ব্রেকিং নিউজ
Home | জাতীয় | কতটা বাড়ছে সরকারি শ্রমিকদের মজুরি

কতটা বাড়ছে সরকারি শ্রমিকদের মজুরি

স্টাফ রিপোর্টার :  রাষ্ট্রায়ত্ত কল-কারখানার শ্রমিকদের মজুরি শতভাগ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন। এতে শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরির সুপারিশ করা হয়েছে ৮ হাজার ৩শ টাকা এবং সর্বোচ্চ মুজরির সুপারিশ করা হয়েছে ১১ হাজার ৬শ টাকা। মজুরির পাশাপাশি খাতভিত্তিক ভাতা বৃদ্ধির সুপারিশও করা হয়েছে। সুপারিশে ঢাকা মহানগরীতে বাড়িভাড়া মূল বেতনের ৬০ ভাগ এবং অন্যান্য স্থানে ৫৫ ভাগ করার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া, সরকারি চাকরিজীবীদের মতো শ্রমিকদেরও মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে নববর্ষ ভাতার সুপারিশ করা হয়।
মঙ্গলবার (৪ জুলাই) কমিশনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। সাবেক সচিব নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বাধীন কমিশন এর আগে গত মার্চের শেষ দিকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়।
এদিকে, সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে মজুরি কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের কথা থাকলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ওই সময় ধরে ভূতাপেক্ষভাবে (আগের কোনও সময় থেকে কার্যকর) বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে ২০১৫ সালের পরিবর্তে ২০১৬ সালের জুলাই থেকে এই সুপারিশ কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কমিশনের রিপোর্টের বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এখন এই প্রতিবেদন পর্যলোচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে। যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হলে সেটা মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের মধ্য দিয়ে কার্যকর হবে।’ জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশনে সরকার ও শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি থাকায় চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বড় ধরনের কোনও পরিবর্তন আসবে না বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
মজুরি কমিশনের সুপারিশ কখন থেকে বাস্তবায়ন হবে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয় বেতন স্কেলের মতো শ্রমিকদের মজুরিও ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। শ্রমিকদের পক্ষ থেকেও একই দাবি রয়েছে। তবে, সরকারের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত হবে। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’ প্রধানমন্ত্রীকে শ্রমিকবান্ধব উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয় শ্রমিকদের স্বার্থ বিবেচনা করে ভালো সিদ্ধান্ত নেবেন।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে ওয়েজ কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হচ্ছে (ছবি- ফোকাস বাংলা)

জানা গেছে, মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তরের সময় বাস্তবায়নের সময়কাল নিয়ে আলোচনা হয়। ওই সময় শ্রমিক পক্ষ ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে বাস্তবায়নের দাবি জানালে প্রধানমন্ত্রী তার স্পষ্ট জবাব দেননি। তিনি জানান, চূড়ান্ত প্রতিবেদন এলে তারপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।
রাষ্ট্রায়ত্ত কল-কারখানায় বর্তমানে প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। ২০১০ সালে সর্বশেষ মজুরি কাঠামো ঘোষণা করা হয় তাদের জন্য। এরপর ৭ বছরে দ্রব্যমূল্যসহ জীবনধারণের সব ব্যয় বাড়লেও তাদের মজুরি বাড়েনি। পরে ২০১৬ সালের আগস্ট সাবেক শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খানকে সভাপতি করে ১৮ সদস্যের জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন গঠন করা হয়। ওই কমিশন ১৯টি বৈঠকের মাধ্যমে গত ২৮ মার্চ প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে তা মন্ত্রণালয়ের কাছে জমা দেয়।
নতুন এ কাঠামোয় প্রথম গ্রেডের মজুরি সুপারিশ হয়েছে ৮ হাজার ৩শ টাকা। বর্তমানে এই গ্রেডের শ্রমিকরা বেতন পান ৪ হাজার ১৫০ টাকা। দ্বিতীয় গ্রেডে মজুরি সুপারিশ হয়েছে ৮ হাজার ৪শ টাকা, বর্তমানে এই গ্রেডের বেতন ৪ হাজার ২শ টাকা। তৃতীয় গ্রেডে সুপারিশ করা মজুরি ৮ হাজার ৫৫০ টাকা, যা বর্তমানে ৪ হাজার ২৭৫ টাকা। প্রস্তাবিত কাঠামোতে সর্বোচ্চ ১৬তম গ্রেডে মজুরি সুপাশি হয়েছে ১১ হাজার ২০০ টাকা, যা বর্তমানে ৫ হাজার ৬০০ টাকা।
মজুরি কাঠামোয় শ্রমিকদের বাড়িভাড়া ছাড়াও বেশ কয়েক ধরনের ভাতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বাড়ি ভাড়া ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে মূল বেতনের ৬০ শতাংশ ও ঢাকার বাইরের জন্য ৫৫ শতাংশ। চিকিৎসা ভাতার ক্ষেত্রে জনপ্রতি এক হাজার ৭শ টাকা। যাতায়াত ভাতা প্রতি উপস্থিতির জন্য ২০ টাকা হারে (কারখানা এলাকায় বসবাসকারী ও কারখানার যানবাহনে যাতায়াতকারীরা এ ভাতা পাবেন না), শিক্ষা সহায়ক ভাতা এক সন্তানের জন্য ৫শ টাকা ও দুই সন্তানের জন্য এক হাজার টাকা, টিফিন ভাতা প্রতি উপস্থিতির দিনে বর্তমানের ৭ টাকার স্থলে ১৫ টাকা, নৈশ ডিউটি ভাতা প্রতি ঘণ্টায় বর্তমানের ঘণ্টাপ্রতি ৭ টাকার বদলে ১৫ টাকা, ধোলাই ভাতা মাসে একশ টাকা ও এটি প্রাপ্যতার সীমা বর্তমানের পাঁচ বছর থেকে কমিয়ে এক বছর করার সুপারিশ করা হয়েছে। মূল বেতনের হিসাব অনুযায়ী দু’টি উৎসব ভাতার পাশাপাশি সরকারি চাকরিজীবীদের মতো মূল বেতনের ২০ শতাংশ নববর্ষ ভাতার সুপারিশও করা হয়েছে। একইসঙ্গে কমিশন প্রভিডেন্ড ফান্ড, গ্রুপ ইন্স্যুরেন্স স্কিমের সুপারিশ করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

মগড়া নদীর ভাঙ্গনে বিলীনের পথে বেশ কয়েকটি পরিবারের বসত ভিটে ও ঘরবাড়ি

সুদর্শন আচার্য্য, মদন (নেত্রকোণা) ঃ নেত্রকোণা মদন পৌর সদরের ১,২,৩,৮ ও ৯নং ...

মদনে দাতা সদস্যের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে মাদ্রাসার সুপারের বিরুদ্ধে

সুদর্শন আচার্য্য, মদন (নেত্রকোণা) ঃ নেত্রকোণা মদন উপজেলার বালালী বাঘমারা খন্দকার আব্দুর ...