ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের চেয়ে বেশি বয়সী সাম্রাজ্যকে ইরানি জনগণ উৎখাত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ। তিনি বলেছেন, ‘ইরানিরা হাজার হাজার বছর ধরে আছেন এবং তারা কিছু কিছু দেশের ইতিহাসের চেয়ে বেশি বয়সী সাম্রাজ্যের পতন প্রত্যক্ষ করেছেন। ইরানি জনগণ তাদের নিজেদের আড়াই হাজার বছরের সাম্রাজ্যেরও পতন ঘটিয়েছেন।’ সেজন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। সূত্র: পার্স টুডে।
ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত আন্তর্জাতিক পরমাণু চুক্তি থেকে গত মে মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর থেকে দুটো দেশের পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি হুমকি দেওয়ার ঘটনা বেড়েই চলেছে।
ওই চুক্তিতে ধীরে ধীরে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি পরিহার করার বদলে দেশটির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছিল। এখন চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর ওয়াশিংটন ইরানের উপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে।
কিন্তু ২০১৫ সালে আরো যেসব পক্ষ ওই চুক্তিতে সই করেছিল তারা ইরানের উপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে আসছে। এই দেশগুলো হচ্ছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, চীন এবং রাশিয়া।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের প্রেসিডেন্টের পাল্টাপাল্টি হুমকিতে এই উত্তেজনা আরো তীব্র হয়। গত রবিবার ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ হলে সেটা হবে এমন এক যুদ্ধ যা পৃথিবীতে এর আগে কখনো হয়নি।
এরপর এক টুইট বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, তেহরান যদি যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দেয় তাহলে ইরানকে এমন পরিণতি ভোগ করতে হবে যে পরিণতি ইতিহাসে অল্প কিছু দেশই এর আগে ভোগ করেছে। ট্রাম্পের এমন হুমকির জবাবে পাল্টা টুইট করেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারিফ।
টুইটে জাওয়াদ জারিফ বলেছেন, ইরানি জনগণের কাছে এ ধরনের হুমকির কোনো গুরুত্ব নেই। কারণ, গত ৪০ বছরে তারা নিয়মিত এরকম বক্তব্য শুনে এসেছে।
জারিফ বলেন, ‘ইরানিরা হাজার হাজার বছর ধরে আছেন এবং তারা কিছু কিছু দেশের ইতিহাসের চেয়ে বেশি বয়সি সাম্রাজ্যের পতন প্রত্যক্ষ করেছেন। ইরানি জনগণ তাদের নিজেদের আড়াই হাজার বছরের সাম্রাজ্যেরও পতন ঘটিয়েছেন। কাজেই ট্রাম্প আপনি সতর্ক হোন।”
পর্যবেক্ষকরা ট্রাম্পের ইরান বিরোধী হুমকিকে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে তার সাম্প্রতিক হেলসিংকি শীর্ষ বৈঠক থেকে জনমতকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করছেন। পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্প প্রায় দুই ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার কক্ষে বৈঠক করেন এবং আমেরিকার চির প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ রাশিয়ার প্রতি অত্যন্ত নমনীয় ভাষায় কথা বলেন।
পর্যবেক্ষকদের মতে, পুতিনের হাতে হয়ত এমন একটি ট্রাম্পকার্ড রয়েছে যা দিয়ে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পুতুলের মতো নাচিয়ে যাচ্ছেন।