
এটা ঔদ্ধত্য, নাকি আত্মবিশ্বাস? দ্বিতীয়টাই মনে হচ্ছে। কদিন আগে প্রীতি ম্যাচে ভারতকে ভারতের মাটিতে ৪-২ গোলে হারিয়েছে ফিলিস্তিন। সম্প্রতি প্রীতি ম্যাচে শক্তিশালী কুয়েতের কাছে হেরেছে লড়াই করে (২-১)। এই এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপের গত আসরেই বাংলাদেশকে হারিয়েছে ২-০ গোলে। কাজেই আজ ৩-০ স্কোরলাইন তারা করতে পারবে না, এমন বাজি ধরাটা ঝুঁকিপূর্ণই।
এটা প্রখর বাস্তবতা। তবে এত নেতিবাচক কিছু আগেই ভাবার দরকার কী! বাংলাদেশ একেবারে ফেলনা নয়। ফিলিস্তিনের ফিফা র্যাঙ্কিং ১৫৩, বাংলাদেশের ১৬৯। দূরত্ব ১৪ পা। যেটুকু আছে, মাঠে কঠোর পরিশ্রম করে সেটি ঘুচিয়ে ফেলার সুযোগ তো আছেই।
আবেগ বলছে, আজ বাংলাদেশ সময় বেলা সোয়া ২টায় শুরু ম্যাচে শুভসূচনা করুক লাল-সবুজের দল। নবদিগন্তের সূচনা হোক লোডভিক ডি ক্রুইফের হাত ধরে। ক্রুইফ-তত্ত্ব এরই মধ্যে চালু হয়ে গেছে বাংলাদেশ দলে। এটা কি কম বড় শক্তি?
অন্য প্রেরণাও আছে। এই এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপের প্রথম আসরে ফিলিস্তিনের সঙ্গে ১-১ ড্র করেছিল বাংলাদেশ। এটা যদি দূর অতীতের ব্যাপার হয়, তাহলে বাংলাদেশের জন্য টাটকা সঞ্জীবনী ওই ক্রুইফই।
ডাচ কোচের অধীনে চ্যালেঞ্জ কাপের চূড়ান্ত পর্বে জায়গা পাওয়ার স্বপ্ন বাংলাদেশের। কিন্তু শুরুর ম্যাচটাই হয়ে গেল এক অর্থে ফাইনাল। যেটি ক্রুইফ নিজেও মানলেন, ‘হ্যাঁ, এই ম্যাচটা এক অর্থে ফাইনালই বলতে পারেন।’
কেন? এই ফিলিস্তিন দলের বড় শক্তি খেলোয়াড়দের উচ্চতা এবং শারীরিক সক্ষমতা। বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই ছয় ফুটের ওপর লম্বা। সুঠামদেহী। আত্মবিশ্বাস এবং অবশ্যই প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করার খুনে মানসিকতা দেখা গেল প্রতিটি খেলোয়াড়ের শরীরী ভাষায়।
বাংলাদেশের আশার জায়গা, সব খেলোয়াড়ই নিজেদের উজাড় করে দিতে তৈরি। অধিনায়ক সুজন যেমন বললেন, ‘শেষবিন্দু দিয়ে লড়ব।’ ক্রুইফের ভাষায়, ‘৯০ মিনিট ফাইট করব।’ মানে ‘ডু অর ডাই’ হিসেবেই ম্যাচটাকে দেখছে বাংলাদেশ।
একদিকে যুদ্ধ, অন্যদিকে উত্তেজনা। কোনো জাতীয় দল নিয়ে এটিই প্রথম ম্যাচ ক্রুইফের। নিজে তাই রোমাঞ্চিত, ‘ইয়েস আই এম এক্সাইটেড!’ বাংলাদেশকে চূড়ান্ত পর্বে নিতে পারলে বাফুফের কাছ থেকে বোনাস পাবেন ১০ হাজার ডলার। বোনাসটা বড় নয়, তবে একটা বাড়তি চেষ্টা কোচের দিক থেকে থাকছেই।
প্রতিপক্ষকে আঘাতটা করতে চান দুর্বল জায়গায়। কালকের অনুশীলন শেষে তাঁর কথা, ‘ছেলেরা ফিট আছে। একটাই আমাদের করণীয়, কঠোর পরিশ্রম। ম্যাচ শুরুর আগে আমরা উজ্জীবিত আছি। ৯০ মিনিট এটা ধরে রাখতে তৈরি আছি।’
‘ষোলো কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ’ বলে ক্রুইফ মনে করিয়ে দিলেন, ‘খেলোয়াড়েরা সবাই দেশের জন্য লড়তে প্রস্তুত। জাতীয় দলের খুব ভালো সুনাম নেই। তবে এ মুহূর্তে দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাই চায় ভালো করতে। এতে আমি খুশি।’
বিকেলে টিম হোটেলে সংবাদ সম্মেলনেও ফুরফুরে লাগল ক্রুইফকে। ব্যক্ত করলেন জয়ের আশাবাদ। ফিলিস্তিনকে যথেষ্টই সমীহ করলেন।
ফিলিস্তিন তো ‘আমরা গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতেই এসেছি’ বলে হুংকার ছেড়েছে কাঠমান্ডুর বাতাসে। ‘বাংলাদেশ ভালো দল’ এটা হয়তো সৌজন্য করেই বলে রাখলেন কোচ জামাল মাহমুদ। কিন্তু দোভাষীর সাহায্যে নিয়ে তরুণ কোচ এও জানাতে ভোলেননি, ‘এই কাঠমান্ডু থেকে এর আগে আমরা বাছাইপর্ব পেরিয়ে চূড়ান্ত পর্বে গিয়েছি চ্যালেঞ্জ কাপে। এবারও সেটাই চাই।’
সংবাদ সম্মেলনে নেপালের একঝাঁক সাংবাদিক। সবার বিচারেই তাদের দলটা ভালো। ঘরের মাঠে সুবিধা নিতে উদ্গ্রীব। একমাত্র নর্দার্ন মারিয়ানা আইল্যান্ডের কোচ কো লুয়াম খেনের কণ্ঠটা বেশ নিচু। তারা পেছনের বেঞ্চের ছাত্র!
দশরথ স্টেডিয়ামে ১৯৯৯ সালে প্রথম দক্ষিণ এশিয়ান গেমস ফুটবলে সোনা জিতেছিল বাংলাদেশ। সেই স্মৃতি কি জন্ম দেবে আরেকটি সুখস্মৃতির?
যেভাবে খেলাতে চান ক্রুইফ
ফর্মেশন: ৪-২-৩-১। এই ছকেই হল্যান্ড খেলে।
বল হারালে দ্রুত কেড়ে নাও বার্সেলোনার ছয় সেকেন্ড-তত্ত্ব মেনে।
প্রেসিং করো। নিখুঁত পাস দাও এবং বল নিজের পায়ে রাখো।
আক্রমণই মূল লক্ষ্য। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চাপে রাখো প্রতিপক্ষকে।
একাদশ করবেন আজ সকালে। কাদের খেলাবেন একাদশে, তা গোপনই রেখেছেন কোচ।
চ্যালেঞ্জ কাপের বাছাইপর্বে বাংলাদেশ
২ মার্চ বাংলাদেশ-ফিলিস্তিন বেলা ২-১৫ মি.
৪ মার্চ বাংলাদেশ-নেপাল বিকেল ৫-২০ মি.
৬ মাার্চ ন. মারিয়ানা আইল্যান্ড বেলা ২-১৫ মি.