অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি, ১৫ মার্চ, বিডিটুডে ২৪ ডটকম : শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে বরিশালের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত আগৈলঝাড়া, গৌরনদী ও উজিরপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের তিনটি মন্দির, দুটি বসতঘর, একটি রান্নাঘর ও একটি খড়ের গাদায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় শান্তিপ্রিয় গ্রামবাসীর মধ্যে চরম আতংক দেখা দিয়েছে। ১৯৭১ সালের পর ২০০১ সালে এসব এলাকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্মম নির্যাতনের তের চিহ্ন ঘুচতে না ঘুচতেই আবার ২০১৩ সালে হঠাৎ করে জামাতী রাজাকারদের তান্ডব শুরু হওয়ায় গ্রামের নিরীহ মানুষেরা এখন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। তাই গত কয়েকদিন ধরে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ওইসব গ্রামের মানুষ জামাতী তান্ডব ও নাশকতা ঠেকাতে এখন গ্রামে গ্রামে পাহারা বসিয়েছেন।
সূত্রমতে, সর্বশেষ গত ১২ মার্চ আগৈলঝাড়ার বাকাল ইউনিয়নের বাকপাড়া গ্রামের সরকার বাড়ির সার্বজনীন কালীমন্দিরের মূর্তি ভাংচুর করা হয়। এরপূর্বে গৌরনদীর পিঙ্গলাকাঠী সার্বজনীন দুর্গামন্দির, বাসুদেবপাড়ার খোকন ঘরামীর বসতঘর, চাঁদশী গ্রামে অপর এক সংখ্যালঘুর একটি রান্নাঘর, একটি খড়ের গাদায় ও উজিরপুরের গুঠিয়া গ্রামের সার্বজনীন দুর্গামন্দিরে অগ্নিসংযোগ করে দুস্কৃতকারীরা। ফলে গ্রামের হিন্দু-মুসলমান একতাবদ্ধ হয়ে সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে গ্রাম ঘুরে পালাক্রমে রাত জেগে লাঠি ও বাঁশি হাতে গ্রাম সুরায় পাহারা দিচ্ছেন। হঠাৎ করে ওইসব গ্রামে রাতে কেউ গেলে ভয়ে আঁতকে ওঠার মত অবস্থা। গত বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত চাঁদশী গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, ওই গ্রামের উত্তর চাঁদশী, কুমারডোবা ও দণি চাঁদশী গ্রামে পাহারা দিচ্ছেন গ্রামের তরুণ যুবক থেকে শুরু করে এলাকার বয়োবৃদ্ধরাও। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের চাঁদশী ইউনিয়ন শাখার সভাপতি জীবন কৃষ্ণ কর জানান, ইতোমধ্যে তাদের গ্রামের মানিক করের রান্নাঘর ও পার্শ¦বর্তী কুমারডোবা গ্রামের গৌতম করের খড়ের গাঁদায় রাতের আঁধারে অজ্ঞাতনামা দুস্কৃতিকারীরা অগ্নিসংযোগ করেছে। তাই তারা আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে হিন্দু-মুসলমান একত্রিতভাবে গ্রাম সুরায় পাহারা বসিয়েছেন। প্রতিদিন রাতে আটজন করে একেকটি দলে মোট চারটি দলে বিভক্ত হয়ে পাহারা দিচ্ছেন। চাঁদশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণকান্ত দে বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে জামায়াত-বিএনপির চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা চাঁদশী ইউনিয়নে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। যার তের চিহ্ন এখনও ঘুচিয়ে উঠতে পারেনি এসব এলাকার নির্যাতিতরা। এবারও একইভাবে তান্ডবলীলা শুরু করার পর স্থানীয় থানা পুলিশের সাথে পরামর্শ করে গ্রাম সুরায় রাত জেগে পাহারা বসানো হয়েছে। একইভাবে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত গৌরনদীর পিঙ্গলাকাঠী, বিল্বগ্রাম, আগৈলঝাড়া ও উজিরপুরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে পাহারা দিচ্ছেন ওইসব গ্রামের নিরিহ গ্রামবাসীরা।
বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার একেএম এহসানউল্লাহ বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ গ্রাম রায় পাহারা দিয়ে পুলিশকে সহযোগিতা করার ফলে দ্রুত যেমনি আতঙ্ক কেটে যাচ্ছে, তেমনি করে গ্রামের কয়েকটি ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে ইতোমধ্যে অসংখ্য দুস্কৃতিকারীকে সনাক্ত করে গ্রেফতার করে জেল হাজতেও প্রেরণ করা হয়েছে।