিটি ভেঙে দেয় বিএনপি। এরপর ওই বছর ১৮ জুলাই দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক করে ৫২ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ছয় মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাদের।
এর দুই বছর আট মাস পর ঢাকাকে দুই ভাগে ভাগ করে নতুন কমিটি দিল বিএনপি।এদিকে কমিটি ঘোষণার আগে থেকেই বিদেশে অবস্থান করছেন মহানগর উত্তরের সভাপতি এম এ কাইয়ুম। কমিটি ঘোষণার পর মালয়েশিয়ায় বসে দলের কার্যক্রম পরিচালনার কথা বলেছিলেন তিনি। তার সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান দেশে রয়েছেন। কিন্তু সভাপতি বাইরে থাকায় তিনি কাজে ঠিকভাবে ছন্দ পাচ্ছেন না বলে জানা গেছে। আর এ কারণে দলের কর্মসূচিতে দক্ষিণের চেয়ে বেশ পিছিয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর। সর্বশেষ দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযানেও উত্তর তেমন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি।
অবশ্য কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন দক্ষিণের নেতাকর্মীরা। সদস্য সংগ্রহ অভিযানের পাশাপাশি সবশেষ মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের জন্য দলের ত্রাণ তহবিলে অর্থ সহায়তা দিয়েছেন দক্ষিণ শাখার নেতারা।
কবে নাগাদ পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে জানতে চাইলে হাবিব-উন-নবী খান সোহেল বলেন, ‘নতুন কমিটি হওয়ার পর আমরা সংগঠনের ভেতরে নানা বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। আন্দোলন কর্মসূচিতে যারা সক্রিয় ছিলেন তাদের তথ্য সংগ্রহ করছি। আশা করছি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে পারব।’
দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারও একইভাবে বলেন, ‘যারা কমিটিতে জায়গা পাবেন তাদের বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নিতে সময় লাগছে। তথ্য সংগ্রহ চলছে। আশা করি বেশি সময় লাগবে না পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে।’
পছন্দের লোকদের কমিটিতে জায়গা দিতে এবং গ্রুপিংয়ের কারণে বিলম্ব হচ্ছে- এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এসব অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। ব্যক্তিপছন্দে নয়, দলের জন্য কাজের ভিত্তিতে পদ দেয়া হবে।’
এদিকে মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।